নয়াদিল্লি, 3 জানুয়ারি: তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের আবেদনের প্রেক্ষিতে লোকসভার সচিবালয়কে নোটিশ পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট । অসদাচরণ এবং লগ-ইন পাসওয়ার্ড শেয়ার করার অভিযোগে এথিক্স কমিটির সুপারিশে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয় মহুয়া মৈত্রকে । লোকসভার সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন মহুয়া । আর সেই মামলার প্রেক্ষিতেই লোকসভা সচিবালয়ের মহাসচিবকে নোটিশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, প্রথম উত্তরদাতা (মহাসচিব, লোকসভা সচিবালয়)-কে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দাখিল করতে হবে আদালতে । পাশাপাশি আগামী 11 মার্চ মামলার পরবর্তি শুনানির জন্য নির্ধারিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মহুয়া মৈত্রের আইনজীবী অভিষেকমনু সিংভি, তাঁর মক্কেলের আবেদনের অন্তর্বর্তীকালীন শুনানির অনুমতি দেওয়ার জন্য বেঞ্চকে অনুরোধ করেছিলেন । তিনি সওয়ালে বলেন, "আমাকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে ।" যদিও বিচারপতি খান্না বলেন, "না, না । যখন তালিকাভুক্ত হবে মামলাটি তখন তা আমরা তুলে নেব।"
ডিভিশন বেঞ্চ তার নির্দেশে উল্লেখ করেছে, বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপিত হয়েছে । তবে মামলার এই পর্যায়ে কোনও বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইছে না বেঞ্চ। বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, “এই আদালতের এখতিয়ার এবং বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতাও একটি সমস্যা।” শুনানির সময়, তুষার মেহতা বেঞ্চকে এই বিষয়ে নোটিশ জারি না করার আবেদন করেন। বিচারপতি খান্না অবশ্য স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, আদালত শুধুমাত্র প্রথম উত্তরদাতাকেই নোটিশ জারি করছে। অন্যদিকে, অভিষেকমনু সিংভি যুক্তি দিয়ে জানান, অন্য পক্ষ ঘুষদাতাকে তলব করা হয়নি । এথিক্স কমিটির অনুসন্ধানগুলি পরস্পরবিরোধী বলেও জানান সিংভি। তিনি দাবি করেন, অভিযোগকারী একাধিক সত্যটি চাপা দিয়েছিলেন ।
সিংভি আদালতে সওয়াল করেন, "একজন সাংসদ কি তাঁর কাজ অন্য কাউকে দিতে পারেন না ? এক মিনিটের জন্য হিরানন্দানিকে তাঁর (মহুয়া মৈত্র) সচিব হিসাবে কল্পনা করুন।" যার পালটা বিচারপতি খান্না প্রশ্ন করেন, "তাহলে আপনি কি মেনে নিচ্ছেন যে, আপনার মক্কেল ওটিপি হিরানন্দানির সঙ্গে শেয়ার করেছেন ?" সিংভি বলেন, "প্রত্যেক সংসদ সদস্য যেমন তাদের সচিব বা নিজেদের লোকদের সঙ্গে কাজ ভাগ করেন, এটাও তেমনই ।"
ন্যায়বিচারের দিক সম্পর্কে, সিংভি জানান, এক্ষেত্রে দুটি দিক রয়েছে, প্রথমত, এথিক্স কমিটি কোনও ক্রস-পরীক্ষা করেনি । দ্বিতীয়, কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল লোকসভায় । তবে সদস্যদের 439 পৃষ্ঠার দীর্ঘ রিপোর্টটি পড়ার কোনও সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেও সওয়াল করেন তিনি । বিচারপতি খান্না বলেন, "আদালত সব বিষয় খতিয়ে দেখবে।" অন্যদিকে, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জোর দিয়ে সওয়াল করে জানান, আদালতের এই বিষয়ে নোটিশ জারি করা উচিত নয়, কারণ ইতিমধ্যেই লোকসভার তরফে প্রতিনিধিত্বকারী আদালতের সামনে রয়েছেন। বিচারপতি খান্না বলেন, “আমরা নোটিশ জারি করছি। তবে আমরা সব বিষয়গুলোই খোলা রাখছি ।”
প্রসঙ্গত, লোকসভার নীতিশাস্ত্র কমিটি ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির সঙ্গে তাঁর সংসদীয় পোর্টালের লগ-ইন পাসওয়ার্ড শেয়ার করে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করার পরে গত ডিসেম্বরে মহুয়া মৈত্রকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। লোকসভার সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মহুয়া ।
আরও পড়ুন