নয়াদিল্লি, 14 জানুয়ারি: বিদ্বেষমূলক বক্তব্যগুলিকে (Hate speeches) কার্যত হুমকি বলে অভিহিত করল সর্বোচ্চ আদালত (complete menace) ৷ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) নিজেদের পর্যবেক্ষণ বলেছে, টেলিভিশন সংবাদে প্রচারিত বিষয়বস্তুর উপর নিয়ন্ত্রণের অভাব রয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ৷ সুপ্রিম কোর্ট 'মুক্ত এবং ভারসাম্যপূর্ণ প্রেস' চায় । শীর্ষ আদালত বলেছে, আজকাল সবকিছুই টিআরপি (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট) উপর নির্ভর করে চালিত হয় ৷ চ্যানেলগুলি সব সময় একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে এবং সমাজে একটি বিভাজন তৈরি করছে । সুপ্রিম কোর্ট বিস্মিত হয় যে একজন টিভি নিউজ অ্যাঙ্কর বিদ্বেষমূলক বা ঘৃণাত্মক বক্তব্য প্রচারের অংশ হয়ে থাকলেও তাঁকে কেন বহিষ্কার করা যাবে না ৷
শীর্ষ আদালত বলেছে, প্রিন্ট মিডিয়ার মতো নিউজ চ্যানেলগুলির জন্য কোনও প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া নেই । আদালতের পর্যবেক্ষণ , 'আমরা বাক স্বাধীনতা চাই, তবে কী মূল্যে'। বিচারপতি কেএম জোসেফ (Justices KM Joseph) এবং বিভি নাগারথনার (BV Nagarathna) বেঞ্চ দেশ জুড়ে ঘৃণা ছড়ায় এমন বক্তব্যের ঘটনাগুলি রোধ করা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনের অনেকগুলি মামলার শুনানি করছিলেন ৷ সেসময় তাঁরা বলেন, "বিদ্বেষমূলক বক্তব্য একটি সম্পূর্ণ হুমকি হয়ে উঠেছে ৷ এটি বন্ধ করতে হবে ।"
মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই বেঞ্চ এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ব্যক্তির প্রস্রাব করার অভিযোগের সাম্প্রতিক ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে কিছু কথা বলেছেন ৷ তাঁরা বলেন, "এই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হয় ৷ সংবাদমাধ্যমে তা প্রচারিত হয় ৷ মিডিয়ার লোকদের বোঝা উচিত তিনি এখনও বিচারাধীন এবং তাঁকে অপমান করা উচিত নয় । প্রত্যেকেরই মর্যাদা রয়েছে ।" বিচারপতি জোসেফ বলেন, "টিভি চ্যানেলগুলি একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে, কারণ সংবাদ কভারেজ টিআরপি উপর নির্ভর করে ।"
তিনি আরও বলেন, "টিভি চ্যানেলগুলি সবকিছুকে চাঞ্চল্যকর করে তোলে এবং ভিজ্যুয়াল পরিবেশনের মাধ্যমে সমাজে বিভাজন তৈরি করে । সংবাদপত্রে তা হয় না ৷ ভিজ্যুয়াল আমাদের অনেক বেশি প্রভাবিত করতে পারে এবং দুর্ভাগ্যবশত দর্শকরা এই ধরনের বিষয়বস্তু দেখার জন্য যথেষ্ট পরিণত নয় ৷ অনেক সময় লাইভ বিতর্কের সময় অ্যাঙ্কররা সমস্যার অংশ হয়ে ওঠে ৷ কারণ তারা হয় প্যানেলে বসে থাকা ব্যক্তির কণ্ঠস্বর মিউট করে দেয় বা তাদের বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে দেয় না ।"
বিচারপতি নাগারথনা বলেন, "যদি টিভি চ্যানেলগুলিকে ঘৃণাত্মক বক্তব্য প্রচারে লিপ্ত হয়ে প্রোগ্রাম কোড লঙ্ঘন করতে দেখা যায়, তবে তাদের সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে । আমরা ভারতে স্বাধীন ও ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদমাধ্যম চাই ।" নিউজ ব্রডকাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিত্বকারী কাউন্সিল দাবি করেছে, "গত এক বছরে হাজার হাজার অভিযোগ এসেছে এবং চ্যানেলগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ।"
অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল গরিমা প্রসাদ, যিনি উত্তর প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, বলেছেন, "160টি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা-সহ এই ধরনের 500টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ যেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে । গত বছরের 21 অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং দিল্লিকে ঘৃণাত্মক বক্তব্য পেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছিল ৷ "
আরও পড়ুন: জোশীমঠ নিয়ে জরুরি শুনানি! রাজি নন দেশের প্রধান বিচারপতি
ভারতের সংবিধান একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের কথা কল্পনা করে ৷ তাই শীর্ষ আদালত অভিযোগ দায়ের করার অপেক্ষা না করে অবিলম্বে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নথিভুক্ত করার জন্য তিনটি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল । সর্বোচ্চ আদালত সতর্ক করেছে যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই 'খুব গুরুতর সমস্যা' নিয়ে পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করলে তা আদালতের অবমাননা বলে ধরা হবে ।