নয়াদিল্লি, 17 অগস্ট: 370 অনুচ্ছেদ সরানোর ক্ষেত্রে কি সংবিধান মানা হয়নি, এই বিষয়টি নিয়েই শুনানি করছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের তরফে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ৷ এই মামলায় সওয়াল করা এক আইনজীবীর উদ্দেশ্যে এই কথাই এ দিন জানিয়েছে আদালত ৷ ওই আইনজীবীর কাছে আদালতের প্রশ্ন, তিনি কি চাইছেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারের মনোভাব পর্যালোচনা করা হবে মামলার শুনানিতে ?
সংবিধানের 370 অনুচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে বিশেষ মর্যাদা পেত জম্মু ও কাশ্মীর ৷ 2019 সালে সেই মর্যাদা চলে যায় 370 অনুচ্ছেদের অবলুপ্তি ঘটানোর পর ৷ তার বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয় একাধিক মামলা ৷ সেই মামলার শুনানি এখন চলছে ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে এবং বিচারপতি এস কে কৌল, সঞ্জীব খান্না, বি আর গাভাই এবং সূর্য কান্তের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে ৷ এ দিনের শুনানিতেই এই বিষয়টি উল্লেখ করেছে আদালত ৷
যে আইনজীবীকে এ দিন আদালতের তরফে প্রশ্ন করা হয়, তিনি হলেন দুষ্যন্ত দাভে ৷ তাঁর কাছে প্রধান বিচারপতি আরও জানতে চান, ‘‘আপনি বলছেন যে 370 অনুচ্ছেদ অব্যাহত রাখা জাতীয় স্বার্থে ঠিক নয় বলে মনে করে সরকারের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এর ভিত্তিতে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত ?
আরও পড়ুন: ' উপত্যকার ইতিহাস সম্পর্কে যাঁরা অজ্ঞ তাঁরাই ধারা 370 বাতিলের বিরুদ্ধে,' বললেন আজাদ
প্রধান বিচারপতি দাভেকে বলেন, "বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনা অবশ্যই একটি সাংবিধানিক লঙ্ঘনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে ৷ সাংবিধানিক লঙ্ঘন অবশ্যই বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনার জন্য উন্মুক্ত ৷ সাংবিধানিক লঙ্ঘন হলে সন্দেহ নেই যে এই আদালতের নিঃসন্দেহে তা পর্যালোচনা করার এক্তিয়ার রয়েছে ।’’
দাভে আদালতে জানান, এই নিয়ে কেন্দ্রের তরফে আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় অনেক দ্বন্দ্ব রয়েছে ৷ তিনি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের সংবিধানের লঙ্ঘনের অভিযোগই করেছেন আদালতে ৷ তিনি আরও জানান, অনুচ্ছেদ 370 খুব ভালোভাবে কাজ করেছে ৷ 1947 সাল থেকে এর জেরে জম্মু ও কাশ্মীর এবং কেন্দ্রের মধ্যে সম্পর্কে কোনও সমস্যা হয়নি ৷ এই সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ ফের বলবৎ করতে হবে ৷
প্রধান বিচারপতি দাভেকে জিজ্ঞাসা করেন, যদি 370 অনুচ্ছেদ নিজেই কাজ করে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান পরিষদ তার কাজ শেষ করার পরে এর উদ্দেশ্য সাধন করে থাকে ৷ তাহলে 1957 সালের পরে সাংবিধানিক আদেশ জারি করার সুযোগ কোথায় ছিল ?
আরও পড়ুন: 'গায়ের জোরে কাশ্মীরের আবেগকে হত্যা করা হয়', 370 বিলোপের স্মৃতিতে ডুব মুফতির
দাভেকে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “আপনার পুরো যুক্তি হল যে সংবিধান পরিষদ তার কাজ শেষ করার পরে 370 অনুচ্ছেদ নিজেই কাজ করেছে । কিন্তু তা অন্তত সাংবিধানিক অনুশীলনের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হবে । কারণ, 1957 সালের পরেও, জম্মু ও কাশ্মীর সম্পর্কিত সংবিধানের বিধানকে ক্রমান্বয়ে সংশোধন করার আদেশ জারি করা হয়েছিল ৷ যার অর্থ হল 370 অনুচ্ছেদের তারপরেও কাজ করা অব্যাহত ছিল । অতএব, এটা অনুমান করা সঠিক হবে না যে 370 অনুচ্ছেদ কার্যকর থাকার মেয়াদ শেষ হয়েছিল এবং যা একটি অস্থায়ী বিধান ভারতীয় সাংবিধানিক কাঠামোতে স্থায়িত্বের অবস্থাকে অনুমান করে ৷”
বেঞ্চ বলেছে যে 1954 সাল থেকে পর্যায়ক্রমে কোনও সাংবিধানিক আদেশ জারি হওয়ার প্রশ্নই আসে না । প্রধান বিচারপতি দাভেকে বলেন, ‘‘আপনার যুক্তি যদি সঠিক হয়, তাহলে 1957 সালে সংবিধান পরিষদ একবার সিদ্ধান্ত নিলে জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত সংবিধানের কোনও বিধান পরিবর্তন করার ক্ষমতা নেই ?’’
আরও পড়ুন: 370 ধারা কি সংবিধানে স্থায়ী ছিল, কপিল সিবালের কাছে জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট