আহমেদাবাদ, 3 অক্টোবর : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধি ৷ তাঁকে সবরমতীর সন্ন্যাসী বলা হয় ৷ কারণ, গান্ধিজি ও সবরমতী নদীর মধ্যে এক অনন্য সম্পর্ক রয়েছে ৷ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফেরার পর গান্ধিজি স্থির করেন, আহমেদাবাদে একটি আশ্রম তৈরি করবেন ৷ 1917 সালে সবরমতী আশ্রম তৈরি করেন তিনি ৷ তার আগের দু’বছর কোচরাব আশ্রমই ছিল তাঁর ঠাঁই ৷ আসলে গান্ধিজি এমন এক আশ্রমের পরিকল্পনা করেছিলেন, যা গোটা সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এগিয়ে চলবে ৷ তাঁর সেই মনোবাঞ্ছা সবরমতীর তীরে এসে পূর্ণ হয়েছিল ৷ তাই সবরমতী আশ্রম বাপুর খুব প্রিয় ছিল ৷
আরও পড়ুন : Independence Special : বয়স ছিল মাত্র 13, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন কাটিহারের ধ্রুব কুণ্ডু
গান্ধিজির জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সাদামাটা ৷ তাঁর সেই আদর্শের প্রভাব সবরমতী আশ্রমের উপরেও পড়েছিল ৷ একইসঙ্গে, আশ্রমে সঙ্গবদ্ধভাবে কাজ করার উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত ৷ গান্ধি আশ্রমের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হল হৃদয়কুঞ্জ ৷ এই হৃদয়কুঞ্জই আসলে গান্ধির বাসস্থান ছিল ৷ এমন নামকরণের পিছনেও বিশেষ কারণ রয়েছে ৷ এই হৃদয়কুঞ্জের কাছেই রয়েছে একটি প্রার্থনাস্থল ৷ গান্ধিজি নিজে প্রার্থনা করার বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন ৷ আশ্রমের দিন শুরু হত প্রার্থনার মধ্যে দিয়েই ৷
সেই সময় আন্তর্জাতিক মহলে গান্ধিজি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন ৷ শুধুমাত্র তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই দেশ, বিদেশ থেকে বহু মানুষ সবরমতী আশ্রমে আসতেন ৷ কিন্তু, সকলের জন্যই আশ্রমে এক নিয়ম বহাল থেকেছে ৷ গান্ধিজি এবং অন্য সত্যাগ্রহীদের কাছে এই আশ্রম শুধুমাত্র উদ্বাস্তুদের ঠিকানা ছিল না ৷ স্বাধীনতা আন্দোলনেও এই আশ্রমের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ বহু আন্দোলন ও জাতীয়স্তরের পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল এখান থেকেই ৷
আরও পড়ুন : Independence Special : যোদ্ধা, সুরের সাধক রাম সিং ঠাকুরিকে বেহালা উপহার দিয়েছিলেন নেতাজি
এই মুহূর্তে সবরমতী আশ্রমে 165টি বহুতল রয়েছে ৷ গান্ধিজির মৃত্যুর পর এখানে ‘আমার জীবনই আমার বাণী’ নামে একটি গ্য়ালারি তৈরি করা হয় ৷ এই গ্যালারিতে বাপুর গোটা জীবন, তাঁর ছোটবেলা থেকে অন্তিম দিনের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে ৷ দেশের মানুষকে আত্মনির্ভর করার বার্তা দিতে এবং দেশীয় সংস্কৃতির ভিত পোক্ত করতেই এই আশ্রম তৈরি করা হয়েছিল ৷ অন্যদিকে, গান্ধিজির মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিতেই এখানে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হয় ৷ গান্ধিজির চর্কা, চশমা, জল খাওয়ার তামার পাত্র এবং লাঠি-সহ নানা জিনিস সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে ৷