নয়াদিল্লি, 13 ডিসেম্বর: সংসদে শীতকালীন অধিবেশন চলছে ৷ এমনই এক শীতের সকালে আচমকা হামলা হয়েছিল পুরনো সংসদ ভবনে ৷ সেই ঘটনার আজ 22 বছর ৷ 2001 সালের 13 ডিসেম্বর পুরনো সংসদ ভবনে হামলা চালায় জঙ্গিরা ৷ গণতন্ত্রের মন্দিরের সেই হামলা ভারতীয়দের মনে সন্ত্রাসবাদ শব্দটিকে পাকাপোক্তভাবে গেঁথে দিয়েছিল ৷ তার আগে নয়ের দশকে মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ দেখেছিল দেশ ৷ কিন্তু দেশ পরিচালনার আঁতুড়ঘর যে এভাবে আক্রান্ত হতে পারে, তা জানা ছিল না আসমুদ্রহিমাচলের ৷
কী হয়েছিল সেদিন ? দিনটা ছিল 2001 সালের 13 ডিসেম্বর। সময় সকাল 11.30 মিনিট ৷ নয়াদিল্লির সংসদ চত্বরে একটি সাদা গাড়িতে করে ঢোকে জঙ্গিরা ৷ তারা ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে সংসদ চত্বরে প্রবেশ করেছিল ৷ সংসদের অধিবেশন মুলতুবি হয়েছে সবে 40 মিনিট হয়েছে ৷ সেসময় দেশের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং বিরোধী দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধি ৷ তাঁরা দু'জনেই সংসদ ছেড়ে চলে গিয়েছেন ৷ খুব বেশি হলে 100 জন সাংসদ রয়েছেন সংসদের মধ্যে ৷ আর ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানি ৷
তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি কৃষান কান্তের গাড়িতে ধাক্কা মারে জঙ্গিদের গাড়ি ৷ এটা অবশ্য তাদের পরিকল্পনার বাইরেই ছিল ৷ এরপর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে জঙ্গি ও নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে যুদ্ধ চলে ৷ 5 জঙ্গি তাদের এক-47 বন্দুক থেকে প্রকাশ্যে গুলি চালাতে শুরু করে ৷ সংসদ লক্ষ্য করে বোমা ছুড়তে থাকে ৷ অবশ্য নিরাপত্তরক্ষীদের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে প্রাণ হারায় পাঁচ জঙ্গিই ৷ আর সংসদের এক নিরাপত্তারক্ষী এবং বাগানের মালি-সহ দিল্লি পুলিশের 5 কর্মীর মৃত্যু হয় ৷
হুলস্থুল কাণ্ডের মধ্যে দিয়েই সব সাংসদ, মন্ত্রীদের নিরাপদে অক্ষত অবস্থায় সংসদ থেকে বের করে আনা হয় ৷ ঘটনাটি সরাসরি দূরদর্শনে সম্প্রচারও করা হয়েছিল ৷ সংসদের চেম্বারের মূল প্রবেশপথে এক জঙ্গি আত্মঘাতী হয় ৷ এই ঘটনায় সংসদে নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতি ধরা পড়ে ৷ আফজাল গুরু, এসএআর গিলানি, শৌকত হুসেন এবং নবজ্যোত সান্ধু এই ঘটনায় জড়িত বলে জানা যায় ৷
কোন পথে এগোল তদন্ত: সংসদে হামলার 72 ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ চক্রান্তকারীদের ছক জানতে পারে ৷ জানা যায়, পাঁচজন পাকিস্তানি নাগরিক মিলে একটি আত্মঘাতী দল তৈরি করেছিল ৷ তারা জঙ্গি সংগঠন এলইটি বা লস্কর-ই-তইবা এবং জেইএম বা জৈশ-ই-মহম্মদের সদস্য ৷ গ্রেফতার করা হয় জঙ্গিগোষ্ঠী জেকেএলএফের প্রাক্তন সদস্য আফজাল গুরু, তার ভাই শৌকত হুসেন গুরু, শৌকতের স্ত্রী আফসানা গুরু এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষার অধ্যাপক এসএআর গিলানিকে ৷ পরে আফসানা গুরুকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷ এসএআর গিলানির মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা হলেও 2005 সালে শীর্ষ আদালত তার সেই সাজা মকুব করে ৷ আর 2013 সালে আফজাল গুরুর ফাঁসি হয় ৷
এই ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে ৷ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জোর দেয় ভারত সরকার ৷ দু'দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে 5 লক্ষেরও বেশি ভারতীয় সেনা মোতায়েন করা হয় ৷ ভারতে পাকিস্তানের অসামিরক বিমানের ওঠানামায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত ৷ এই সময় ভারত-পাকিস্তান তিক্ত সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে মধ্যস্থতা করে আমেরিকা ৷
আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ দুই দেশের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন ৷ আর তা ফলপ্রসূও হয় ৷ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ সংসদে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করেন ৷ এর সঙ্গে 9 সেপ্টেম্বর আমেরিকায় হওয়া জঙ্গি হামলার তুলনা টানেন ৷ এই সময় আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলির চাপের মুখে পারভেজ মুশারফ পাঁচটি জঙ্গি সংগঠকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ৷ এর মধ্যে অন্যতম জৈশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তইবা ৷ পাশাপাশি, মাদ্রাসাগুলিকে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কথাও স্বীকার করেন ৷ 2002 সালের 12 জানুয়ারি পারভেজ মুশারফ দেশের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন, "পাকিস্তানের মাটিকে আশ্রয় করে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করা যাবে না ৷"
সন্তোষ কুমার আর সেই বীরগাথা: সন্তোষ কুমার ছিলেন উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরের বাসিন্দা ৷ মাত্র 21 বছর বয়স ৷ বাবার পথ অনুসরণ করে তিনিও সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা সিআরপিএফে যোগ দেন ৷ মাত্র 6 মাস কেটেছে ৷ সেদিন সংসদে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ইন্সপেক্টর সন্তোষ ৷ সেদিন 5 জন জঙ্গির মধ্যে 3 জনকে গুলি করেছিলেন তিনি ৷
আরও পড়ুন: