ETV Bharat / bharat

Independence Special : বিনা রক্তে ‘যুদ্ধজয়ে’র নায়ক, বিস্মৃত এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রশংসা শোনা যায় মহাত্মার মুখেও

লেখক বদ্রীকে শিল্পী বলেও অত্যূক্তি হয় না ৷ ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাঁর লেখার ধরন ছিল ব্যঙ্গাধর্মী ৷ সেই সময় উত্তরাখণ্ডে নিযুক্ত ইংরেজ ডেপুটি কমিশনারের ছোড়া গুলিতে এক কুলি আহত হন ৷ জানা যায়, মদ্যপানের আসরে সোডা নিয়ে আসতে দেরি করায় জনৈক কুলিকে গুলি করেন ওই সাহেব ৷ তা নিয়ে একটি সাড়া জাগানো প্রতিবেদন লেখেন বদ্রী ৷

author img

By

Published : Oct 30, 2021, 6:05 AM IST

Updated : Oct 30, 2021, 9:24 AM IST

Remembering forgotten freedom fighter Badri Datt Pandey
বদ্রী দত্ত পান্ডে ।

অলমোরা, 30 অক্টোবর : শৈশবেই ধনে-প্রাণে-স্বজনে মারা পড়েছিলেন তিনি । তাই সংগ্রাম শুরু হয়ে যায় ছোট্ট বয়সেই । বেশিদূর এগোয়নি লেখাপড়াও । কিন্তু কলেজ, ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি না থাকলেও, কলমের জোরেই মানুষের আশা-ভরসা হয়ে উঠেছিলেন বদ্রী দত্ত পান্ডে । তাতেই মহাত্মা গান্ধির স্নেহাজন এবং মুখপত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি ৷

উত্তরাখণ্ডের ভূমিপুত্র বদ্রীর জন্ম হরিদ্বারের কাঙ্খালে, 1882 সালের 15 ফেব্রুয়ারি ৷ আদপে তাঁর পরিবার অলমোরার পতিয়ার বাসিন্দা ৷ তবে শৈশবেই মা-বাবাকে হারান বদ্রী ৷ তার পর অলমোরা চলে আসেন তিনি ৷ সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টাতেই স্কুলে ভর্তি হন ৷ এলাহাবাদে উচ্চশিক্ষার জন্যও যান ৷

কিন্তু মা-বাবার অবর্তমানে একমাত্র সহায় ছিলেন যে আত্মীয়, তিনিও মারা যাওয়ায়, পড়াশোনা অসম্পূর্ণই থেকে যায় ৷ এর পর স্কুল পাশ করা বিদ্যে নিয়েই চাকরির খুঁজতে নেমে পড়েন বদ্রী ৷ তৎকালীন ইংরেজ সরকারের অধীনে একটি চাকরিও বাগিয়ে ফেলেন ৷ কিন্তু নিত্যদিন সেখানে ভারতীয়দের লাঞ্ছনা, বঞ্চনার শিকার হতে দেখে অস্থির হয়ে ওঠেন তিনি ৷ তার প্রতিবাদেই সাংবাদিকতার দিকে এগিয়ে যান ৷

শুরুতে ‘লিডার প্রেস’-এ কাজের সুযোগ পান বদ্রী ৷ পরবর্তী কালে দেহরাদূণ থেকে প্রকাশিত ‘কসমোলিটনে’ও সুযোগ মেলে ৷ 1913 সালে ‘অলমোরা সংবাদপত্রে’ সাব-এডিটর হিসেবে কাজের সুযোগ পাওয়ার পরই সঠিক অর্থে সাংবাদিকতার দিগন্ত খুলে যায় তাঁর সামনে ৷ শুধুমাত্র স্কুলপাশ করা বদ্রীর লেখায় ভর করেই ডানা মেলে ‘অলমোরা সংবাদপত্র’৷ বদ্রী কাজে যোগ দেওয়ার আগে সংবাদপত্রটির পাঠকসংখ্যা ছিল 60 ৷ বদ্রী নামাঙ্কিত প্রতিবেদনের জনপ্রিয়তায় ভর করে মাত্র কয়েক দিনেই তা বেড়ে 1500-য় পৌঁছে যায় ৷

আরও পড়ুন: Nawab Malik : যাঁর পার্টিতে মাদক উদ্ধার, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয় কেন ? প্রশ্ন নবাবের

লেখক বদ্রীকে শিল্পী বলেও অত্যুক্তি হয় না ৷ ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাঁর লেখার ধরন ছিল ব্যঙ্গাধর্মী ৷ সেই সময় উত্তরাখণ্ডে নিযুক্ত ইংরেজ ডেপুটি কমিশনারের ছোড়া গুলিতে এক কুলি আহত হন ৷ জানা যায়, মদ্যপানের আসরে সোডা নিয়ে আসতে দেরি করায় জনৈক কুলিকে গুলি করেন ওই সাহেব ৷ তা নিয়ে একটি সাড়া জাগানো প্রতিবেদন লেখেন বদ্রী ৷

বিনা রক্তে ‘যুদ্ধজয়ে’র নায়ক, বিস্মৃত এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রশংসা শোনা যায় মহাত্মার মুখেও

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত যুক্তি দেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে গুলি ছোড়েননি তিনি ৷ বরং পাখি শিকার করছিলেন ৷ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ওই ব্যক্তির গায়ে গুলি লাগে ৷ কিন্তু যে সময় এই ঘটনা ঘটে, তা শিকারের মরসুম ছিল না ৷ তাই অভিযুক্তকে আক্রমণ করে পাল্টা আরও একটি প্রতিবেদন লেখেন বদ্রী ৷ প্রশ্ন তোলেন, অসময়ে শিকারে বেরিয়ে আইনলঙ্ঘন করেছেন অভিযুক্ত ৷

সেই নিয়ে টানাপড়েনে সংবাদপত্রটি বন্ধ করে দেয় ইংরেজ সরকার ৷ তাতে দমে যাওয়ার বদলে, অন্য একটি সংবাদপত্রে লিখতে শুরু করেন বদ্রী ৷ ইংরেজদের সঙ্গ টানাপড়েন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম দেন, ‘এক ঢিলে তিন পাখি, কুলি, মুরগি এবং সংবাদপত্র’ ৷

এর পর, 1918 সালে বিজয়া দশমীর দিন নিজের ‘শক্তি’ নামের নতুন একটি সংবাদপত্র চালু করেন বদ্রী ৷ 1913 থেকে 1926 সাল পর্যন্ত তিনি নিজে সেখানে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ৷ ইংরেজ সরকারের সমালোচনায় একের পর এক বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকেন ৷ তাতে উত্তরাখণ্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদপত্র হয়ে ওঠে ‘শক্তি’৷

আরও পড়ুন: Mamata in Goa: দিল্লির অঙ্গুলিহেলনে নয়, গোয়া চালাবে সেখানকার মানুষ : মমতা

1921 সালে একটি প্রতিবেদনে কড়া ভাষায় ইংরেজ সরকারের নিপীড়ন এবং দুর্নীতিকে তুলে ধরেছিলেন বদ্রী ৷ তাঁর দাবি ছিল, প্রতি বছর রায়বাহাদুরের উৎপাদন বাড়তেই থাকে ৷ জলের অভাবে ধান,গম শুধু বাঁচে না কৃষকদের ৷ 1926 সালে সংবাদপত্রের কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন বদ্রী ৷ যদিও তার পরই ওই সংবাদপত্র ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি ৷ তবে আজ, 100 বছর পরেও উত্তরাখণ্ডে প্রকাশিত হয় ‘শক্তি’ ৷

তবে ইংরেজ শাসকদের কুলি-ভিক্ষুক রাখার প্রথা তুলে দেওয়াই বদ্রীর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হিসেবে চিহ্নিত ৷ সেই সময়, উত্তরাখণ্ডের দরিদ্র, দুঃস্থ মানুষকে বিনা পয়সার ঝি-চাকর বানিয়ে রাখত ইংরেজরা ৷ একটি আনাও খরচ না করে তাঁদের দিয়ে মালপত্র বওয়ানো থেকে বাড়ির সব কাজ করানো হত ৷ এর বিরোধিতায়ই কুমায়ুন আন্দোলন শুরু করেন বদ্রী ৷ 1918 সালে কুমায়ুন কাউন্সিল-এর প্রথম অধিবেশনে এই কুলি-ভিক্ষুক প্রথা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব পাস হয় ৷

1921 সালের 10 জানুয়ারি হরগোবিন্দ পন্থ, চিরঞ্জিবী লাল-সহ 50 আন্দোলনকারীকে নিয়ে বাগেশ্বর মেলায় কুলি-ভিক্ষুক প্রথা তুলে দেওয়ার সপক্ষে সমর্থন জোগাড় করতে নামেন বদ্রী ৷ মেলার মাঠে জড়ো হওয়া মানুষের তাবুঁর উপর ইংরেজবিরোধী স্লোগান লিখে দেন ৷ তৈরি করা হয় বিশেষ ব্যানারও ৷ তার জেরে মেলার মাঠ 50 হাজার মানুষের জমায়েত প্রাঙ্গণে পরিণত হয় ৷

বিক্ষোভ সামাল দিতে 50 জন পুলিশ কর্মীকে নিয়ে সেখানে হাজির হন ইংরেজ পুলিশের এক কর্তা ৷ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিপ্রায় ছিল তাঁর ৷ কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষকে দেখে পিছু হটেন তিনি ৷ এই ঘটনার জেরে ইংরেজ পুলিশ বদ্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় ৷ তাঁকে হুমকিও দেওয়া হয় ৷ কিন্তু মাথা নোয়াননি তিনি ৷ বরং ইংরেজদের খিদমত খাটা কুলি-ভিক্ষুকদের নাম নথিভুক্ত করার খাতাই সরযূ নদীতে ভাসিয়ে দেন বদ্রী এবং তাঁর অনুগামীরা ৷

আরও পড়ুন: Amit Shah : চব্বিশে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করতে হলে বাইশে যোগীকে জেতান, উত্তরপ্রদেশে বার্তা শাহের

এই সাহসিকতাই বদ্রীকে উত্তরাখণ্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে বৈধতা দেয় ৷ সোনার পদকে সম্মানিতও করা হয় তাঁকে ৷ কিন্তু 1962-র ইন্দো-চিন যুদ্ধের পর প্রতিরক্ষা খাতে তা দান করে দেন তিনি ৷ বদ্রীকে ‘কুমায়ুন কেশরী’ উপাধি দেন রাজ্যবাসী ৷ বিনা রক্তপাতে যে ভাবে কুলি-ভিক্ষুক রাখার প্রথায় ইতি টানেন বদ্রী, তা মহাত্মার প্রশংসা পায় ৷ ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ সংবাদপত্রে বদ্রীর আন্দোলনকে ‘রক্তপাতহীন বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করেন তিনি ৷

নায়ক জাতের মানুষের প্রতি বঞ্চনায় ইতি পড়ে এই বদ্রীরই হাত ধরে ৷ আগে নায়কদের জমির অধিকার ছিল না ৷ বাড়ির মহিলাদের পতিতাবৃত্তিতে ঠেলে দেওয়ার রেওয়াজও ছিল ৷ এর বিরুদ্ধে 1938 থেকে 1945 সাল পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যান বদ্রী ৷ 1921-1922, 1929-1931, 1932-এ 8 মাস এবং 1942 থেকে 1943 পর্যন্ত জেল খাটেন তিনি ৷ 1932 সালে জেলবন্দি থাকাকালীনই তাঁর দুই সন্তান, এক ছেলে এবং এক মেয়ের মৃত্যু হয় ৷

সেই শোকগ্রস্ত অবস্থাতেই জেলে বসে ‘দ্য হিস্ট্রি অব কুমায়ুন’ বইটি লেখেন বদ্রী, যা আজও উত্তরাখণ্ডের উপর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় বই ৷ 1929 সালে অলমোড়া যান মহাত্মা ৷ সেই সময় পরিশ্রান্ত মহাত্মা হাজার হাজার মানুষের উদ্দেশে বক্তৃতা করার মতো অবস্থায় ছিলেন না ৷ তাখন পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিযে আসেন বদ্রী ৷ মহাত্মাকে বলেন, যা বলার, ধীরে সুস্থে তাঁকে বলতে ৷ গমগমে স্বরে তিনিই তা পৌঁছে দেবেন মানুষের কানে ৷ এ ভাবেই মহাত্মার মুখপত্রে পরিণত হন বদ্রী ৷ অলমোড়ায় 1965 সালের 13 ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর ৷

অলমোরা, 30 অক্টোবর : শৈশবেই ধনে-প্রাণে-স্বজনে মারা পড়েছিলেন তিনি । তাই সংগ্রাম শুরু হয়ে যায় ছোট্ট বয়সেই । বেশিদূর এগোয়নি লেখাপড়াও । কিন্তু কলেজ, ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি না থাকলেও, কলমের জোরেই মানুষের আশা-ভরসা হয়ে উঠেছিলেন বদ্রী দত্ত পান্ডে । তাতেই মহাত্মা গান্ধির স্নেহাজন এবং মুখপত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি ৷

উত্তরাখণ্ডের ভূমিপুত্র বদ্রীর জন্ম হরিদ্বারের কাঙ্খালে, 1882 সালের 15 ফেব্রুয়ারি ৷ আদপে তাঁর পরিবার অলমোরার পতিয়ার বাসিন্দা ৷ তবে শৈশবেই মা-বাবাকে হারান বদ্রী ৷ তার পর অলমোরা চলে আসেন তিনি ৷ সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টাতেই স্কুলে ভর্তি হন ৷ এলাহাবাদে উচ্চশিক্ষার জন্যও যান ৷

কিন্তু মা-বাবার অবর্তমানে একমাত্র সহায় ছিলেন যে আত্মীয়, তিনিও মারা যাওয়ায়, পড়াশোনা অসম্পূর্ণই থেকে যায় ৷ এর পর স্কুল পাশ করা বিদ্যে নিয়েই চাকরির খুঁজতে নেমে পড়েন বদ্রী ৷ তৎকালীন ইংরেজ সরকারের অধীনে একটি চাকরিও বাগিয়ে ফেলেন ৷ কিন্তু নিত্যদিন সেখানে ভারতীয়দের লাঞ্ছনা, বঞ্চনার শিকার হতে দেখে অস্থির হয়ে ওঠেন তিনি ৷ তার প্রতিবাদেই সাংবাদিকতার দিকে এগিয়ে যান ৷

শুরুতে ‘লিডার প্রেস’-এ কাজের সুযোগ পান বদ্রী ৷ পরবর্তী কালে দেহরাদূণ থেকে প্রকাশিত ‘কসমোলিটনে’ও সুযোগ মেলে ৷ 1913 সালে ‘অলমোরা সংবাদপত্রে’ সাব-এডিটর হিসেবে কাজের সুযোগ পাওয়ার পরই সঠিক অর্থে সাংবাদিকতার দিগন্ত খুলে যায় তাঁর সামনে ৷ শুধুমাত্র স্কুলপাশ করা বদ্রীর লেখায় ভর করেই ডানা মেলে ‘অলমোরা সংবাদপত্র’৷ বদ্রী কাজে যোগ দেওয়ার আগে সংবাদপত্রটির পাঠকসংখ্যা ছিল 60 ৷ বদ্রী নামাঙ্কিত প্রতিবেদনের জনপ্রিয়তায় ভর করে মাত্র কয়েক দিনেই তা বেড়ে 1500-য় পৌঁছে যায় ৷

আরও পড়ুন: Nawab Malik : যাঁর পার্টিতে মাদক উদ্ধার, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয় কেন ? প্রশ্ন নবাবের

লেখক বদ্রীকে শিল্পী বলেও অত্যুক্তি হয় না ৷ ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাঁর লেখার ধরন ছিল ব্যঙ্গাধর্মী ৷ সেই সময় উত্তরাখণ্ডে নিযুক্ত ইংরেজ ডেপুটি কমিশনারের ছোড়া গুলিতে এক কুলি আহত হন ৷ জানা যায়, মদ্যপানের আসরে সোডা নিয়ে আসতে দেরি করায় জনৈক কুলিকে গুলি করেন ওই সাহেব ৷ তা নিয়ে একটি সাড়া জাগানো প্রতিবেদন লেখেন বদ্রী ৷

বিনা রক্তে ‘যুদ্ধজয়ে’র নায়ক, বিস্মৃত এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রশংসা শোনা যায় মহাত্মার মুখেও

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত যুক্তি দেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে গুলি ছোড়েননি তিনি ৷ বরং পাখি শিকার করছিলেন ৷ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ওই ব্যক্তির গায়ে গুলি লাগে ৷ কিন্তু যে সময় এই ঘটনা ঘটে, তা শিকারের মরসুম ছিল না ৷ তাই অভিযুক্তকে আক্রমণ করে পাল্টা আরও একটি প্রতিবেদন লেখেন বদ্রী ৷ প্রশ্ন তোলেন, অসময়ে শিকারে বেরিয়ে আইনলঙ্ঘন করেছেন অভিযুক্ত ৷

সেই নিয়ে টানাপড়েনে সংবাদপত্রটি বন্ধ করে দেয় ইংরেজ সরকার ৷ তাতে দমে যাওয়ার বদলে, অন্য একটি সংবাদপত্রে লিখতে শুরু করেন বদ্রী ৷ ইংরেজদের সঙ্গ টানাপড়েন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম দেন, ‘এক ঢিলে তিন পাখি, কুলি, মুরগি এবং সংবাদপত্র’ ৷

এর পর, 1918 সালে বিজয়া দশমীর দিন নিজের ‘শক্তি’ নামের নতুন একটি সংবাদপত্র চালু করেন বদ্রী ৷ 1913 থেকে 1926 সাল পর্যন্ত তিনি নিজে সেখানে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ৷ ইংরেজ সরকারের সমালোচনায় একের পর এক বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকেন ৷ তাতে উত্তরাখণ্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদপত্র হয়ে ওঠে ‘শক্তি’৷

আরও পড়ুন: Mamata in Goa: দিল্লির অঙ্গুলিহেলনে নয়, গোয়া চালাবে সেখানকার মানুষ : মমতা

1921 সালে একটি প্রতিবেদনে কড়া ভাষায় ইংরেজ সরকারের নিপীড়ন এবং দুর্নীতিকে তুলে ধরেছিলেন বদ্রী ৷ তাঁর দাবি ছিল, প্রতি বছর রায়বাহাদুরের উৎপাদন বাড়তেই থাকে ৷ জলের অভাবে ধান,গম শুধু বাঁচে না কৃষকদের ৷ 1926 সালে সংবাদপত্রের কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন বদ্রী ৷ যদিও তার পরই ওই সংবাদপত্র ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি ৷ তবে আজ, 100 বছর পরেও উত্তরাখণ্ডে প্রকাশিত হয় ‘শক্তি’ ৷

তবে ইংরেজ শাসকদের কুলি-ভিক্ষুক রাখার প্রথা তুলে দেওয়াই বদ্রীর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হিসেবে চিহ্নিত ৷ সেই সময়, উত্তরাখণ্ডের দরিদ্র, দুঃস্থ মানুষকে বিনা পয়সার ঝি-চাকর বানিয়ে রাখত ইংরেজরা ৷ একটি আনাও খরচ না করে তাঁদের দিয়ে মালপত্র বওয়ানো থেকে বাড়ির সব কাজ করানো হত ৷ এর বিরোধিতায়ই কুমায়ুন আন্দোলন শুরু করেন বদ্রী ৷ 1918 সালে কুমায়ুন কাউন্সিল-এর প্রথম অধিবেশনে এই কুলি-ভিক্ষুক প্রথা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব পাস হয় ৷

1921 সালের 10 জানুয়ারি হরগোবিন্দ পন্থ, চিরঞ্জিবী লাল-সহ 50 আন্দোলনকারীকে নিয়ে বাগেশ্বর মেলায় কুলি-ভিক্ষুক প্রথা তুলে দেওয়ার সপক্ষে সমর্থন জোগাড় করতে নামেন বদ্রী ৷ মেলার মাঠে জড়ো হওয়া মানুষের তাবুঁর উপর ইংরেজবিরোধী স্লোগান লিখে দেন ৷ তৈরি করা হয় বিশেষ ব্যানারও ৷ তার জেরে মেলার মাঠ 50 হাজার মানুষের জমায়েত প্রাঙ্গণে পরিণত হয় ৷

বিক্ষোভ সামাল দিতে 50 জন পুলিশ কর্মীকে নিয়ে সেখানে হাজির হন ইংরেজ পুলিশের এক কর্তা ৷ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিপ্রায় ছিল তাঁর ৷ কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষকে দেখে পিছু হটেন তিনি ৷ এই ঘটনার জেরে ইংরেজ পুলিশ বদ্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় ৷ তাঁকে হুমকিও দেওয়া হয় ৷ কিন্তু মাথা নোয়াননি তিনি ৷ বরং ইংরেজদের খিদমত খাটা কুলি-ভিক্ষুকদের নাম নথিভুক্ত করার খাতাই সরযূ নদীতে ভাসিয়ে দেন বদ্রী এবং তাঁর অনুগামীরা ৷

আরও পড়ুন: Amit Shah : চব্বিশে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করতে হলে বাইশে যোগীকে জেতান, উত্তরপ্রদেশে বার্তা শাহের

এই সাহসিকতাই বদ্রীকে উত্তরাখণ্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে বৈধতা দেয় ৷ সোনার পদকে সম্মানিতও করা হয় তাঁকে ৷ কিন্তু 1962-র ইন্দো-চিন যুদ্ধের পর প্রতিরক্ষা খাতে তা দান করে দেন তিনি ৷ বদ্রীকে ‘কুমায়ুন কেশরী’ উপাধি দেন রাজ্যবাসী ৷ বিনা রক্তপাতে যে ভাবে কুলি-ভিক্ষুক রাখার প্রথায় ইতি টানেন বদ্রী, তা মহাত্মার প্রশংসা পায় ৷ ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ সংবাদপত্রে বদ্রীর আন্দোলনকে ‘রক্তপাতহীন বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করেন তিনি ৷

নায়ক জাতের মানুষের প্রতি বঞ্চনায় ইতি পড়ে এই বদ্রীরই হাত ধরে ৷ আগে নায়কদের জমির অধিকার ছিল না ৷ বাড়ির মহিলাদের পতিতাবৃত্তিতে ঠেলে দেওয়ার রেওয়াজও ছিল ৷ এর বিরুদ্ধে 1938 থেকে 1945 সাল পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যান বদ্রী ৷ 1921-1922, 1929-1931, 1932-এ 8 মাস এবং 1942 থেকে 1943 পর্যন্ত জেল খাটেন তিনি ৷ 1932 সালে জেলবন্দি থাকাকালীনই তাঁর দুই সন্তান, এক ছেলে এবং এক মেয়ের মৃত্যু হয় ৷

সেই শোকগ্রস্ত অবস্থাতেই জেলে বসে ‘দ্য হিস্ট্রি অব কুমায়ুন’ বইটি লেখেন বদ্রী, যা আজও উত্তরাখণ্ডের উপর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় বই ৷ 1929 সালে অলমোড়া যান মহাত্মা ৷ সেই সময় পরিশ্রান্ত মহাত্মা হাজার হাজার মানুষের উদ্দেশে বক্তৃতা করার মতো অবস্থায় ছিলেন না ৷ তাখন পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিযে আসেন বদ্রী ৷ মহাত্মাকে বলেন, যা বলার, ধীরে সুস্থে তাঁকে বলতে ৷ গমগমে স্বরে তিনিই তা পৌঁছে দেবেন মানুষের কানে ৷ এ ভাবেই মহাত্মার মুখপত্রে পরিণত হন বদ্রী ৷ অলমোড়ায় 1965 সালের 13 ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর ৷

Last Updated : Oct 30, 2021, 9:24 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.