বারাণসী (উত্তরপ্রদেশ), 30 মার্চ: রাম নাম করলেই ঋণ দেয় ব্যাংক ৷ এমনই এক ব্যাংক রয়েছে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে ৷ রাম নামের বিনিময়ে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হয় আট মাস দশ দিনের মধ্যে ৷ ব্যাংকের নামও রামের নামে ৷ রাম রমাপতি ব্যাংক ৷ 1926 সালে রামনবমী উপলক্ষে বাবা সত্যরাম দাসের নির্দেশে দাস চান্নুলাল এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা করেন ।
এই ব্যাংকে আছেন একজন ম্যানেজার, একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং লক্ষ লক্ষ অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ৷ যাঁরা ব্যাংকের দেওয়া লাল কালি এবং কাগজে রামের নাম ঠিক 1.25 লক্ষ বার লেখেন । তারপর সেই কাগজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হয় । রামনবমী উপলক্ষে এই ব্যাংক তার 96তম বছর উদযাপন করছে ।
ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বলার সময়, ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সুমিত মেহরোত্রা বলেন, "আমার পিতামহের দাদা, দাস চান্নুলালজি প্রায় 96 বছর আগে এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এই ব্যাংকের নাম রাম রমাপতি ব্যাংক এবং লোকেরা বেশিরভাগই এটিকে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে ভাবে । যাঁরা এই ব্যাংক সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না, তাঁরা ভাবেন যে এই ব্যাংক তাঁদেরও ঋণ দেবে ৷ কিন্তু এটি একটি আধ্যাত্মিক ব্যাংক । টাকার কোনও মূল্য নেই । এই ব্যাংক কোনও আর্থিক লেনদেন গ্রহণ করে না । ভক্তরা তাঁদের ইচ্ছা পূরণের জন্য ঋণ পান । এখান থেকে ঋণ নিয়ে মানুষ তাঁদের লক্ষ্য অর্জন করে ।"
মেহরোত্রা আরও জানান, রাম রমাপতি ব্যাংক হল সমগ্র বিশ্বের মধ্যে এক ধরনের ব্যাংক । সাধারণ ব্যাংক যে পদগুলিতে চাকরি দেয়, এই ব্যংকও সাধারণ মানুষকে সেই পদ অফার করে । এই ব্যাংকে একজন ম্যানেজার, একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং অন্যান্য লোকজন রয়েছেন, যাঁরা দেখেন এই ব্যাংকের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা চলছে কি না । শুধু ভারত থেকে নয়, সারা বিশ্বের মানুষ এখান থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন । বর্তমানে এই ব্যাংকে জমা থাকা 19 বিলিয়ন 42 কোটি 34 লক্ষ 25 হাজার স্ক্রিপ্টে রামের নাম লেখা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: রামনবমীর পুজো চলাকালীন ধসে গেল ছাদ ! ইন্দোরের মন্দিরে মৃত কমপক্ষে 13
এখানে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে রামনবমী উপলক্ষে শত শত মানুষ এই ব্যাংকে যান । তবে এখানে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার পরে কিছু নিয়ম রয়েছে, যা মানুষকে অনুসরণ করতে হবে । ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীদের লাল কালি এবং একটি কালাম (কাঠের তৈরি কলম) প্রদান করে । ভোর 4টে থেকে সকাল 7টা পর্যন্ত ভক্তরা শুধু রামের নাম লিখতে পারবেন । নামটি অবশ্যই 1.25 লক্ষ বার লিখতে হবে এবং এই কাজটি অবশ্যই আট মাস দশ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে ।
এই পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন ভক্তদের আমিষ খাবার এবং পেঁয়াজ ও রসুনযুক্ত খাবার খেতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেহরোত্রা । তিনি আরও বলেন, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মা এবং বলিউড অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহার পরিবারের সদস্যরাও এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ।
রামের প্রবল ভক্ত এবং রাম রামপতি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টধারী মীরা দেবী বলেন, "ভগবান রাম আমাকে আমার জীবনে অনেক কিছু দিয়েছেন । আমার মা এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভগবান রামের নাম 1.25 লক্ষ বার লেখার পরে আমার জন্ম হয়েছিল । আজ পর্যন্ত আমি অন্তত চারবার এই প্রক্রিয়াটি করেছি এবং আমার সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হয়েছে । আমি আরও লিখতে চাই ।"