জয়পুর, 9 অক্টোবর: দেশের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ঘোষণা করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন ৷ আগামী 23 নভেম্বর রাজস্থানে বিধানসভা ভোট ৷ আর এই নির্বাচনী লড়াই লোকসভা আগে শুধু মাত্র কংগ্রেসের জন্য নয়, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতের জন্যও অ্যাসিড টেস্টের সমান ৷ এক্ষেত্রে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের দাবি, গেহলতকে কেবল মাত্র দলের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের মতো সমস্যাগুলিকে দূরে রাখলেই চলবে না, রাজ্যে সরকারবিরোধী আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার পাশাপাশি মহিলাদের নিরাপত্তার মতো গুরুতর বিষয়গুলিকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে ৷
সোমবারই রাজস্থান-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন ৷ আর এদিন থেকেই লাগু হয়েছে নির্বাচনীবিধিও ৷ এর মাঝেই দেখে নেওয়া যাক, 2018 সালে রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে গত পাঁচ বছরে রাজ্যে যে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তণ হয়েছে এবং যে চ্যালেঞ্জগুলি গেহলত সরকারের সামনে উদ্ভূত হয়েছে তার প্রতিফলন ৷
ভোটারদের দ্বিতীয় বিশেষ সংশোধন কর্মসূচির অধীনে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার পর দেখা গিয়েছে রাজ্যে 5 কোটি 20 লক্ষ ভোটার রয়েছে। রাজস্থানে মোট ভোটার বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ। ভোটার তালিকার খসড়া অনুসারে, রাজ্যে 2 কোটি 70 লক্ষ পুরুষ ভোটার এবং 2 কোটি 48 লক্ষ মহিলা ভোটার রয়েছে। এছাড়াও, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য 'হোম ভোটিং' পরিচালিত হবে বলে কমিশন জানিয়েছে ৷ 50 শতাংশের বেশি ভোট কেন্দ্রে ওয়েবকাস্টিং পরিচালিত হবে বলেও জানা গিয়েছে।
2018 সালের নির্বাচনের ফলাফল:
2018 সালের রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচন রাজ্যের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়কে চিহ্নিত করে। 11 ডিসেম্বর 2018 ঘোষিত ফল অনুযায়ী আলওয়ারের রামগড় আসন বাদে, রাজ্য বিধানসভার বাকি 199টি আসনে ভোট গ্রহণ পর্ব হয়েছিল। বিএসপি প্রার্থী লক্ষ্মণ সিংয়ের মৃত্যুর কারণে রামগড় আসনের নির্বাচন স্থগিত করতে হয়েছিল কমিশনকে। সেই নির্বাচনী যুদ্ধে, কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে ৷ 99টি আসনে জয় লাভ করে বিজেপি সরকারকে সফলভাবে উৎখাত করতেও সমর্থ হয় কংগ্রেস।
নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গিয়েছে, কংগ্রেস 99টি এবং বিজেপি 73টি আসন পেয়েছিল। মায়াবতীর বিএসপি ছয়টি আসনে জয়ী হয়েছিল ৷ অন্যান্যরা 20টি আসন জিতেছিল। সরকার গঠনের জন্য কংগ্রেসের ন্যূনতম 101 জন বিধায়কের প্রয়োজন ছিল। কংগ্রেস রাজস্থানে স্বতন্ত্র এবং অন্যান্য দলীয় বিধায়কদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে সেবার ৷
তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি, সোনিয়া গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধি-সহ দলের শীর্ষ নেতারা একাধিক বৈঠক-আলোচনার মাধ্যমে রাজ্যের নেতৃত্বের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় ৷ এবং শেষ পর্যন্ত রাজ্যের ক্ষমতার লাগাম অশোক গেহলতের হাতে তুলে দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে ৷ সেসময় দলীয় নেতাদের একটি প্রতীকী ছবি প্রকাশ করে পার্টি সদস্যদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির প্রতীককে সুস্পষ্ট করা হয়েছিল। যার ক্যাপশন দেওয়া হয়েছিল, "ইউনাইটেড কালারস অফ রাজস্থান" ৷ বিএসপি এবং স্বতন্ত্র বিধায়করাও অবশ্য সেসময় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে গেহলতের অবস্থানকে শুধু মেনে নেয়নি, তাঁর হাতও শক্ত করে কংগ্রেসের প্রতি তাদের সমর্থনকে পোক্ত করেছিল।
বিএসপি সংযুক্তি: একটি রাজনৈতিক মোড়
2019 সালের সেপ্টেম্বরে একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক বিকাশ ঘটে যখন বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) ছয়জন বিধায়ক ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেন। বিএসপি বিধায়করা এরপর বিধানসভার অধ্যক্ষ সিপি জোশীকে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে যোগ দেয় ৷ বিএসপি বিধায়কদের এই পরিবর্তন কংগ্রেস সরকারের অবস্থানকে যে আরও কিছুটা শক্তিশালী করেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ একই সঙ্গে, রাজস্থানে রাজনৈতিক জোটের প্রকৃতিকেও সুস্পষ্ট করেছে।
পাইলট-গেহলত ফাটল:
এই সংযুক্তির মাধ্যমে যে আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা সরকারের অনুকূলে এসেছিল তা ফের 2020 সালের জুলাই মাসে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল ৷ রাজ্য কংগ্রেস দলের মধ্যে ফের ফাটল স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন 19 জন কংগ্রেস বিধায়ক, তৎকালীন রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে গেহলত গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধ এবং মতবিরোধের কারণে দিল্লিতে চলে যান। শচীন পাইলট মোট 30 জন বিধায়কের সমর্থন দাবি করেছিলেন সেসময় ৷ যার জেরে চরম বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল গেহলত সরকার ৷
সেসময় শচীন পাইলটের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসে কংগ্রেস হাইকমান্ড ৷ এমনকী খোদ রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধির সঙ্গেও শচীনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছিল ৷ আর সেই আলোচনার পরই শচীন পাইলট এবং অশোক গেহলতের মধ্যে দ্বন্দ্বের আপাত ইতি ঘটে ৷ রাজস্থান কংগ্রেসের ফের একবার ঐক্যবদ্ধ হয় ৷ আর তারই প্রতিফলন ঘটে, 14 আগস্ট 2020 সালে অশোক গেহলতের নেতৃত্বাধীন সরকার সফলভাবে রাজস্থান বিধানসভায় ধ্বনি ভোটের মাধ্যমে আস্থা ভোট জিতে যায় ৷
নির্বাচনের আগে বিদ্রোহ:
আসন্ন নির্বাচনের এক বছর আগে, রাজস্থানের রাজনৈতিক দৃশ্যপট আরও একটি উত্থানের মুখোমুখি হয়েছিল। রাজ্যে নেতৃত্বের পরিবর্তন বিবেচনা করার যে সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস তার জেরে একাধিক কংগ্রেস বিধায়ক এবং তাদের গোষ্ঠীর নেতারা চরম বিক্ষোভ দেখায় ৷ শুধু বিক্ষোভই নয়, পদত্যাগেরও হুমকি দেওয়া হয়েছিল ৷ রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য অশোক গেহলতের বিরুদ্ধেও জোরকদমে বিরোধিতা হয় ৷
আরও পড়ুন: 5 রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা কমিশনের, দেখে নিন কবে কোথায় ভোট ?
25 সেপ্টেম্বর 2022-এ গেহলত গোষ্ঠীর 82 জন বিধায়ক হঠাৎ করে বিধানসভার স্পিকার সিপি জোশীর সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ায় ফের রাজ্য-রাজনীতিতে নাটকীয় মোড় নেয় ৷ তবে সেইসব পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি স্পিকার।