নিউদিল্লি, 13 মার্চ : আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থনে সরব হয়েছিলেন সোশাল মিডিয়ায় । তার জেরে দশ দিনের কারাবাস । ছাড়া পাওয়ার পর কেটে গেছে দুই সপ্তাহের বেশি সময় । এবার সেই ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরলেন পরিবেশকর্মী দিশা রবি । টিআরপি-র জন্য কীভাবে একাধিক নিউজ় চ্যানেল তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল, নিজের পেজে তা নিয়েও সরব হলেন বছর বাইশের দিশা ।
তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা । দিল্লি-হরিয়ানার সিঙ্ঘু সীমানায় কৃষকদের অবস্থান এখনও চলছে । এই কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন দিশা । একটি টুলকিট সম্পাদনা করে নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি । সেই 'অপরাধে' 13 ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । দিশার গ্রেপ্তারিতে সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে । এর আঁচ পড়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়াতেও ।
দশ দিন জেলে কাটাতে হয় দিশাকে । যদিও প্রমাণের অভাবে ছাড়া পান তিনি । ঘটনায় মুখ পোড়ে দিল্লি পুলিশের । গ্রেপ্তারির দশ দিন পর ছাড়া পেয়ে কার্যত চুপই ছিলেন দিশা । কিন্তু, এবার মুখ খুললেন তিনি । সরব হলেন সোশাল মিডিয়ায় । লিখলেন, নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করছিলাম যে এধরনের ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটেনি । 13 ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ আমার দরজায় কড়া নাড়ায়নি । ওরা আমার ফোন, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেনি । আমাকে গ্রেপ্তারও করেনি !
আরও পড়ুন: অবিলম্বে মুক্তির দাবি, দিশার গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দিল্লিতে
এমনকি প্রথম শুনানির দিন তাঁর হয়ে কোনও আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি । ফলে, তাঁর পুলিশ হেফাজত হয় । এর জেরে তাঁর আইনি এবং নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করেন দিশা । তিনি লিখেছেন, আদালতে দাঁড়িয়ে যখন আমার আইনজীবীকে খুঁজছিলাম তখন জানতে পারি আমাকে নিজেকেই মামলা লড়তে হবে । কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার পাঁচদিন পুলিশ হেফাজত হয়ে যায় । ওই দিনগুলোতে মনে হচ্ছিল, আমার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে । খবরে আমার ছবি ভেসে উঠছিল । আদালতে নয়, বরঞ্চ যাদের টিআরপি-র প্রয়োজন ছিল তারা আমায় দোষী সাব্যস্ত করে তুলেছিল । জেলে বসেও প্রতিটি মুহূর্তের খবর পাচ্ছিলাম ।
দিশা আরও লিখেছেন, আমার দাদু-ঠাকুমা কৃষক ছিলেন । তাঁরাই আমার মধ্যে পরিবেশ সচেতনতার বিষয়টি গড়ে দিয়েছিলেন । এটি শুধুমাত্র ধনী বা শ্বেতাঙ্গদের বিষয় নয় । এটা তাঁদেরও লড়াই যাঁদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, যাঁদের নদী বিষাক্ত করে দেওয়া হয়েছে, যাঁদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, প্রত্যেক মরসুমে যাঁদের বাড়ি ভেঙে পড়ে, ন্যূনতম অধিকারের জন্য যাঁরা প্রতি মুহূর্তে লড়াই করে চলেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের লড়াই ।