লখনউ, 1 নভেম্বর : উত্তরপ্রদেশে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চান তিনি । তার জন্য সেই পরিবারেই ভরসা প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরার । তবে মা সোনিয়া বা রাহুল নন, যোগী সরকারকে উৎখাত করতে খুড়তুতো ভাই বরুণ গান্ধিকেই বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন তিনি । কংগ্রেস সূত্রে খবর, প্রিয়াঙ্কা চান, বিজেপি ছেড়ে বরুণ কংগ্রেসের হাল ধরুন । পুরনো কাসুন্দি ঝেড়ে ফেলে, নেহরু-গান্ধি পরিবারের আদর্শ বুকে নিয়ে রাজনীতিতে নয়া যাত্রা শুরু করুন ।
নেহরু-গান্ধি পরিবারের উত্তরাধিকার হলেও, জ্ঞান হওয়া থেকে গেরুয়া শিবিরেই থেকেছেন বরুণ , যার নেপথ্যে ছিলেন তাঁর মা মানেকা গান্ধি । সঞ্জয় গান্ধির মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়ির সংস্রব ছেড়ে যখন বেরিয়ে আসেন তিনি, সেই সময় কংগ্রেসের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর । আশ্রয় পান পদ্ম শিবিরে । স্বাভাবিক ভাবেই সক্রিয় রাজনীতিতে বরুণের অভিষেকও বিজেপি-র হাত ধরেই । 2009 থেকে উত্তরপ্রদেশে দলের সাংসদও তিনি ।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে গেরুয়া শিবিরে সে ভাবে বরুণকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি । বরং কৃষি আন্দোলন-সহ একাধিক ইস্যুতে সাম্প্রতিক কালে বিজেপি এবং উত্তরপ্রদেশে দলের সরকারের বিরুদ্ধেই মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে । লখিমপুরে আন্দোলনকারী কৃষকদের উপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ সামনে আসার পর, অন্যান্য বিজেপি নেতা-নেত্রী যখন মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন, সেই সময় প্রকাশ্যে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন বরুণ । প্রশ্ন তুলেছিলেন মন্ত্রীর ছেলের ঔদ্ধত্য নিয়ে । তার জেরে দলের জাতীয় কর্মিসভা থেকে নাম পর্যন্ত বাদ যায় বরুণ এবং মানেকার ।
আরও পড়ুন: Supreme Court : শব্দবাজি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা, আজ শুনানি
তার পরও, বিজেপি-র বিরুদ্ধে সুর নরম করেননি বরুণ । বরং ফসলের ন্যূনতম দাম থেকে বিজেপি সরকার কৃষকদের বঞ্চিত করছে বলে সম্প্রতি ফের সরব হন তিনি । সম্প্রতি নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র পিলভিটে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেন, কৃষকদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ বন্ধ করার জন্য সরকারের সামনে হাতজোড় করার পাত্র তিনি নন । বরং সরাসরি আদালতে যাবেন । যোগী সরকার সম্প্রতি আখের সহায়ক মূল্য বাড়িয়ে 350 টাকা করলে, বিরোধীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তা 400 টাকা করার দাবি তোলেন বরুণ ।
এ ভাবে বার বার দলের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় বরুণকে নিয়ে স্পষ্টতই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-তে । তিন-তিন বার বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ায় তাঁকে ছেঁটে ফেলতে পারছেন না বিজেপি নেতৃত্ব । আবার তাঁকে কড়া কথাও শোনাতে পারছেন না কেউ । কারণ গান্ধি পরিবারের বিরুদ্ধে এত দিন মানেকা এবং বরুণকে দিয়ে তাঁরাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কাজ করে এসেছেন । অতএব ভোটের আগে বরুণকে নিয়ে কড়া অবস্থান নিতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব । ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগাতে প্রিয়াঙ্কা এই সুযোগই হাতছাড়া করতে চাইছেন না ।
এর আগে, বরুণ ভুল পথে চালিত হচ্ছেন, পরিবারের বড়দেরই তাঁকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন বলে উত্তরপ্রদেশেই গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা । সেখানে বরুণকে ‘ছোট ভাই’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি ৷ কংগ্রেস সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে নিজে ভাইয়ের ‘ঘর ওয়াপসি’ সারতে চাইছেন প্রিয়াঙ্কা ৷ কংগ্রেস সূত্রে খবর, বাড়ির বড়দের মধ্যে ঝামেলা থাকলেও, প্রিয়াঙ্কা, রাহুল এবং বরুণের মধ্যে বরাবরই ভাল সম্পর্ক ৷ নিজে না গেলেও, প্রিয়াঙ্কার বিয়েতে বরুণকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মানেকা ৷ সেখানে দিদির পাশেই সারা ক্ষণ ছিলেন বরুণ ৷ সক্রিয় ভাবে পৃথক দল করলেও, ভাই-বোনের মধ্যে এখনও আগের মতোই টান রয়েছে ৷ বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তাই বরুণকে পাশে চাইছেন প্রিয়াঙ্কা ৷
আরও পড়ুন: Covaxin : কোভ্য়াকসিনকে স্বীকৃতি দিল অস্ট্রেলিয়া
বরুণের কংগ্রেসে যাওয়ার নিয়ে জল্পনা যদিও এই প্রথম নয় ৷ বিজেপি সাংসদ নিজে যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ৷ তবে দলের অন্দরে তাঁর অবস্থান যে ক্রমশ নড়বড়ে হয়ে উঠছে, তা মানেন বরুণের অনুগামীদের অনেকেই ৷ বিজেপি এবং যোগীর বিরুদ্ধে লাগাতার মন্তব্য করে বরুণ আসলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজর কাড়তে চাইছেন বলে মনে করছেন অনেকে ৷ সেখান থেকে সাড়া না পেলে, আগামী দিনে বরুণ বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন বলে শোনা যাচ্ছে ৷ সেই সময় ভাইয়ের জন্য প্রিয়াঙ্কা কংগ্রেসের দরজা খোলা রাখতে চাইছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর ৷