নয়াদিল্লি, 28 মে: রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হোক বা প্রথমবার বিজেপির লোকসভার নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদে ঢোকার মুহূর্ত, সব ক্ষেত্রেই সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবত প্রণাম করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ৷ রবিবারও সে চিত্রের ব্যতিক্রম হল না ৷ এদিন দেশের নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করতে এসে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীকে ৷ আর এখানেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বার বার এমন ধারা কাজ করে থাকেন প্রধানমন্ত্রী ? কেনই বা সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেন তিনি ?
আদতে, সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবত সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ দেহের আট অঙ্গ দ্বারা প্রণাম। এই আটটি অঙ্গ হল যথাক্রমে মাথা, হাত, বুক, মন, হাঁটু, দৃষ্টি, বাক্য, চরণ বা পায়ের পাতা। শাস্ত্রমতে চোখ দ্বারা দর্শন,মনের মাধ্যমে প্রশংসা, হাত জোড় করে মাথা, বুক, হাঁটু ও চরণ ভূমি স্পর্শ করে প্রণাম করার অর্থই হল অষ্টাঙ্গ বা সাষ্টাঙ্গ প্রণাম ৷ একই সময়ে শরীরের এই আটটি অঙ্গ ভূমিতে স্পর্শ করলে তবেই তাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম বলা হয়। সনাতন ধর্ম মতে এই প্রণামের ফলে ব্যক্তির মন শান্ত হয়। এমনকী পৃথিবীর ইতিবাচক শক্তি শরীরে সঞ্চারিত হয় বলেও শাস্ত্রে দাবি করা হয়েছে।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে ঈশ্বর এবং গুরুজনদের প্রণাম করার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই এই সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণামের প্রথার প্রচলন আছে। শাস্ত্রানুয়ায়ী মনে করা হয়, সাষ্টাঙ্গ প্রণামে যজ্ঞের সমান পুণ্য লাভ করা যায়। অনেকে আবার মনে করেন, ষড়শোপচার পুজোর ফলও মেলে এই সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবত প্রণামের মধ্য দিয়ে ৷ এক কথায় নিজেকে ঈশ্বর বা সংশ্লিষ্ট ভাবধারার কাছে সমর্পিত করা। প্রধানমন্ত্রী মোদি বরাবরই সনাতন ধর্মের অনুসারী ৷ শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, বিজেপির তাবড় বড় নেতাই এই ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ৷
আর সে কারণেই দেখা যায়, প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই ভূমি পুজো বা আনুষ্ঠানিক প্রবেশের ক্ষেত্রেও পুজোর প্রচলন আছে বিজেপির অন্দরে ৷ বিজেপি সূত্রে দাবি, অত্যধিক ধার্মিক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷ এমনকী বরাবরই তিনি নিরামিষভোজি ৷ শুধু তাই নয়, রাজনীতিতে আসার আগে এক সময় সন্ন্যাস নেওয়ার চিন্তাও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ৷ আসলে, সনাতন ধর্মের সেই সংস্কার বোধ এখনও কাটেনি তাঁর মধ্যে থেকে ৷ আর সেই কারণেই সম্ভবত তাঁর এই দণ্ডবত প্রণাম ৷
আরও পড়ুন: নয়া সংসদ ভবন আমাদের হৃদয়কে গর্ব-আশা-প্রতিশ্রুতিতে ভরিয়ে দিয়েছে: মোদি
একাংশের অবশ্য বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নিজেকে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিই মনে করেন কেবল ৷ তাঁর এই সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবত প্রণামের মধ্যে দিয়ে যেমন একদিকে, সমর্পণ ভাব প্রকাশ পায়, তেমনই অন্যদিকে অহমিকাও দূর হয় ৷ আরও বেশি নিজেকে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি মনে করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী ৷ সেকারণেও হয়তো সাষ্টাঙ্গ প্রণামে তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ ৷