নাগপুর, 12 ফেব্রুয়ারি: অন্যায়-অবিচারের মূলে থাকা কারণটাকে খুঁজে বের করাই বিচার ব্যবস্থার কাজ ৷ উদারনৈতিক মানসিকতা শুধু নির্যাতিতের পাশে দাঁড়াতে পারে । আইনি পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বিচার ব্যবস্থার ভূমিকা নিয়ে এই কথা বললেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ৷ শনিবার নাগপুরে মহারাষ্ট্র ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটির প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ৷
এদিন সংবিধানের প্রস্তাবনার কথা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, "প্রস্তাবনাটি ছোট হলেও সংবিধানের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৷ এটি বলে, আমরা ভারতের নাগরিক ৷ আমরা নিজেরা নিজেদের এই সংবিধান দিয়েছি ৷ ভারতের বসবাসকারী মানুষ সাবজেক্ট থেকে সিটিজেন-এ উত্তীর্ণ হয়েছে ৷ এই রূপান্তরকেই চিহ্নিত করে সংবিধান ৷" তিনি আরও জানান, ঔপনিবেশিক শাসকরা সংবিধানকে গৌরবের মর্যাদা দেয়নি ৷ বরং এই ভাবনা দেশের মধ্যে থেকেই উঠে এসেছে ৷ পড়ুয়াদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, "সাংবিধানিক মূল্যবোধগুলি মেনে চললে আপনারা কোনও ভাবে ব্যর্থ হবেন না ৷"
আরও পড়ুন: 'বিচারকদের মধ্যে ভয় কাজ করে...'! ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য দেশের প্রধান বিচারপতির
তিনি পড়ুয়াদের পরামর্শ দেন, "সাংবিধানিক মূল্যবোধগুলির নির্দেশ মেনে চললে আপনারা কোনও ভাবে ব্যর্থ হবেন না ৷" বিচার ব্যবস্থা এবং উদারনৈতিক মানসিকতার মধ্যে তফাত সম্পর্কে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, "বিচার ব্যবস্থার শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত যাতে প্রত্যেক মানুষ যেন তাঁর অবিচ্ছেদ্য অধিকার পেতে পারেন ৷ অন্যদিকে, উদারনৈতিক মানসিকতা যাঁর প্রতি উদারতা দেখানো হচ্ছে, সেই মানুষটির চরিত্রের মহান দিকগুলিকে বিকশিত করে ৷ বিচার ব্যবস্থা অবিচারের মূলে গিয়ে কারণের সন্ধান করে ৷ কিন্তু উদারনৈতিকতা শুধু সেই মানুষটির নির্যাতনের ক্ষতে মলম লাগানোর কাজ করতে পারে ৷ বিচার ব্যবস্থা নাগরিকদের শক্তিশালী করার লক্ষ্যে গঠিত ৷ তাঁদের স্বনির্ভর করাই তার উদ্দেশ্য ৷ তাঁদের প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া লক্ষ্য ৷ উদারতা কেবল নির্যাতিত মানুষকে ক্ষণস্থায়ী উপশম দেয় ৷"
এই বক্তব্যের পাশাপাশি দেশের প্রধান বিচারপতি জানান, তিনি কাউকে উদারনৈতিক কাজকর্ম করার বিরুদ্ধে পরামর্শ দিচ্ছেন না ৷ তিনি বলেন, "আপনাদের সতর্ক করা উচিত ৷ কিছু বলা অথবা না-করা হয়ত তুলনামূলক ভাবে সাবধানী বা কম ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ ৷ কিন্তু জটিল পথ এমন যা একটা স্বতন্ত্রতা (make a difference) তৈরি করবে । তেমন কিছু বেছে নিতে হলে আইন এবং সমাজকে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ (realign law and society with Justice) করতে হবে ৷ এটা অনেক বেশি সাহসী পদক্ষেপ ৷"