কায়রো, 25 জুন: মিশর সফরের শেষদিন রবিবার ঐতিহাসিক আল-হাকিম মসজিদ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । কায়রোতে ভারতের দাউদি বোহরা সম্প্রদায়ের সহায়তায় পুনরুদ্ধার করা হয়েছে 11 শতকের এই স্থাপত্য। মিশরে তাঁর রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে মোদি যে ফাতেমীয় যুগের শিয়া মসজিদে যাবেন সে খবর শনিবারই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেইমতো এদিন নরেন্দ্র মোদি সেটি ঘুরে দেখেন। পরে অবশ্য মসজিদ পরিদর্শনের তাঁর ছবি টুইটও করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন আল-হাকিম মসজিদ পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মিশরের পর্যটন ও পুরাকীর্তি দফতরের মন্ত্রী মোস্তফা ওয়াজিরি । মসজিদের বাইরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। মোদিকে মসজিদের চারপাশটা ঘুরিয়েও দেখান তিনি । মসজিদটি শেষ সংস্কার প্রায় তিন মাস আগেই সম্পন্ন হয়। প্রধানমন্ত্রী 1012 সালে নির্মিত মসজিদের দেয়াল এবং দরজায় খোদাই করা শিলালিপিরও এদিন প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন প্রধানমন্ত্রী টুইটে লেখেন, "কায়রোর ঐতিহাসিক আল-হাকিম মসজিদ পরিদর্শন করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। এটি মিশরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির গভীর প্রমাণ ।" আরবি এবং ইংরেজি ভাষাতেয় টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বোহরা সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গেও এদিন দেখা করেছেন । যারা এই ফাতেমীয় যুগের শিয়া মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল । ভারত ও মিশরের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ককেও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী । মসজিদে প্রধানত জুম্মার এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে যান স্থানীয় ঘসলাম ধর্মের মানুষরা । এক হাজার বছরেরও বেশি পুরনো আল-হাকিম হল কায়রোর চতুর্থ প্রাচীনতম মসজিদ । সেইসঙ্গে এটি শহরে নির্মিত দ্বিতীয় ফাতিমি মসজিদ। মসজিদটি 13 হাজার 560 বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত । এর আইকনিক কেন্দ্রীয় প্রাঙ্গণটি প্রায় পাঁচ হাজার বর্গ মিটার জুড়ে রয়েছে। ভারতের বোহরা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি এই ফাতিমদের থেকে। তারা 1970 সালে মসজিদটি সংস্কার করে। এবং তারপর থেকে এটির রক্ষণাবেক্ষণও করে আসছে এই সম্প্রদায় ।
আরও পড়ুন: মিশরের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
মিশরে ভারতের রাষ্ট্রদূত অজিত গুপ্ত বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর বোহরা সম্প্রদায়ের প্রতি খুব অনুগত । এই সম্প্রদায়ের মানুষ বহু বছর ধরে গুজরাতেও রয়েছেন। বোহরা সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান ।" মিশরের বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, ঐতিহাসিক এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে আল-হাকিম বি-আমর আল্লাহর নামে। ইনি ছিলেন 16তম ফাতেমীয় খলিফা। এটি দাউদি বোহরা সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থান। দাউদি বোহরা মুসলিমরা ইসলামের অনুসারীদের একটি দল যারা ফাতিমি ইসমাইলি তাইয়িবি মতবাদকে মেনে চলে। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই এই দাউদি বোহরাদের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিন হেলিওপলিস কমনওয়েলথ যুদ্ধের সমাধিস্থলও পরিদর্শন করেন । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিশর এবং প্যালেস্তাইনে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধে শহিদ ভারতীয় সৈন্যদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। শহিদ জওয়ানদের উদ্দেশে এদিন পুষ্পার্ঘ্যও অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী । ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এদিন সমাধিস্থল ঘুরে চার হাজার 300-রও বেশি বীর ভারতীয় সৈন্যদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিশর এবং এডেনে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ।