নয়াদিল্লি, 27 মে: দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে নীতি আয়োগ কাউন্সিলের বৈঠকে গড়হাজির 11 রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অবিজেপি এবং কংগ্রেস সমমনা আট মুখ্যমন্ত্রী শনিবার এড়িয়ে গেলেন নীতি আয়োগের বৈঠক ৷ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট উপস্থিত না-হওয়ার জন্য স্বাস্থ্যের বিষয় উল্লেখ করলেও কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন অবশ্য কেন বৈঠকে যাননি তার জন্য কোনও নির্দিষ্ট কারণ জানাননি। নীতি আয়োগের বৈঠকে যাননি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ও ৷ এদিন বৈঠক শেষে নীতি আয়োগের সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম জানান, মোট 11 জন মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে আসেননি ৷ অন্যদিকে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদি রাজ্যগুলিকে আর্থিক বিচক্ষণতা এবং সুশাসনের অনুশীলনগুলি অনুসরণ করতে বলেছেন বলেও জানান সিইও সুব্রহ্মণ্যম ৷
অন্যদিকে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়ে ছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও দিল্লি নিয়ে কেন্দ্রের সাম্প্রতিক বিতর্কিত অধ্যাদেশ আনার প্রেক্ষিতেই এদিনের সভা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপ ৷ সেই সঙ্গে কেজরিওয়ালের অভিযোগ, দেশের গণতন্ত্রকে 'তামাশা'য় পরিণত করেছে কেন্দ্রের বর্তমান বিজেপি সরকার ৷ পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ টুইট করে লিখেছেন, "বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নীতি আয়োগের বৈঠকে না যাওয়ায় যাঁরা প্রশ্ন তুলছিলেন, তাঁরা এখন বয়কটের তালিকাটা দেখতে পাচ্ছেন ? কংগ্রেস, সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রীরাও বাংলার পথেই। ন্যায্য পাওনা দিচ্ছে না কেন্দ্র, বৈঠক করে কী হবে ? অধিকার আদায়ের আন্দোলন তীব্রতর হবে ৷"
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীও এদিনের বৈঠকে যোগ দেননি ৷ ভগবন্ত মান পালটা কেন্দ্রকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছেন, কেন্দ্র পঞ্জাবের স্বার্থের দিকে একেবারেই মনোযোগ দিচ্ছে না ৷ আর সে কারণেই তিনি সভা বয়কট করছেন। সেই সঙ্গে মান দাবি করেছেন, এর আগে গত অগস্টে নীতি আয়োগের বৈঠকে তিনি গ্রামীণ উন্নয়ন তহবিল, খড় পোড়ানো এবং কৃষকদের উদ্বেগের বিষয়গুলি উত্থাপন করলেও, কেন্দ্র সে বিষয়ে কোনও মনোযোগই দেয়নি। সেই সঙ্গে, এই বৈঠককে নিছক একটি 'ফটো সেশন' বলেও তীব্র কটাক্ষ করেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ৷ ভগবন্ত মান চিঠিতে স্পষ্টতই জানিয়েছেন, অমীমাংসিত সমস্যাগুলির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নীতি আয়োগের কোনও বৈঠকেই তিনি অংশ নেবেন না ৷ শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, "অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা সভা বয়কট করছেন, তার মানে কেন্দ্র তাদের সঙ্গে সঠিক আচরণ করছে না। নীতি আয়োগ তাদের দাবি শুনছে না ৷"
অন্যদিকে, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও এদিনের বৈঠকে ছিলেন না ৷ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকও এদিনের বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন ৷ এনডিএ এবং বিরোধী জোট উভয়ের থেকেই দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছেন পট্টনায়েক ৷ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী পট্টনায়েকের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকার জেরেই তিনি বৈঠকে যেতে পারেননি ৷
আরও পড়ুন: 'চোখ খুলে গিয়েছে, মাথা নত করে ক্ষমা চাইছি', খাদিকুলের মঞ্চে মন্তব্য মমতার
বিজেপি অবশ্য অভিযোগ করেছে, নীতি আয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা সভায় একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা গড়হাজির থেকে কার্যত সে রাজ্যের জনগণেরই ক্ষতি করছে ৷ এদিনের বৈঠকে আলোচনার জন্য একাধিক বিষয় তালিকাভুক্ত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ এই প্ল্যাটফর্মে রাজ্যগুলি সক্রিয় অংশগ্রহণ না করার জেরে জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমস্য়া হবে বলেও অভিযোগ বিজেপির ৷ বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, "আটজন মুখ্যমন্ত্রী নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেননি। দেশের উন্নয়ন ও পরিকল্পনার জন্য নীতি আয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদিনের এই বৈঠকের আলোচ্য তালিকায় কম করে 100টি বিষয় নির্ধারিত ছিল ৷ যে মুখ্যমন্ত্রীরা আসেননি, তারা আসলে সে রাজ্যের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে ৷ মোদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আর কতদূর যাবেন?"
আরও পড়ুন: মমতার পথে হেঁটেই নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট কেজরিওয়ালের
কেন্দ্রীয় সরকারের এক সূত্র মতে, যে মুখ্যমন্ত্রীরা নীতি আয়োগ পরিষদের সভা বর্জন করেছে, তাঁরা আদতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উন্নয়নকেই বর্জন করছে। গভর্নিং কাউন্সিল মিটিংয়ে নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো এবং বিনিয়োগ, এলাকার উন্নয়নের মতো একশোরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে ৷ প্রতিনিধিত্ব না করা রাজ্যগুলি সেই বিষয়ে নিজেদের মত ব্যক্ত করা থেকে বঞ্চিত হবে ৷