নয়াদিল্লি, 21 জুলাই : পেগাসাসের (Pegasus Spyware) নিশানায় বিশ্বের 14 জন রাষ্ট্রনায়ক ? ফাঁস হওয়া ডাটাবেস থেকে সামনে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ সূত্রের দাবি, সম্প্রতি যে 50 হাজার ফোন নম্বরের তালিকা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে, তার মধ্যেই রয়েছে এই 14 জন রাষ্ট্রনেতার নম্বর ৷ তালিকায় রয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ (French President Emmanuel Macron), পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (Pakistani Prime Minister Imran Khan), দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা (South African President Cyril Ramaphosa)-সহ অন্য়রা ৷
পেগাসাস প্রস্তুতকারী ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও গোষ্ঠী (NSO Group) অবশ্য প্রথম থেকেই ফাঁস হওয়া এই তথ্যভাণ্ডারটিকে ভুয়ো বলে দাবি করে আসছে ৷ এখনও পর্যন্ত যে তথ্য সামনে এসেছে, সেই মোতাবেক, সব মিলিয়ে বিশ্বের প্রায় 36 টি দেশের সরকার এনএসও-র গ্রাহক বা ক্লায়েন্ট ৷ কিন্তু তাদের বক্তব্য, গোটা বিষয়টিই অত্যন্ত গোপনীয় ৷ তাই তাদের পক্ষে কোনও গ্রাহকের সম্পর্কেই ন্যূনতম কোনও তথ্যও প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয় ৷ এমনকী, ফাঁস হওয়া ডাটাবেসে ভারত-সহ যেসব দেশকে এনএসও-র ক্লায়েন্ট বলে দাবি করা হয়েছে, তাও সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ওই ইজ়রায়েলি সংস্থা ৷
আরও পড়ুন : Pegasus row : সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তের দাবি কপিল সিবালের
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকেলে একটি নতুন বিবৃতি প্রকাশ করেছে এনএসও গোষ্ঠী ৷ তারা জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া তালিকায় থাকা ‘‘অন্তত তিনজন ব্যক্তি’’ কোনও দিনই তাদের নিশানায় ছিলেন না ৷ এঁরা হলেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ, মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মহম্মদ (King Mohammed VI) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ডিরেক্টর তেদ্রস আধানম ঘেব্রেসাস (Tedros Adhanom Ghebreyesus) ৷ এনএসও-র দাবি, তাদের কোনও গ্রাহকই কোনওদিন এই তিনজনের উপর নজরদারি চালায়নি ৷
যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ ফ্রান্সের অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ (Forbidden Stories) ৷ তারা ইতিমধ্যেই ফাঁস হওয়া তথ্যভাণ্ডারটি খতিয়ে দেখেছে ৷ তাতে যে মোবাইল নম্বরগুলি পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির ফরেন্সিক পরীক্ষাও করা হয়েছে ৷ সেই কাজের দায়িত্বে ছিল অ্য়ামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের (Amnesty International) সিকিউরিটি ল্যাব ৷
আরও পড়ুন : Pegasus Spyware : রিবুট বা ফ্যাক্টরি রিসেট করেও উৎখাত করা যায় না পেগাসাসকে
পেগাসাস প্রোজেক্টের (Pegasus Project) ফরেন্সিক তথ্য বলছে, বিশ্বের বহু দেশেরই বিরোধী রাজনৈতিক দলের বড় নেতা বা উপদেষ্টারা এই স্পাইওয়্য়ারের নজরদারিতে ছিলেন ৷ যাঁদের মধ্যে অন্যতম ভারতের প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) ৷ তালিকায় রয়েছেন নামজাদা সাংবাদিক ও তাঁদের কাছের মানুষরাও ৷ সম্প্রতি সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগ্গির (Jamal Khashoggi) খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল ৷ এখন শোনা যাচ্ছে, নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী ও বাগদত্তার উপর দীর্ঘদিন ধরেই নজরদারি চালানো হচ্ছিল পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ৷
কিন্তু এবার যে সমস্ত তথ্য সামনে আসছে, তা চিন্তার বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷ কারণ, যখন কোনও রাষ্ট্রনায়কের উপর নজরদারি চালানো হয়, তখন তার পিছনে সাধারণত অন্য কোনও দেশের যোগসাজশ থাকে ৷ এই ধরনের ঘটনা জনসমক্ষে চলে এলে তার জেরে আন্তর্জাতিক স্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে ৷ যেমন, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের (Angela Merkel) উপর গোপনে নজরদারি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ৷