নয়াদিল্লি, 27 অক্টোবর : ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস-কাণ্ডের তদন্তে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করতে চেয়েছিল কেন্দ্র, তা খারিজ করে বিশেষ তদন্তকারী দল (Special Investigation Team) তৈরি করল সুপ্রিম কোর্ট ৷ সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রনের (Justice R.V. Raveendran) নেতৃত্ব গঠিত এই দলে তাঁকে সহযোগিতা করবেন অলোক জোশী (Alok Joshi) ও ডাঃ সন্দীপ ওবেরয় (Dr. Sundeep Oberoi) ৷ অলোক জোশী (Alok Joshi) 1976-এর ব্যাচের আইপিএস এবং ডাঃ সন্দীপ ওবেরয় (Dr. Sundeep Oberoi) ('ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ স্ট্যান্ডারডাইজেশ', 'ইন্টারন্যাশনাল ইলেকট্রো-টেকনিক্যাল কমিশন', 'জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটি') 3টি সাব-কমিটির চেয়ারম্যান ৷ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে 8 সপ্তাহ পর ৷ 'এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া'-সহ (Editors Guild of India) প্রবীণ সাংবাদিক এন রাম, শশী কুমার এবং আরও অনেকে আদালতে পেগাসাস বিষয়ে তদন্তের আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন ৷
কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট তৈরি করে কোর্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত ৷ এর পাশাপাশি সাইবার সিকিওরিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে 3 সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি তৈরি করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ৷
টেকনিক্যাল কমিটি
1. ডঃ নবীন কুমার চৌধুরী (Dr. Naveen Kumar Chaudhary)
অধ্যাপক, সাইবার সিকিওরিটি ও ডিজিটাল ফরেনসিক, ন্যাশনাল ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, গান্ধিনগর, গুজরাত
2. ডঃ প্রবাহরণ পি (Dr. Prabaharan P)
অধ্যাপক, স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, অমৃতা বিশ্ব বিদ্যাপীঠম, অমৃতাপুরী, কেরালা
3. ডঃ অশ্বিন অনিল গুমস্তে (Dr. Ashwin Anil Gumaste)
ইনস্টিটিউট চেয়ার অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং আইআইটি, বম্বে, মহারাষ্ট্র
এই টেকনিক্যাল দলটির কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করবেন প্রাক্তন বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রন ৷
আরও পড়ুন : Pegasus Case: পেগাসাস কাণ্ডের তদন্তে কমিটি গঠন করবে সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি (Chief Justice of India) এন ভি রামানার (N V Ramana) নেতৃত্বে বিচারপতি সূর্য কান্ত (Justice Surya Kant) ও বিচারপতি হিমা কোহলি-র (Justice Hima Kohli) বেঞ্চ কেন্দ্রের সমালোচনা করে জানায়, আদালত কেন্দ্রকে পেগাসাসে আড়ি পাতার অভিযোগ বিষয়ে তথ্য জানাতে যথেষ্ট সময় দিয়েছিল ৷ বারে বারে সুযোগ এবং নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও শেষমেশ ভারত সরকার যে রেকর্ড পেশ করেছে, তা "সীমিত হলফনামা" (limited affidavit) ৷ এখানে কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট নয় ৷
এর আগে আদালতে কেন্দ্রীয় সরকার পেগাসাস তদন্ত বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছিল ৷ সেই বিষয়ে কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করে বেঞ্চ জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা কোনও ভীতির কারণ নয় যে, শুধুমাত্র এর নামে বিচারবিভাগ তার থেকে দূরে থাকবে ৷ আদালত জাতীয় নিরাপত্তার এক্তিয়ারে নাক গলানো বিষয়ে সদা সতর্ক ৷ কোনও সর্বজনীন নিষেধাজ্ঞা এর বিচারবিভাগীয় তদন্তে বাধা হতে পারে না ৷
এই কথা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রকে বলেন, "আদালতের সামনে কেন্দ্রকে তার অবস্থান স্পষ্ট করে জানাতে হবে ৷" যেখানে 'জাতীয় নিরাপত্তা' জড়িত, এমন ক্ষেত্রে প্রতি বার নিরাপত্তার কথা তুলে কেন্দ্র ছাড় পেতে পারে না ৷ শুধুমাত্র এই জন্যে আদালত একজন নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না ৷
কেন্দ্র মামলাকারীদের পেগাসাস সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ অস্বীকার করেনি ৷ কেন্দ্রের "সীমিত হলফনামা"য় অভিযোগের দায়স্বীকারের বিষয়টি অস্পষ্ট ৷ এই পরিস্থিতিতে মামলাকারীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক ভাবে আদালত তদন্তের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে ৷ কেন্দ্রের তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটি পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে, তাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ নিজেই বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ৷
কোন পরিস্থিতিতে তদন্তের নির্দেশ দিল আদালত ?
1. গোপনীয়তার অধিকার এবং কথা বলার অধিকার খতিয়ে দেখা
2. দেশের সব নাগরিক এই অভিযোগের সম্ভাবনায় প্রভাবিত হয়েছে
3. ভারত সরকার কোনও পরিষ্কার অবস্থান নেয়নি
4. অন্য দেশ এবং বিদেশি কোনও সংস্থা জড়িত থাকার অভিযোগ
5. কোনও বিদেশি কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা প্রাইভেট সংস্থার জড়িত থাকার সম্ভাবনা
6. কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ
7. নাগরিকদের উপর এই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশ্নটিও বিচারবিভাগীয় বিষয় ৷ সেটি বিতর্কিত এবং এর তথ্য ফের পরীক্ষা করা প্রয়োজন ৷
আরও পড়ুন : Pegasus Snooping : পেগাসাস নিয়ে বিস্তারিত হলফনামা দিতে নারাজ কেন্দ্র, সুপ্রিম কোর্টে জানালেন সলিসিটর জেনারেল
এই তদন্ত কমিটি তৈরি করা প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালত জানায়, সংঘর্ষে পরিপূর্ণ এই বিশ্বে পক্ষপাতমুক্ত, নিরপেক্ষ ও দক্ষ বিশেষজ্ঞদের খুঁজে নির্বাচন করার বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ ৷ কারণ আদালত এ বিষয়ে কোনও সরকারি সংস্থা বা প্রাইভেট সংস্থার উপর ভরসা করতে পারেনি ৷ কোনও রাজনৈতিক দল যাতে এ বিষয়ের মধ্যে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে আদালত সবসময় সচেতন থেকেছে ৷ এ প্রসঙ্গে বেঞ্চ বলে, "আমরা এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, কোনও রকম রাজনৈতিক ভাবধারার মধ্যে না গিয়ে সাংবিধানিক পরিকাঠামো এবং আইনি রূপরেখা মেনে চলার চেষ্টা করছি আমরা ৷"
পেগাসাস অভিযোগ নিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকারের দিকটিও স্পষ্ট করে বেঞ্চ বলে, "একটি সুসভ্য গণতান্ত্রিক সমাজের সদস্যরা গোপনীয়তা বজায় রাখার আশা করতে পারে, তা যুক্তিযুক্ত ৷ গোপনীয়তা শুধুমাত্র সাংবাদিক বা সামাজিক কর্মীর একার প্রশ্ন নয় ৷" বেঞ্চ আরও বলে, সংবিধানে উল্লিখিত আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত কোনও প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট বিধিবদ্ধ সুরক্ষাকবচ ছাড়া একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের উপর নির্বিচারে গুপ্তচরবৃত্তি চালানো যেতে পারে না ৷ যেখানে আইন মেনে দেশ পরিচালনা করা হয় ৷