নয়াদিল্লি, 13 ডিসেম্বর: সংসদে হামলার চেষ্টার ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়াল সাংসদদের মধ্যে ৷ একে নিরাপত্তার গলদ হিসেবেই দেখছেন শাসক থেকে বিরোধী সব দলের সাংসদরা ৷ তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যে কোনও কিছু ঘটে যেতে পারত ৷ তৃণমূলের অপর সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, "দুই ব্যক্তি স্লোগান দিচ্ছিলেন, 'টিয়ার গ্যাস' স্প্রে করলেন ৷" একে সংসদে নিরাপত্তার গাফিলতি হিসেবেই দাবি করেছেন তিনিও ৷ একই সুর শোনা গিয়েছে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর মুখেও ৷ শুধু বিরোধীরাই নন, শাসকদল বিজেপিও মানছে যে, এই ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই ৷
সংসদ হামলার 22 বছর পূর্তির দিনে বুধবার আচমকাই সংসদে অনুপ্রবেশ করে দুই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি । সংসদে তখন বক্তব্য রাখছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু । হঠাৎই দর্শক আসন থেকে সংসদের ভিতরে লাফিয়ে পড়েন দু'জন ৷ তাঁদের হাতে ছিল স্মোক ব্লাস্টার । কিছু বুঝে ওঠার আগেই সংসদের কক্ষের ভিতর হলুদ ধোঁয়া দেখতে পাওয়া যায় । সঙ্গে সঙ্গে অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয় ৷
এই ঘটনাকে নিরাপত্তার বড় গাফিলতি বলছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "সংসদের নিরাপত্তাকে ফুলপ্রুফ বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ৷ সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে কী করে ঘটে । তাহলে নিরাপত্তা নিয়ে যে বক্তব্য রাখা হচ্ছিল তার সারবত্তা কোথায় !"
এ দিন এই নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারও । তাঁর কথায়, "হঠাৎ করে চোখের সামনে দেখলাম ভিজিটার বেঞ্চ থেকে দু'জন লাফিয়ে পড়লেন সংসদ কক্ষের ভেতরে । কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা লাফিয়ে লাফিয়ে এক বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চে যেতে থাকলেন ৷ তাঁদের হাতে একটি ক্যানের মতো কিছু একটা দেখলাম । তার থেকে হলুদ ধোঁয়া বেরোচ্ছিল । কীভাবে এই ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না । সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, সংসদের অধিবেশন চলাকালীন আদৌও কি নিরাপদ সাংসদরা ?"
এই ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও । তিনি বলেন, "2001 সালে সংসদ ভবনে হামলায় যাঁরা শহিদ হয়েছিলেন, আজ সকলে মিলে তাঁদের স্মরণ করেছি । আজকের দিনেই এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারিনি । আর এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট, সংসদের নিরাপত্তায় ফাঁকফোকর রয়েছে । এখানে নিরাপত্তার গাফিলতি তো হয়েছেই ।"
নিরাপত্তার গাফিলতির কথা অস্বীকার করতে পারেননি বিজেপি সাংসদরাও ৷ এই নিয়ে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, "দু'জন দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এ সব করেছিলেন ৷ তাঁদের মার্শাল আটক করে নিয়ে গিয়েছেন । কী কারণে তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করলেন তা জানার চেষ্টা হচ্ছে । তিনি এও বলেন যে, বিধানসভা বা সংসদের মধ্যে আসার জন্য সকলকেই নির্দিষ্ট ডকুমেন্ট দেখিয়েই আসতে হয় । কিন্তু কীভাবে তাঁরা এই জিনিসগুলো নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে । গোটা বিষয়টায় নিরাপত্তা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই । নিরাপত্তার এত কড়াকড়ি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কীভাবে ভিতরে ঢুকলেন সেটাই এখন বড় প্রশ্ন । সাংসদরা যেখানে ফোন পর্যন্ত নিয়ে ঢুকতে পারেন না, সেখানে স্মোক ব্লাস্টার কীভাবে তাঁদের সঙ্গে ভেতরে এল সেটা অবশ্যই একটা বড় প্রশ্ন ।"
শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, ওই দুই অজ্ঞাত পরিচয়কে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে । পুলিশের তরফ থেকে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে । এই ঘটনার পেছনে মূল উদ্দেশ্য কী বা এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন: