হায়দরাবাদ, 20 অগস্ট : উত্তরপ্রদেশের গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে (Vikas Dubey)-র এনকাউন্টারের ঘটনায় পুলিশকে ক্লিন চিট দিল তিন সদস্যের বিচারবিভাগীয় কমিশন ৷ এই কমিটি গত বছর উজ্জয়ীনিতে পুলিশের সঙ্গে হওয়া সংঘর্ষে মৃত বিকাশ দুবের মৃত্যুর তদন্ত করছিল ৷ তবে, গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে এবং তার দলকে মদত দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, রাজস্ব এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে তিন সদস্যের বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি ৷ যে কমিটি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে কাজ করছিল ৷ এই কমিটি বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় তাদের তদন্তের রিপোর্ট পেশ করেছে ৷
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বি এস চৌহ্বান, এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শশীকান্ত আগরওয়াল এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্রাক্তন ডিজি কে এল গুপ্তাকে নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল ৷ প্রসঙ্গত, কানপুর থেকে গ্যাংস্টার বিকাশ দুবেকে লখনউ নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ৷ পুলিশ তার রিপোর্ট উল্লেখ করেছিল, দুবে পুলিশের সঙ্গে গাড়িতে হাতাহাতি শুরু করেছিল ৷ যার জেরে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ৷ এর পরেই বিকাশ দুবে এক পুলিশকর্মীর বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে ৷ তখনই আত্মরক্ষার স্বার্থে দুবেকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় পুলিশ এবং গ্যাংস্টারের সেখানে মৃত্যু হয় ৷
তবে, পুলিশের এই রিপোর্ট নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায় ৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলের তরফে অভিযোগ করা হয়, বিকাশ দুবে যাতে আদালতে মুখ খুলতে না পারে, তার জন্য ভুয়ো এনকাউন্টার করে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে ৷ যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলাও দায়ের হয় ৷ যার পরেই আদালতের তরফে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ যে কমিটি গতকাল উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে ৷ যেখানে বলা হয়েছে, ‘‘পুলিশ আত্মরক্ষার্থে বিকাশ দুবের উপর গুলি চালিয়েছিল ৷ যার ফলে বিকাশ দুবের মৃত্যু হয় ৷ এছাড়াও, যে পুলিশকর্মী আহত হয়েছিলেন, তিনি নিজেকে আহত করেননি বা সেটি সাজানো ছিল না ৷’’
আরও পড়ুন : গ্রেপ্তারের আগে মহাকাল মন্দিরে বিকাশ দুবে, CCTV ফুটেজ
কিন্তু, দীর্ঘদিন বিকাশ দুবে পুলিশের নাগালের বাইরে ছিল ৷ যখনই তাকে এবং তার দলবলকে পুলিশ ধরতে যেত, তার আগেই সে ওই স্থান থেকে সরে পড়ত ৷ এই ঘটনা নিয়েও তদন্ত করেছিল কমিটি ৷ যার রিপোর্টে কমিটি উল্লেখ করেছে, ‘‘পুলিশ এবং রাজস্ব দফতরের আধিকারিক বিকাশ দুবে এবং তার দলকে সাহায্য করত ৷ যদি, কোনও ব্যক্তি বিকাশ দুবে বা তার লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতেন, তাহলে সেই অভিযোগকারীকে পুলিশ সবসময় হেনস্থা করত ৷ যদি, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের তরফে অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হত, সেক্ষেত্রেও স্থানীয় পুলিশ সেই নিজেদের মতো করে অভিযোগ লিখত ৷’’
আরও পড়ুন :বন্দুক নিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই পালটা গুলি, তাতেই খতম বিকাশ, দাবি পুলিশের
পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিপদে বিকাশ দুবেকে মদত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে ৷ যেখানে বলা হয়েছে, ‘‘তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনওভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হত, তবে, তা নিরপেক্ষভাবে হত না ৷ গুরুতর অপরাধের ধারাগুলিকে চার্জশিট ফাইল করার আগে সরিয়ে দেওয়া হত ৷ এমনকি বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন অধিকাংশ সাক্ষীকে বন্দি করে রাখা হত ৷ ফলে আদালত থেকে বিকাশ দুবে এবং তার লোকজন খুব সহজেই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যেত ৷ এমনকি রাজ্যের তরফে কখনই বিকাশ দুবের বিরুদ্ধে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আইনজীবী নিযুক্ত করেনি ৷ এমনকি জামিন হওয়ার পর তার বিরোধিতা করে কখনও উচ্চ আদালতে আবেদন করেনি ৷’’ কার্যত উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিকাশ দুবেকে মদত দেওয়ার অভিযোগ এনেছে ওই কমিটি ৷
প্রসঙ্গত, গত বছর 3 জুলাই কানপুরের বিকরু গ্রামে পুলিশ বিকাশ দুবে এবং তার দলকে ধরতে যায় ৷ কিন্তু, সেখানে আগে থেকেই বিকাশ দুবের কাছে পুলিশের যাওয়ার খবর চলে যায় ৷ পুলিশ বিকাশকে ধরতে গেলে, চারদিক থেকে ঘিরে ধরে গুলি চালাতে থাকে তার লোকজন ৷ ঘটনায় এক ডেপুটি পুলিশ সুপার সহ মোট 8 জন পুলিশকর্মী নিহত হন ৷ এর পর উজ্জয়ীনি থেকে বিকাশ দুবেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ সেখান থেকে লখনউ নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের ৷