কলকাতা, 13 নভেম্বর : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার জয়ের 107 বছর পূর্ণ হল আজ ৷ 1913 সালের 13 নভেম্বর প্রথম অ-ইউরোপীয় হিসেবে সাহিত্য়ে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ নিজের কাব্য় বোধকে ব্য়বহার করে গীতাঞ্জলির ইংরেজি সংস্করণ লিখেছিলেন ঠাকুর ৷ তাঁর সেই অনবদ্য় সৃষ্টির পুরস্কার তাঁকে দিয়েছিল নোবেল কমিটি ৷ যা সমগ্র বাংলা তথা দেশের কাছে আজীবন স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থেকে যাবে ৷
157টি গীতিকবিতা নিয়ে 1920 সালে গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয় ৷ তবে, কবিগুরুর এই সৃষ্টি শুরু হয়েছিল 1908 সালে ৷ যখন তিনি শিলাইদহে বেড়াতে যান ৷ সেখান থেকে শান্তিনিকেতন ফিরে একটানা পাঁচ মাস সেখানে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ৷ সেই সময় থেকেই তাঁর গীতাঞ্জলি লেখার যাত্রা শুরু হয় ৷ এরপর আবারও তিনি শিলাইদহে যান বেড়াতে ৷ সেখানেও চলে গীতাঞ্জলির সৃষ্টি ৷ শিলাইদহ থেকে ফিরে জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে তিনি গীতাঞ্জলির বাকি অংশটুকু শেষ করেছিলেন ৷ তবে, এই গীতাঞ্জলির জন্য় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নোবেল পুরস্কার পাননি ৷ গীতাঞ্জলির 51 টি গীতিকবিতা এবং তাঁর লেখা গীতিমাল্য়, নৈবেদ্য় সহ মোট ন’টি গ্রন্থ থেকে বাকি 52 টি গান নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন ইংরেজি সাহিত্য়ের ‘সং অফারিংস’ নামের কাব্য়গ্রন্থটি ৷ ‘গীতাঞ্জলি’র মতো ‘সং অফারিংস’ এর অধিকাংশ গানের সুর দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ তাঁর এই লেখনী এবং তাঁর ভাষা, সুর ও কাব্য়বোধের জন্য় 1913 সালে নোবেল কমিটি সাহিত্য়ে নোবেল পুরস্কারের জন্য় কবিগুরুর নাম ঘোষণা করে ৷
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টি আজীবন বাংলা তথা বাঙালির শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে থেকে যাবে ৷ তবে, তাঁর এই সৃষ্টি শুধু যে বাঙালির জন্য় ছিল না, তা তাঁর নোবেল জয়ের মধ্য়ে দিয়েই বোঝা গিয়েছিল ৷ পরবর্তীকালে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কবিগুরুর গান নিয়ে কাজ হয়েছে ৷ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে রবীন্দ্রনাথের গান আজ নবরূপে প্রকাশ পাচ্ছে ৷ তবে, তাঁর সৃষ্টি করা সুরকে তা ছাপিয়ে যেতে ব্য়র্থ হয়েছে ৷ তাই নোবেল জয়ের 107 বছর পরেও কবিগুরুর সৃষ্টি যে অমর হয়ে থাকবে তা বলাই বাহুল্য় ৷ তবে, দুঃখের বিষয় একটিই, নিরাপত্তার ঢিলেমির সুযোগে বিশ্ব মঞ্চে বাঙালি হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি পাওয়া সোপান চিহ্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার চুরি যায় ৷ 25 মার্চ 2004 সালের ওইদিনটি আজীবন বাঙালি তথা বাংলার কাছে একটি কালোদিন হিসেবে পরিচিত হয়ে রয়েছে ৷ বিশ্বভারতীর জাদুঘর থেকে রহস্য়জনকভাবে নোবেল পদক সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্য়বহারের বহু অমূল্য় সম্পদ সেদিন খোয়া যায় ৷