নয়াদিল্লি, 2 ডিসেম্বর : এখন আর ইউপিএ-র (UPA in Centre) অস্তিত্ব নেই বলে এক দিন আগেই বিজেপি বিরোধী তৃতীয় জোটের সম্ভাবনা উস্কে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee in Mumbai) । তৃণমূলনেত্রীর (TMC Chief Mamata Banerjee) সুরে গলা মিলিয়ে এ বার জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তাঁর সুহৃদ তথা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। তাঁর সাফ কথা, বিরোধী জোটে কংগ্রেসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বিরোধীদের নেতৃত্ব দেওয়া ঐশ্বরিক অধিকার কখনও এক জন মাত্র ব্যক্তির হতে পারে না ।
পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) বিজেপি বিরোধী জোটের রণকৌশল তৈরিতে যখন ঘন ঘন দিল্লি-মুম্বই করছেন মমতা এবং কংগ্রেস বিরোধিতা প্রকাশ্যেই তুলে ধরছেন, সেই সময় বৃহস্পতিবার নেটমাধ্যমে কংগ্রেসেকে ফের একহাত নিলেন প্রশান্ত । সরাসরি যদিও কারও নাম করেননি প্রশান্ত, তবে তিনি কংগ্রেস সাংসদ তথা গান্ধি পরিবারের সদস্য রাহিুল গান্ধিকেই (Rahul Gandhi as Opposition Leader) নিশানা করেছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের ।
এ দিন নিজের টুইটার হ্যান্ডলে প্রশান্ত লেখেন, ‘শক্তিশালী বিরোধী জোট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের চিন্তাভাবনা এবং অবস্থান অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ৷ কিন্তু বিরোধী জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্বই থাকার মতো ঐশ্বরিক অধিকার কখনও এক জন মাত্র ব্যক্তির হতে পারে না ৷ বিশেষ করে, গত 10 বছরে কংগ্রেস যেখানে 90 শতাংশ নির্বাচনে হেরে গিয়েছে ৷ গণতান্ত্রিক ভাবে বিরোধী শিবিরকেই নেতৃত্ব চয়নের অধিকার দেওয়া হোক ৷’
আরও পড়ুন: Kapil Sibal Tweets on UPA : কংগ্রেস ছাড়া ইউপিএ আত্মাহীন দেহ, মমতাকে পালটা কপিলের
এর আগে, বুধবার মুম্বইয়ে রাহুলকে নিশানা করেছিলেন মমতাও । তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘কেউ যদি কোনও কাজ না করেন, অর্ধেক সময় বিদেশে থাকেন, তিনি রাজনীতি করবেন কী ভাবে? রাজনীতির জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকা দরকার ৷’ তার পরে রাহুলকে নিশানা করে কংগ্রেসের প্রতি প্রশান্তর কটাক্ষকে যথেষ্ট অর্থবহ মনে করছে রাজনৈতিক মহল । কারণ এতে মমতাকে বিরোধী মুখ হিসেবে তুলে ধরা এবং কংগ্রেসকে গৌণ রেখে শক্তিশালী বিজেপি বিরোধী জোট গড়ায় তিনি সূত্রধরের ভূমিকা পালন করছেন বলে মনে করা হচ্ছে ।
তবে এই প্রথম নয়, এ বছর বাংলার বিধানসভা নির্বাচন মেটার পর থেকেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দেগে আসছেন প্রশান্ত । আর বরাবরই তাঁর নিশানায় থেকেছেন রাহুল । বিজেপি-র মোকাবিলা করতে হলে, কংগ্রেসকে প্রয়োজন, কিন্তু রাহুলের নেতৃত্ব ততটাও প্রয়োজনীয় নয় বলে একাধিক বার বার্তা দিয়েছেন তিনি । এমনকি উত্তরপ্রদেশেও, 2017 সালে যোগী আদিত্যনাথের মোকাবিলায় রাহুলের পরিবর্তে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরাকে নামানোর পক্ষে ছিলেন প্রশান্ত ।
দিল্লির একটি সূত্র জানাচ্ছে, 2024-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে বাদ দেওয়ার কথা মোটেই ভাবছেন না প্রশান্ত । কিন্তু বিজেপি বিরোধী জোটের নেতৃত্বে রাহুলকে রাখার পক্ষপাতী নন তিনি । 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে রাহুলকে মোদির বিরুদ্ধে নামিয়ে কোনও লাভই হয়নি । এমনকি দলের হয়ে যেখানে যেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাহুল, সর্বত্রই ক্ষমতা হারাতে হয়েছে কংগ্রেসকে । তাই রাহুলের পরিবর্তে মানুষের নাড়ি বুঝতে পারেন, প্রশান্ত এমন কাউকে বিরোধী জোটের নেতৃত্বে চান বলে দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের ।
তবে প্রশান্ত নিজেও রাহুল বিরোধিতা নিয়ে কোনও লুকোছাপা করেননি । এ বছর অক্টোবরেই গোয়ায় তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জাতীয় রাজনীতি থেকে বিজেপি এত তাড়াতাড়ি কোথাও যাচ্ছে না । কিন্তু এই সহজ সরল বিষয়টি মাথায় ঢুকছে না রাহুলের । কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়েও সরব হন প্রশান্ত । জানিয়ে দেন, দলের নেতারা সতর্ক না হলে, জাদুদণ্ড ঠেকিয়ে কংগ্রেসকে চাঙ্গা করা কোনও ভাবেই সম্ভব নয় ।
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি-বিরোধী তৃতীয় জোট গড়া নিয়ে যদিও খুব একটা উৎসাহিত নন প্রশান্ত । নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহকে রুখতে তৃতীয় জোট গড়ে বিশেষ লাভ যে হবে না, সে কথা আগেও জানিয়েছেন তিনি । এমনকি রাহুল-প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসকে চাঙ্গা করার দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি । কিন্তু তা করতে গিয়ে রাহুলের সঙ্গে সংঘাত বাঁধে তাঁর । স্বাধীন ভাবে কাজ করতে চেয়েছিলেন প্রশান্ত, কিন্তু তাঁর সমস্ত সিদ্ধান্তেই রাহুল নাক গলাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ । সেই কারণেই বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে সাহায্য করার রাস্তা থেকে সরে আসেন তিনি । বরং ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়-সহ একাধিক রাজ্যে তৃণমূলের শিকড় বিস্তারের কাজে নামেন । একই সঙ্গে মমতাকে জাতীয় রাজনীতিতে মোদির প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি ।