হমীরপুর (হিমাচলপ্রদেশ), 31 মার্চ: মহার্ঘ জ্বালানির ছ্যাঁকায় নাজেহাল আমজনতা ৷ পেট্রলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডিজেলের দাম ৷ যার জেরে সামগ্রিকভাবে বাড়ছে পরিবহণের খরচ ৷ ফলে বাসের টিকিট থেকে বাজারের মাছ, আনাজ, ডিম- দাম বাড়ছে সবকিছুরই ! এমন অসময়ে প্রকৃত অর্থেই সুদিনের সন্ধান দিলেন বিজয় কে মাহাত ৷ হিমাচলপ্রদেশের এনআইটি হমীরপুরের ছাত্র তিনি ৷ কয়েকজন সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে এবং অধ্য়াপকদের পরামর্শে রান্নায় ব্যবহৃত ভোজ্য তেলের বাতিল অংশ থেকেই বায়োডিজেল তৈরি করে ফেলেছেন তিনি ! এই তেল বাজারজাত করা হলে আগামী দিনে পরিবহণ খরচ এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যাবে বলে আশাবাদী বিজয় ৷ তাতে সামগ্রিকভাবে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা সম্ভব হবে ৷ পাশাপাশি, এই তেল পরিবেশবান্ধব হওয়ায় দূষণও বহুলাংশে বাগে আসবে ৷
বিজয় জানান, ইতিমধ্যেই এই গবেষণার সুফল ঘরে তোলার পরিকল্পনা শুরু করেছে তাঁদের ক্য়াম্পাস কর্তৃপক্ষ ৷ সেটা কীভাবে ? আসলে, এনআইটি হমীরপুর ক্য়াম্পাসের মধ্যে মোট 11টি ছাত্রাবাস বা হস্টেল রয়েছে ৷ এখানকার আবাসিকদের জন্য হস্টেলের রান্নাঘরগুলিতেই খাবার তৈরি করা হয় ৷ সেই রান্না করতে গিয়ে নানাভাবে প্রতিদিন কিছু পরিমাণ ভোজ্য তেল নষ্ট হয় ৷ সপ্তাহে এই পরিমাণটা প্রায় 40 লিটার ! বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই ভোজ্য তেলের চরিত্র বদল করেই তাকে জ্বালানিতে পরিণত করেছেন বিজয় ৷ প্রতি 1 লিটার ভোজ্য তেল থেকে 900 মিলিলিটার-910 মিলিলিটার জ্বালানি বা বায়োডিজেল উৎপন্ন হয় ৷ এতে খরচ পড়ে প্রায় 65 টাকা ৷ খুচরো বাজারে এই তেল ন্যূনতম 70 টাকা প্রতি লিটার হিসাবে বিক্রি করা যেতে পারে ৷
বর্তমানে ভারতের নানা প্রান্তে ডিজেলের কম-বেশি 90 থেকে 98 টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে ৷ যা আগামী দিনে আরও বাড়বে ৷ উপরন্তু, ডিজেল আদতে জীবাশ্ম জ্বালানি ৷ যা ক্ষয়িষ্ণু এবং এটি পোড়ালে কার্বন নির্গমন লাগাতার বাড়ে ৷ কিন্তু, বায়োডিজেলের সেই সমস্যা নেই ৷ তার উপর দামেও অনেকটাই সস্তা ৷ বিজয় তাঁর গবেষণাপত্রে যে হিসাব কষেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের ক্য়াম্পাসের গাড়িগুলির জন্য এই বায়োডিজেল ব্য়বহার করা হলে বার্ষিক খরচ অন্তত দেড় থেকে দু'লক্ষ টাকা খরচ কমবে ৷ আগামী দিনে বিপুল পরিমাণে এই বায়োডিজেল তৈরি করা হলে উৎপাদন খরচ আরও কমবে (40-45 টাকা প্রতি লিটার) ৷ ফলে খুচরো বাজারেও তার দাম কমবে ৷ যার জেরে আখেরে লাভবান হবে আমজনতা ৷
আরও পড়ুন: নিজেরাই জৈব সার তৈরি করে আরও স্বাবলম্বী হবেন কৃষকরা, প্রশিক্ষণ চলছে আসানসোলে
প্রসঙ্গত, রান্নায় ব্যবহৃত ভোজ্য তেল (প্রতি 1 লিটার) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ছেঁকে নিয়ে বা 'ফিল্টার' করে তাতে পর্যায়ক্রমে 9.8 গ্রাম সালফিউরিক অ্যাসিড এবং 320 মিলিলিটার মিথাইল যোগ করা হয় ৷ তারপর সেই মিশ্রণ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্রায় 1 ঘণ্টা ধরে একটি বিশেষ যন্ত্রের মধ্যে রেখে উত্তপ্ত করা হয় ৷ এরপর ওই মিশ্রণে 7 গ্রাম পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইড যোগ করা হয় ৷ এর 2 ঘণ্টা পর এই মিশ্রণ বায়োডিজেলে পরিণত হয় ৷ বিজয় বলছেন, চাইলে এই জ্বালানি সরাসরি গাড়িতে ব্যবহার করা যায় ৷ কিন্তু, বর্তমান সরকারি নিয়ম তার অনুমতি দেয় না ৷ তাই প্রাথমিকভাবে ডিজেলের সঙ্গে মিশিয়ে এটিকে ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ তাতেও খরচ ও দূষণ কমবে ৷