চেন্নাই , 7 ডিসেম্বর : মহাকাশ গবেষণা দপ্তরের বাণিজ্যিক শাখা, নিউস্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড ইসরোর তৈরি মহাকাশ প্রযুক্তি কোনও ব্যক্তিকে দেবে না । এমনটাই বলা হয়েছে সংশোধিত প্রযুক্তি হস্তান্তর নীতির গাইডলাইনে ।
ডুয়াল-ইউজ় টেকনোলজি, অর্থাৎ সাধারণ ও সামরিক উভয়ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে, লাইসেন্সধারককে নিশ্চিত করতে হবে যে এধরনের প্রযুক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের নিয়ম যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে, এবং প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে ।
খসড়া নীতি অনুযায়ী, প্রযুক্তি নির্মাণের মূল্য নির্ধারণ হবে সেইটুকু ন্যূনতম খরচের ভিত্তিতে, যা প্রযুক্তি নির্মাণের কাজ শুরু না হলে ব্যয় হত না । এটাই নিউস্পেস ইন্ডিয়ার সিদ্ধান্ত, যাতে সক্রিয়ভাবে প্রযুক্তি হস্তান্তর করা যায়, এবং এর ফলে দেশের বেসরকারি ও সরকারি শিল্পক্ষেত্র মহাকাশ গবেষণার মাধ্যমে উপকৃত হবে ।
খসড়া নীতি অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি ইসরোর প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন ব্যবসা বা শিল্পস্থাপন করতে চান, তাঁর সংস্থাকে আগে আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রারড হতেই হবে ।
তবে এধরনের আবেদনে শিল্পের প্রযুক্তিগত, ব্যবস্থাপনা, পরিকাঠামো ও আর্থিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো হবে । নীতিতে আরও বলা হয়েছে, যে প্রযুক্তিকে গ্রহণ ও উৎপাদনশীল হওয়ার জন্য যথাযথ সময় দেওয়া হবে ।
সংশোধিত নীতির জন্য মহাকাশ দপ্তর 23 ডিসেম্বরের মধ্যে জনগণের মতামত চেয়েছে । দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সম্ভাব্য লাইসেন্সধারকদের বাছতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও যত্ন নেবে নিউস্পেস ইন্ডিয়া ।
কেন্দ্রের নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী, দেশীয় প্রয়োজনে প্রযুক্তি ট্রান্সফার প্রাথমিক লক্ষ্য হলেও, বিদেশি সংস্থাগুলিকেও এই ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হবে ।
সংশোধিত পলিসি নোটে বলা হয়েছে, ‘এধরনের অনুরোধ কেস-টু-কেস ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হবে এবং লাইসেন্সিংয়ের মেয়াদ নির্ণয় করা হবে সংস্থার মেধা, প্রযুক্তির বৌদ্ধিক মূল্য, তার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ইত্যাদির ভিত্তিতে ।’
আরও পড়ুন , অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য এপিক গেমসের ভারতে তৈরি ভাঙড়া বুগি কাপ
আগে থেকেই লাইসেন্সড প্রযুক্তির হস্তান্তরের ক্ষেত্রে তা লাইসেন্স ধারককেই দেওয়া হবে । নিউস্পেস ইন্ডিয়ার তরফ থেকে বিদেশি সংস্থা বা শিল্পকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে তা বিচার করা হবে, এবং এর জন্য মহাকাশ দপ্তরের মাধ্যমে বাণিজ্যমন্ত্রকের ছাড়পত্র লাগবে ।
ইসরো ও মহাকাশ দপ্তরের সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে নিউস্পেস ইন্ডিয়া সফটওয়্যার লাইসেন্সিংয়ের শর্তাবলি ঠিক করবে । ডেভেলপমেন্টের সোর্স কোডকে সরিয়ে রেখেই কেস-টু-কেস ভিত্তিতে সফটওয়্যার লাইসেন্সিংয়ের শর্তাবলি ঠিক করা হবে ।
মহাকাশ প্রযুক্তিতে অগ্রগতির লক্ষ্যে গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে । এর মধ্যে নিজস্ব প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে যৌথ কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে ।
সংশোধিত নীতিতে বলা হয়েছে, হস্তান্তরের জন্য তৈরি প্রযুক্তিগুলিকে চিহ্নিত করতে ইসরোয় একটি টেকনোলজি ট্রান্সফার সেল (টিটিসি) তৈরি হবে, যার ওপর দায়িত্ব থাকবে সংস্থার মধ্যে উদ্ভাবক, মানোন্নয়ন ও পরীক্ষক দলের পাশাপাশি সংস্থার বাইরের সম্ভাব্য লাইসেন্সপ্রাপকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, যাতে প্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে সফল বাণিজ্যিকরণ করা যায় ।
নতুন প্রযুক্তি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নিজস্ব কাঠামো থাকতে পারে, কিন্তু এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে এই নতুন প্রযুক্তি কঠোর পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যায়, যার মধ্যে কোয়ালিটি সার্টিফিকেশন, সংস্থার মধ্যেই বারবার প্রযুক্তিকে ব্যবহারের মতো বিষয়গুলি থাকবে ।
নীতি অনুযায়ী, প্রযুক্তি হস্তান্তরের সাফল্য ও ব্যর্থতার প্রভাব ইসরোর ভাবমূর্তির উপরেও পড়তে পারে । সুতরাং, হস্তান্তরযোগ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত পরীক্ষা ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে । সংশোধিত নীতিতে বলা হচ্ছে যে , মূল্যায়নে মূলত দেখতে হবে, প্রযুক্তি কতটা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ও কৌশলগতভাবে কতটা উপযোগী ।
হস্তান্তরের জন্য মহাকাশ দপ্তর যে প্রযুক্তিগুলিকে অনুমোদন দেবে, তা দুই সংস্থার অভ্যন্তরীণ মউ-এর ভিত্তিতে নিউস্পেসের কাছে পৌঁছাবে ।
আরও পড়ুন , কোনও সম্পর্কে মহিলাদের প্রতারণার চারটি প্রধান কারণ
তারপর নিউস্পেস ইন্ডিয়া ইসরোর টেকনিক্যাল সাপোর্ট সহ লাইসেন্সধারককে দেবে, পাশাপাশি তা নিশ্চিত করতে শিল্পকে প্রশিক্ষণ দেওয়ারও ব্যবস্থা হবে । এনএসআইএল কম্পানির নির্দেশিকা অনুযায়ী , লাইসেন্স ফি ও অন্যান্য মূল্য নির্ধারণ করবে নিউস্পেস ইন্ডিয়া ।
ইসরোর তত্ত্বাবধানে তৈরি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, প্রথম প্রত্যাখ্যানের অধিকার দেওয়া হবে মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বাণিজ্যিক সহযোগীকে ।
স্টার্ট-আপ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সুযোগের ক্ষেত্রে মহাকাশ দপ্তর হয় নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে, অথবা ইসরোর মাধ্যমে উৎসাহ দেওয়া হবে ।
অ-সরকারি সংস্থা (এনজিও), অ-লাভজনক সংস্থা (এনপিও) ও সামাজিক সংস্থা (সিবিও)গুলিকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে মহাকাশ দপ্তরকে কোনও ফি দিতে হবে না নিউস্পেস ইন্ডিয়াকে । লাইসেন্সিং ফি বা রয়্যালটিতে পর্যাপ্ত ছাড়-সহ নিউস্পেস ইন্ডিয়া এধরনের সংস্থাকে প্রযুক্তি দেবে ।
কিন্তু নিউস্পেস ইন্ডিয়া প্রযুক্তিকে সফলভাবে প্রয়োগ করার জন্য নিজের তরফ থেকে কোনও খরচ বা বিনিয়োগ না-ও করতে পারে ।