নয়াদিল্লি, 7 জুলাই : বছর দুয়েক আগে ক্ষমতায় আসার সময় ন্যূনতম মন্ত্রী নিয়ে সরকার চালানোর কথা বলেছিলেন । কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার সময়ই সেই নীতি থেকে সরে এলেন প্রধানমন্ত্রী । মন্ত্রিসভার বহুল সম্প্রসারণ করলেন । পাশাপাশি বাংলার দুই মন্ত্রীকে সরিয়ে নতুন চার মুখকে নিয়ে এলেন ক্ষমতায় । যা দেখে তৃণমূলের কটাক্ষ, হবুচন্দ্র রাজার রাজত্ব চলছে । কে মন্ত্রী হচ্ছেন, কে যাচ্ছেন, কে আসছেন ... তা নিয়ে আলোচনার ভাবনা চিন্তা করার সময়, অবকাশ কিছুই নেই ।
তবে আজকের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সবথেকে বড় পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে অমিত শাহর হাত আরও শক্ত করা । প্রথম থেকেই ক্ষুদ্র শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল মোদির মুখে । এবার সেই সহযোগিতা মন্ত্রককে শক্তিশালী করে কার্যত সমবায় এবং ক্ষুদ্র শিল্পের উপর গুরুত্ব আরোপের চেষ্টা লক্ষ্য করা গেল । আর এই সহযোগিতার পুরো দায়িত্বটা দেওয়া হল অমিত শাহকে । পাশাপাশি করোনাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রক নিয়ে যে অভিযোগ শোনা গিয়েছিল, তার প্রেক্ষিতেই সম্ভবত সরানো হল হর্ষ বর্ধনকে । এই মন্ত্রকের দায়িত্ব পেলেন মনসুখ মাণ্ডব্য । পাশাপাশি নতুন রেলমন্ত্রী হচ্ছেন অশ্বিনী বৈষ্ণব । শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হল মোদির অন্যতম কাছের ধর্মেন্দ্র প্রধানকে । এই মন্ত্রকেরই রাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে বাংলার সুভাষ সরকারকে ।
আরও পড়ুন : করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার দায়েই সরতে হল হর্ষ বর্ধনকে ?
তরুণ অনুরাগ ঠাকুরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক এবং ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রকের । আর কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে । যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা । অনুরাগ ঠাকুরকে দিয়ে কেন্দ্রের প্রতি তরুণ ব্রিগেডকে টানা । আবার নিশীথ প্রামাণিককে সামনে রেখে বাংলার যুব সম্প্রদায়ের মনে পদ্ম ফোটানোর চেষ্টা ।
মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে ফুল ফোটানোর চেষ্টার পুরস্কার পেলেন শান্তনু ঠাকুর । জাহাজ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন তিনি । বাংলায় পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলে স্পটলাইটে উঠে আসা জন বার্লাকে সংখ্যালঘু মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী করা হল । যেন বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হল গোর্খাল্যান্ডকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাঁদের কাছে ।
আরও পড়ুন : মতুয়া ভোটে কর্তৃত্বই কি শান্তনুর মন্ত্রিত্বের চাবিকাঠি ?
হরদীপ সিং পুরিকে সরিয়ে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হল জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে । মোদি ঘনিষ্ঠ পীয়ূষ গোয়েলকে রেল মন্ত্রক থেকে সরিয়ে বাণিজ্য, টেক্সটাইল, উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্বে আনা হল । পীয়ূষের ছেড়ে যাওয়া রেল মন্ত্রক পেলেন অশ্বিনী বৈষ্ণব । ওড়িশা থেকে রাজ্যসভার সদস্য তথা 1994 সালের আইএএস অশ্বিনী বৈষ্ণবকে সামনে রেখে রেলের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী । শিশু ও নারী কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে স্মৃতি ইরানির হাতে ।
তবে বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরীর মতো বাংলায় বিজেপিকে পথ দেখানো দুই মুখ সরে যাওয়ায় ক্ষোভও জমা হয়েছে স্থানীয় স্তরে । যেভাবে এই দুজনকে সরিয়ে দেওয়া হল তাতে খেদোক্তি শোনা গিয়েছে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীর গলায় । দলের রাজ্যসভার সদস্য সুখেন্দুশেখর রায়ের স্পষ্ট মন্তব্য, এই সরকারের কে মন্ত্রী হচ্ছে, কে মন্ত্রী হচ্ছে না... তা নিয়ে ভাবিত নয় কেউই । যোগ্যতা, দক্ষতা এখানে কোনও গুরুত্বই পায় না ।
আরও পড়ুন : কোন ভুলে মন্ত্রিত্ব খোয়ালেন বাবুল-দেবশ্রী ?