নয়াদিল্লি, 11 জুলাই : নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ । 43 জন মন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি ভবনে । কেন্দ্রের নতুন মন্ত্রিসভায় মোদিকে নিয়ে মোট 78 জন মন্ত্রী রয়েছেন । তাঁদের মধ্যে 11 জন রয়েছেন মহিলা । যা মোট মন্ত্রী সংখ্যার 14 শতাংশ । এছাড়াও রয়েছে আরও বেশ কিছু মজাদার তথ্য । শিক্ষাগত যোগ্যতা কোন মন্ত্রীর সবথেকে বেশি ? কোন মন্ত্রী টাকার কুমির ? কার বিরুদ্ধেই বা রয়েছে অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ ?
সম্প্রতি এডিআর (Association for Democratic Reforms) একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে । তাতে দেখা যাচ্ছে 33 জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে । যা কিনা মোট মন্ত্রী সংখ্যার 42 শতাংশ । তাঁদের মধ্যে 24 জনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে । শতাংশের নিরীখে যা মোট মন্ত্রী সংখ্যার 31 শতাংশ । গুরুতর অভিযোগ বলতে খুন, খুনের চেষ্টা এবং ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত থাকার মামলাও রয়েছে ।
এ তো গেল অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ । এবার আসা যাক, কে কত বড় টাকার কুমির । রিপোর্ট বলছে, মোট 78 জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মধ্যে 70 জনই কোটিপতি । অর্থাৎ প্রায় 90 শতাংশ । এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই টিপ্পনি করতে শুরু করেছেন । কোটিপতি হলে কি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা করার পথ খুলে যায় ? নাকি মন্ত্রিসভায় জায়গা হলেই ...
সে যেমনভাবেই হোক, মোদির মন্ত্রিসভার সদস্যদের ভুরি ভুরি সম্পত্তি যে রয়েছে, তা বোঝা গেল । কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠিতে মোদির মন্ত্রিসভাকে কত নম্বর দেওয়া যায় ? রিপোর্ট বলছে, 12 জন মন্ত্রী (15 শতাংশ) এমন রয়েছেন, যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম পাশ থেকে দ্বাদশ পাশের মধ্যে । স্নাতক স্তরের ডিগ্রি বা তার বেশি কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছেন 64 জন মন্ত্রীর (82 শতাংশ) ।
মন্ত্রিসভার রদবদলের আগে শোনা যাচ্ছিল, মোদির নতুন ক্যাবিনেটের সদস্যদের বেশিরভাগই হবেন তরুণ প্রজন্মের । কিন্তু রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, 78 জন মন্ত্রীর মধ্যে 31 বছর থেকে 50 বছর বয়সের মধ্যে রয়েছেন মাত্র 22 জন । যা কিনা মোট মন্ত্রী সংখ্যার 28 শতাংশ । আর 51 বছর থেকে 70 বছর বয়সের রয়েছেন 56 জন মন্ত্রী (72 শতাংশ ) । অর্থাৎ মোদির নতুন মন্ত্রিসভাতেও পক্ককেশীদেরই ভিড় । (এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাওয়া গিয়েছে, নির্বাচনের সময় নেতাদের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে )
মোদির মন্ত্রিসভায় সবথেকে বেশি অপরাধের অভিযোগ
এডিআরের রিপোর্ট অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারের মোট 33 জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে । সবথেকে বেশি অভিযোগ রয়েছে যে চারজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে, তাঁরা প্রত্যেকেই বিজেপির সাংসদ । প্রথমেই রয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা । তাঁর বিরুদ্ধে মোট 9 টি মামলা রয়েছে । জন বার্লার পরেই রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের আরও এক বিজেপি সাংসদ । কোচবিহারের নিশীথ প্রামাণিক । খুনের মামলাও (ভারতীয় দণ্ডবিধির 302 ধারা) রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে । ভাবা যায় ! স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যিনি রাষ্ট্রমন্ত্রী, তাঁর বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ ।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় টাকার কুমির
মোদির বর্তমান মন্ত্রিসভায় 90 শতাংশ মন্ত্রীই কোটিপতি । মন্ত্রীদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ 16 কোটি 24 লাখ টাকা । সবথেকে ধনী ? কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে এসে মন্ত্রিত্বের পুরস্কার পাওয়া জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এই মুহূর্তে মোদির মন্ত্রিসভার সবথেকে ধনী । জ্যোতিরাদিত্য দল বদলের পর প্রথমে রাজ্যসভার টিকিট দেয় বিজেপি । তারপর একেবারে মোদির টিমে । এককালে তাঁর বাবা যে আসনে বসতেন, এখন সেই অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন জ্যোতিরাদিত্য । অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রীর বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ 379 কোটি টাকারও বেশি । দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন পীয়ূষ গোয়েল । তাঁর পরে রয়েছেন যথাক্রমে নারায়ণ রাণে এবং রাজীব চন্দ্রশেখর ।
সবথেকে কম সম্পত্তি কার ?
সবথেকে কম সম্পত্তি রয়েছে, অর্থাৎ যাঁরা কোটিপতি নন, এমন মন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন আটজন । তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন ত্রিপুরা পশ্চিমের সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক । তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ 6 লাখ 42 হাজার 398 টাকা । অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগের পাশাপাশি এই তালিকাতেও রয়েছেন কোচবিহাররে বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক । তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন তিনি । একটুর জন্য কোটিপতির তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন । রিপোর্ট অনুযায়ী, নিশীথের মোট সম্পত্তির পরিমাণ 96 লাখ টাকার কিছু বেশি ।
কোটিপতির তালিকায় নাম নেই যে আট মন্ত্রীর
ক্রম | মন্ত্রীর নাম | রাজ্য | লোকসভা কেন্দ্র | দল | অস্থাবর সম্পত্তি (টাকা) | স্থাবর সম্পত্তি (টাকা) | মোট সম্পত্তি (টাকা) |
1. | প্রতিমা ভৌমিক | ত্রিপুরা | ত্রিপুরা পশ্চিম | বিজেপি | 2,50,398 | 3,92,000 | 6,42,398 |
2. | জন বার্লা | পশ্চিমবঙ্গ | আলিপুরদুয়ার | বিজেপি | 5,18,730 | 9,00,000 | 14,18,730 |
3. | কৈলাশ চৌধুরী | রাজস্থান | বারমের | বিজেপি | 24,02,250 | 0 | 24,02,250 |
4. | বিশ্বেশ্বর টুডু | ওড়িশা | ময়ূরভঞ্জ | বিজেপি | 17,42,000 | 10,00,000 | 27,42,000 |
5. | ভি মুরলীধরন | মহারাষ্ট্র | রাজ্যসভার সদস্য | বিজেপি | 7,71,646 | 20,00,000 | 27,71,646 |
6. | রামেশ্বর তেলি | অসম | ডিব্রুগড় | বিজেপি | 19,26,067 | 24,44,000 | 43,70,067 |
7. | শান্তনু ঠাকুর | পশ্চিমবঙ্গ | বনগাঁ | বিজেপি | 52,65,388 | 0 | 52,65,388 |
8. | নিশীথ প্রামাণিক | পশ্চিমবঙ্গ | কোচবিহার | বিজেপি | 51,29,810 | 45,00,000 | 96,29,810 |
মোদির মন্ত্রীদের পড়াশোনা কতদূর ?
78 জনের মধ্যে 12 জন মন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম পাশ থেকে দ্বাদশ পাশের মধ্যে । স্নাতক স্তরের ডিগ্রি বা তার বেশি কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছেন 64 জন মন্ত্রীর । ডিপ্লোমা রয়েছেন 2 জন । ডক্টরেট রয়েছেন 9 জন মন্ত্রী । সবথেকে কম শিক্ষাগত যোগ্যতা ? এখানেও তালিকায় রয়েছেন বাংলার থেকে জায়গা পাওয়া দুই মন্ত্রী । মোদির মন্ত্রিসভায় সবথেকে কম শিক্ষিত জন বার্লা ও নিশীথ প্রামাণিক । দু'জনেই অষ্টম পাশ । তবে এস জয়শঙ্কর, রাজীব চন্দ্রশেখর, সঞ্জীব বাল্যানের মতো মন্ত্রীরাও রয়েছে যাঁরা ডক্টরেট করেছেন ।
মোদির টিমে সবথেকে তরুণ মুখ
নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে লাফালাফি প্রচুর হয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদলের আগে । কিন্তু পরে দেখা গেল, পক্ককেশীদের ভিড়ই বেশি । 31 বছর থেকে 50 বছর বয়সের মধ্যে রয়েছেন মাত্র 22 জন । মন্ত্রিসভার বর্তমান সদস্যদের মধ্যে সবথেকে কমবয়সি নিশীথ প্রামাণিক । 35 বছর বয়সি নিশীথ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী । সঙ্গে ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রকেরও রাষ্ট্রমন্ত্রী তিনিই । এরপরেই রয়েছেন 38 বছর বয়সি বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর । তালিকায় রয়েছেন 40 বছর বয়সি উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের সাংসদ অনুপ্রিয়া প্যাটেল, 42 বছর বয়সি মহরাষ্ট্রের ডিন্ডোরি কেন্দ্রের সাংসদ ভারতী প্রবীণ পাওয়ার । এছাড়া 46 বছর বয়সি অনুরাগ ঠাকুরও রয়েছেন তালিকায় । তিনি বর্তমানে ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রকের পাশাপাশি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকেরও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ।