কলকাতা, 1 নভেম্বর: গুজরাতকে লক্ষ্য করে কেন্দ্রীয় সরকারের একটা বিজ্ঞপ্তি রাজ্য-রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তৈরি করেছে। মনে করা হচ্ছে এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘুরপথে সিএএ (Citizenship Amendment Act) লাগু করতে চাইছে কেন্দ্র। আর সেখানেই শুরু পরস্পরকে রাজনৈতিকভাবে দোষারোপের পালা।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যাতে স্পষ্ট বলা বয়েছে গুজরাতের দুই জেলা মেহসানা (Mehsana) ও আনন্দে (Anand) আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। যদিও এক্ষেত্রে অমুসলিম অর্থাৎ হিন্দু, শিখ, জৈন, খ্রিষ্টান, পার্সি, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শরণার্থীদেরই এই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে (Minorities From 3 countries living in two Gujarat districts to get citizenship)। এমনকী এই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে 2019 সিএএ-এর ভিত্তিতে নয়। তাদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে 1955 নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে গুজরাতের ওই দুই জেলার জেলাশাসকদের দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই কেন্দ্রে সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করিয়েছে। অথচ সেই আইনের বিধি এখনো প্রণয়ন হয়নি।
এবার ভোটমুখী গুজরাতে সেখানকার মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে পুরনো নাগরিকত্ব আইনকে সামনে রেখে। তাহলে কি ঘুরপথে নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার ? বিতর্ক এড়াতেই কি এভাবে নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র ? উঠছে প্রশ্ন ৷ প্রসঙ্গত কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে ভোট নির্ভর বলেই মনে করছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ শান্তনু সেন (Santanu Sen) বলেন, "গুজরাতে ভয়াবহ ব্রিজ বিপর্যয় হয়েছে। সেখানে শ'য়ে শ'য়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অথচ রাজনীতি থেকে সরে আসতে পারছে না বিজেপি। সেখানে গুজরাতের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ঘুরপথে সিএএ চালু করার চেষ্টা করছে।"
তিনি আরও বলেন, "আড়াই থেকে তিন বছর হয়ে গেল একটা বিল সংসদের উভয় কক্ষে পাশ করানোর পরেও তারা সেই আইনের বিধি প্রণয়ন করতে পারেননি। সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অসমে এক ধরনের কথা বলেন, বাংলায় এসে অন্য কথা বলেন। নির্বাচনের মুখে এসে আবার তারা ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমাদের দলনেত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যারা ভারতবর্ষে বসবাস করেন, যাদের ভোটার কার্ড আছে, যারা ভোট দিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নির্বাচিত করেন তারা সকলেই এই দেশের নাগরিক। সেই অবস্থান থেকে সরে যায়নি তৃণমূল কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার।"
বিজেপির এই পদক্ষেপকে কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন প্রাক্তন বাম পরিষদীয় দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty)। তিনি বলেন, "এটা বিজেপির রাজনৈতিক প্রজেক্ট। এমনিতে গুজরাতের নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মহা দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। আর সে কারণেই নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা পিছিয়ে দিয়ে প্রতিদিন সরকারি প্রকল্প ঘোষণা করছেন। এই যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে তাতে একদিকে যেমন কিছু উদ্বাস্তু ভোট তাদের ঝুলিতে আসবে, একইভাবে এর মাধ্যমে বিজেপির রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা পূর্ণ হবে।" সুজন আরও বলেন, "এই সিদ্ধান্ত সংবিধান-বিরোধী, তবে এর মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম তাস খেলতে চাইছে বিজেপি। সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "মোরবির ঘটনার পরেও কোনওভাবে শিক্ষা হয়নি বিজেপি'র। জাত পাতের খেলায় মেতে রয়েছে তারা।" তাঁর বক্তব্য অনুসারে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরাসরি সিএএ লাগু না-করেও 1955-র আইন ধরে নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টা হল। আর এই সিদ্ধান্ত সরকারের অপদার্থতাকেই স্পষ্ট করছে।
আরও পড়ুন: ভোটমুখী গুজরাতে সংখ্যালঘু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব ! সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের
অন্যদিকে বিজেপি নেতা তথা দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "অতীতেও রাজস্থানে পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে সিএএ লাগু হলে সকলেই নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। অনেকেই বন্ধ রেখেছেন, বিরোধিতা করেছেন, গাড়ি পুড়িয়েছেন তাই হচ্ছে না। রাজ্য সরকার সহযোগিতা করলে সিএএ লাগু হয়ে যাবে। দেশটাকে ধর্মের নামে ভাগ কারা করেছেন! সিপিএম-তৃণমূল-কংগ্রেসের পূর্বপুরুষেরা করেছেন। তার ফলে এত কোটি কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন। সেই সমস্ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত বিজেপি করছে। এবং আইনানুগ উদ্বাস্তু মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছেন।"