নয়াদিল্লি, 26 অগস্ট : অন্যান্য বিষয়ে বিরোধিতা করলেও আফগানিস্তান (Afghanistan) ইস্যুতে কেন্দ্রের মোদি সরকারকে সবরকম সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Mamta Banerjee) ৷ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোর তরফে ৷ প্রসঙ্গত, আফগানিস্তান নিয়ে ভারতের অবস্থান কী, কীভাবে সেখান থেকে ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনা হবে, আগামী দিনে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই বা কেমন হবে, সেই সবকিছু নিয়ে আলোচনা করতেই এদিন সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছিল ৷ তাতে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ মোট 26টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা যোগদান করেন ৷ এদিনের বৈঠকে কেন্দ্রের তরফে উপস্থিত ছিলেন বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S. Jaishankar) ৷ তিনি জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে প্রত্যেক ভারতীয়কেই উদ্ধার করে আনা হবে ৷ এই বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর ৷
আরও পড়ুন : Afghanistan : আফগানিস্তান থেকে বাড়ি ফিরলেন গোপালনগরের তিন যুবক, খুশির হাওয়া পরিবারে
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আফগানিস্তান ইস্যুতে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন তৃণমূলের দুই প্রবীণ নেতা সাংসদ সৌগত রায় (Saugato Roy) ও সুখেন্দুশেখর রায় (Sukhendu Sekhar Roy) ৷ তাঁরা জানান, জাতীয় স্বার্থ সবকিছুর ঊর্ধ্বে ৷ তাই আফগানিস্তান নিয়ে ভারত সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাকে সমর্থন করবে তৃণমূল ৷ দলনেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ও ইতিমধ্যেই সেকথা জানিয়ে দিয়েছেন ৷
এদিনের সর্বদলীয় বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেস বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরে ৷ দলের তরফে জানতে চাওয়া হয়, আফগানিস্তানে আটকে পড়া ভারতীয়দের কীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে, আরও কতজন সেখানে আটকে রয়েছেন ইত্যাদি ৷ একইসঙ্গে জানানো হয়, এখনও সেদেশে বাংলার 125 জন বাসিন্দা আটকে রয়েছেন ৷ তাঁদের যাতে অবিলম্বে উদ্ধার করা হয়, কেন্দ্রের কাছে সেই আবেদন করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ৷
আমেরিকার হস্তক্ষেপে তালিবান জমানার অবসানের পর থেকে সদ্য তালিবানের পুনরুত্থানের আগে পর্যন্ত মধ্য এশিয়ার এই দেশে মোটা টাকা বিনিয়োগ করেছে ভারত ৷ ভারতের টাকায় বহু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে সেখানে ৷ সেই সব প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে, কেন্দ্রের কাছে তাও জানতে চান তৃণমূলের প্রতিনিধিরা ৷
আফগানিস্তানে তালিবানের পুনরুত্থানের ফলে কি মধ্য এশিয়ায় ভারতের ভিত একটু নড়বড়ে হয় গেল ? কেন্দ্রের কাছে সেকথাও জানতে চান তৃণমূলের নেতারা ৷ জবাবে কেন্দ্রের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই ৷ কারণ, বাকি সমস্ত দেশের সঙ্গে ভারতের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে ৷ বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের ভালই সম্পর্ক রয়েছে ৷ তাছাড়া, আফগানিস্তানের জন্য 24 ঘণ্টার হেল্প লাইনও চালু করেছে ভারত সরকার ৷
আরও পড়ুন : Dry Fruits Price: কাবুল থেকে আমদানি বন্ধ, আকাশছোঁয়া দাম ড্রাই ফ্রুটস-পোস্তর
আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক আগেও ছিল, এখনও আছে ৷ ভবিষ্যতেও এই ধারা বজায় থাকবে বলেই আশাবাদী কেন্দ্র ৷ তবে তালিবান সরকার গঠিত হলে সেই সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিকস্তরে সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে কিনা, তা এখনই বলা সম্ভব নয় ৷ সব দেশই এক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে এগোচ্ছে ৷ ভারতও তার ব্যতিক্রম নয় ৷
আফগানিস্তানে তালিবানের পুনরুত্থানে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও শোনা গিয়েছে নানা মহলে ৷ সেই সম্ভাবনা কতটা, এদিনের সর্বদলীয় বৈঠকে সেকথাও কেন্দ্রের কাছে জানতে চাওয়া হয় ৷ নয়াদিল্লির আশ্বাস, বিষয়টিকে মোটেই হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে না ৷ সরকার সতর্ক রয়েছে ৷ কয়েকটি দলের তরফে এদিনের বৈঠকে সিএএ প্রসঙ্গ তোলা হলেও সরকার পক্ষ আপাতত এ নিয়ে কোনও আলোচনা করতে রাজি হয়নি ৷ বৈঠকে কয়েকটি দলের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এবার হয়তো আফগানিস্তানকেই ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করবে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা ৷ এই সম্ভাবনা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে সরকার পক্ষ ৷ এদিন প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সর্বদলীয় বৈঠক হয় ৷