নয়াদিল্লি, 23 জুলাই : সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন মনোনীত হলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ৷ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে আয়োজিত দলের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে ৷ শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানান দলের দুই সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন (Derek O'Brien) এবং সুখেন্দুশেখর রায় (Sukhendu Sekhar Roy) ৷ দুই তৃণমূল নেতারই দাবি, মমতার বিপুল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেই নাকি এমন পদক্ষেপ ! মানতে নারাজ ওয়াকিবহাল মহল ৷ তাদের হিসাব বলছে, এসবই আসলে যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি ৷ কেন্দ্রের মোদির সরকারকে উৎখাত করতে মমতা ও তাঁর দল যে কোনও খামতি রাখতে নারাজ, তৃণমূলের এই সিদ্ধান্তই তার প্রমাণ ৷
বাংলা জয়ে হ্য়াট্রিক সেরে লক্ষ্য এখন নয়াদিল্লি ৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ‘মিশন মোদি হঠাও’ এখন আর কারও অজানা নয় ৷ একুশের বিধানসভা ভোটের প্রচারমঞ্চ থেকে হালের একুশে জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সভা, সর্বত্রই নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা খোলসা করে দিয়েছেন মমতা ৷ এখন তাঁর মন্ত্র একটাই ৷ ‘মোদি হঠাও, দেশ বাঁচাও ৷’ এই স্লোগান যে শুধুই কথার কথা নয়, তার প্রমাণ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলী ৷
আরও পড়ুন : লক্ষ্য 24’র লোকসভা, বড় জেলাকে ভেঙে সাংগঠনিক জেলা গঠনের সিদ্ধান্ত তৃণমূলের
10 বছর আগে যে মমতা প্রথমবারের জন্য বাংলার মসনদে বসেছিলেন, তাঁর সঙ্গে আজকের মুখ্যমন্ত্রীর বিস্তর ফারাক ৷ এখন তিনি অনেক বেশি পরিণত ৷ একুশের বিধানসভা ভোটে জয়, তাঁর সেই পরিণত রাজনৈতিক সত্ত্বাকে আরও মজবুত করেছে ৷ জাতীয় প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব বেড়েছে ‘বাংলার নিজের মেয়ে’র ৷ বস্তুত, এই মুহূর্তের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) প্রতিপক্ষ বললে সবার আগে যে নামটি আলোচনায় আসে, সেটি অবশ্যই মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷
মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার ক্ষমতা ধরে রাখলেও এবার তাঁর ‘পাখির চোখ’ দিল্লির কুর্সি ৷ মমতা নিজে কখনও নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার বলে প্রকাশ্যে উল্লেখ না করলেও তাঁর অতি বড় বিরোধীও এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারবে না ৷ বস্তুত, গত কয়েক মাসে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ভাইপো তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Abhishek Banerjee) যে উত্তরণ ধরা পড়েছে, তাও যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ ৷ ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ধারণা, অভিষেকের হাতে বাংলার দায়িত্ব অনেকটাই ছেড়ে দিতে চাইছেন মমতা ৷ বদলে তিনি মনোনিবেশ করতে চাইছেন দিল্লিতে ৷
প্রসঙ্গত, আগামী সোমবারই দিল্লি যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী ৷ থাকবেন বেশ কয়েক দিন ৷ ওই সময়ের মধ্যেই বিজেপিবিরোধী বিভিন্ন দলের শীর্ষস্তরের নেতানেত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর ৷ সেইসব বৈঠকে যে চব্বিশের সাধারণ নির্বাচন এবং মোদিকে হঠানোর রণকৌশল নিয়ে কথাবার্তা হবে, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন মমতা ৷ সেই সফরের ঠিক আগেই মমতাকে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন মনোনীত করা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ৷
আরও পড়ুন : Supreme Court : সুয়োমোটো করে দেশকে 'বাঁচাতে' সুপ্রিম কোর্টকে আবেদন মমতার
সুখেন্দু, ডেরেকরা বলছেন, মমতা সাতবারের সাংসদ ৷ তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী ৷ কেন্দ্রেও মন্ত্রিত্ব করার লম্বা অভিজ্ঞতা রয়েছে ৷ তাঁর দেখানো পথ ধরেই এত দিন কাজ করেছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা ৷ এবার মমতার সেই অভিভাবকত্বকেই ‘‘আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি’’ দেওয়া হল মাত্র ৷ যাতে নেত্রীর ছত্রছায়ায় আরও সহজ ও সাবলীলভাবে কাজ করা যায় ৷
প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি তাই ? মানতে নারাজ রাজনীতির কারবারিরা ৷ তাঁদের সাফ কথা, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় প্রকাশ্যেই নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ৷ এবার সেই ঘোষণা কার্যকর করার সময় এসেছে ৷ একুশে জুলাইয়ের সভামঞ্চে মমতা আগেই বলেছেন, চব্বিশের লড়াইয়ে বিজেপিকে পরাস্ত করতে হলে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখন থেকেই ৷ ভোটের সময় নাম কা ওয়াস্তে জোট করে কোনও লাভ হবে না ৷ তাঁর এই অবস্থানে মমতা যে অত্যন্ত সিরিয়াস, সেটা বোঝাতেই তৃণমূল নেত্রীকে এবার সংসদীয় কমিটিরও চেয়ারপার্সন পদে আনল তাঁর দল ৷ অর্থাৎ, দিল্লি দখলের লড়াইয়ে পর্দার আড়াল থেকে সুতোয় টান দেবেন না মমতা ৷ তিনি লড়বেন নেতার মতো, সামনে দাঁড়িয়ে ৷ সেক্ষেত্রে বাংলার শাসনক্ষমতা কোনও অন্তরায় হবে না ৷