শিলং, 13 ডিসেম্বর: দিল্লি বা গুয়াহাটির লোকেরা নয়, মেঘালয় শাসন করবেন মেঘালয়ের ভূমিপুত্ররাই । মঙ্গলবার শিলংয়ে দলীয় কর্মী সম্মেলন থেকে এই বার্তাই দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
তৃণমূল মেঘালয়ে সংগঠন তৈরির পর প্রথমবারের জন্য সোমবারই এই রাজ্যে পা দিলেন তৃণমূল নেত্রী (Mamata Banerjee in meghalaya) ৷ তাঁর সঙ্গে গিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ মঙ্গলবার ছিল কর্মী সম্মেলন। এই কর্মী সম্মেলন থেকে মমতা বলেন, "গুয়াহাটি থেকে মেঘালয় শাসন করা যাবে না। কেন উত্তর-পূর্বকে এত অবহেলা করা হচ্ছে? মেঘালয়ের মানুষই মেঘালয় চালাবে । আমাদের নির্বাচিত করলে, কলকাতা থেকে মেঘালয় শাসন করা হবে না। এখানকার ভূমিপুত্রই মেঘালয় শাসন করবে ।"
এদিন মমতার বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়েই ছিল উন্নয়নের বার্তা । তবে এদিন বিজেপি'কেও আক্রমণ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো (Mamata Banerjee attacks BJP from Meghalaya) ৷ তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মেঘালয় ও উত্তর-পূর্বের অন্যান্য রাজ্যকে অবহেলা করছে ৷ তৃণমূল মেঘালয়ে ক্ষমতায় এলে এখানে আসল পরিবর্তন হবে বলেও দাবি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি আরও বলেন,"ভোটের ঠিক আগে বিজেপি নেতারা মেঘালয়ে আসবেন এবং অনেক গল্প করবেন । বলবেন, লাভ ইউ, আমরা সব করে দেব..কিন্তু ভোটের আগে এটা কেন নয়? বিজেপিকে জিজ্ঞাসা করছি, কেন মেঘালয়কে উপেক্ষা করা হয়? কেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে উপেক্ষা করা হয়?"
আরও পড়ুন: গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখে ফের সরগরম পাহাড়ের রাজনীতি
এদিন মেঘালয়ের মাটি থেকে বাংলার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আদলে একটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC in Meghalaya) । বলা হয়েছে এই রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে 'উইকার্ড' নামক এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক বাড়িতে মহিলাদের এক হাজার টাকা করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেবে রাজ্য সরকার ।
এদিনের বক্তব্যে কলকাতার সঙ্গে মেঘালয়ের আবেগ সংযুক্ত করে মমতা বলেন, "এই রাজ্য থেকে দিল্লির তুলনায় কলকাতা কাছে । কলকাতা নর্থইস্টের গেটওয়ে । বাইরে থেকে কেউ কলকাতায় এলে বলে খুব সুন্দর । আমি এরকম মেঘালয়কেও করতে চাই । ক্ষমতা দখল করার আমার লক্ষ্য নয় । আমি কলকাতা থেকে মেঘালয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না । আমি চাই, কেবল এখানকার মানুষই মেঘালয় পরিচালনা করুক । আপনাদের ভাই হিসাবে অভিষেক সহযোগিতা করবে । আমি এখানে আরও শিল্প করতে চাই, আমাদের রাজ্যে অনেক শিল্পপতি আছে, তাদের বলব এখানে বিনিয়োগ করুন ।"
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মেঘালয়ে দাঁড়িয়ে সে রাজ্যের সরকারেরও কড়া সমালোচনা করেছেন (Mamata attacks Meghalaya Govt on development issue) ৷ তিনি বলেন, "এখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য কোনও সুবিধা নেই । আমাদের রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী রয়েছে । বিনামূল্যে চিকিত্সা পাওয়া যায় । এখানে মাত্র 1টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ৷ আমাদের রাজ্যে 33টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল করেছি । মেঘালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু করা হয়নি । আমাদের রাজ্যে সরকারি স্কুলে সকলে বিনামূল্যে শিক্ষা পায় । শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী রয়েছে ।"
আরও পড়ুন: তাওয়াং সেক্টরে ভারত-চিন সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটেনি, লোকসভায় বিবৃতি রাজনাথের
এদিন মেঘালয়ের মানুষের কাছে ভোট চেয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "আমি চাই মেঘালয়ের মানুষের মুখে সর্বদা হাসি মুখে থাকুক । আমি আশ্বাস দিচ্ছি এই হাসি সর্বদা থাকবে । পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে, আমি চাই মেঘালয়েও সেভাবে উন্নতি হোক । শ্রমিক-ছাত্রছাত্রীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে মেঘালয়ে তৃণমূল কাজ করবে । আমি মনে করি তৃণমূল জিতলে এখানে সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে । কারণ তৃণমূল মানেই ভবিষ্যৎ । তৃণমূল মানেই উন্নয়ন ।"
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন গোয়ায় তাঁর দল যে বিধানসভা নির্বাচনে ভালো করতে পারেনি তার একমাত্র কারণ নেতৃত্বের অভাব । কিন্তু মেঘালয়ে তেমনটি হবে না । কারণ এখানে মুকুল সাংমার মতো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দলে রয়েছেন । তিনি বলেন, "গোয়াতে আমাদের সংগঠন সেভাবে মজবুত করা সম্ভব হয়নি কারণ সেখানে আমাদের কোনও নেতৃত্ব ছিল না । কিন্তু, এখানে তা হবে না । একইসঙ্গে অভিষেকও এখানে প্রায়ই আসবে ।"
মেঘালয়ে তৃণমূল যে বহিরাগত নয় তা বোঝাতে তৃণমূলনেত্রী বলেন,"তৃণমূল শুধু বাংলার পার্টি নয় । তৃণমূল এখন সর্বভারতীয় দল । আমরা বহিরাগত নয় । আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকতে চাই । মেঘালয়ের মানুষের জন্য আমরা লড়াই করব ।" বিজেপি'র তৃণমূল বিরোধিতা নিয়েও এদিন মুখ খুললেন মমতা । তিনি বলেন,"আমার মনে হয়, বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসকে হিংসা করার কারণ, ভোটে (বাংলার বিধানসভা) তারা জবাব পেয়েছে । তারা নানাভাবে আমাদের আটকানোর চেষ্টা করেছে । ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে কিন্তু আমরা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছি । আমাদের পরাজিত করতে পারেনি । চলুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি, একসঙ্গে চিন্তা করি, একসঙ্গে কথা বলি ।"