কলকাতা, 3 মার্চ: বারাণসীর মাটিতে পা রেখেই বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee at Varanasi)। তখনই মনে হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ যাত্রা এবার হয়তো সুখকর হবে না তৃণমূল সুপ্রিমোর জন্য । পৌরভোটে যতই বাংলার মানুষ ঘাস ফুলের উপর আস্থা রাখুক, যোগী আদিত্যনাথ এবং নরেন্দ্র মোদির যেখানে প্রবল সমর্থন রয়েছে, সেই গো-বলয়ে মমতার জন্য রাজনীতির পথ হয়তো সুগম হবে না । কিন্তু মমতা দেখালেন তিনি অতীতের ছায়ামাত্র ।
যে জয় শ্রীরাম ধ্বনি ও কালো পতাকা দেখিয়ে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা হয়েছিল ভোটের প্রচারে তাকেই অস্ত্র করলেন মমতা (Mamata Banerjee faces protests during Varanasi visit)। বুঝিয়ে দিলেন জয় শ্রীরাম নয়, জয় সিয়ারাম । তাঁর অভিযোগ, বিজেপি সীতাকে অগ্রাহ্য করে পুরুষতান্ত্রিকতা চাপিয়ে দিতে চাইছে । অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee on UP Elections) আঘাত করার জন্য শুধুমাত্র জয় শ্রীরাম এই ধ্বনি ছিল যথেষ্ট । পরিণত মমতা এই অস্ত্রটা শুধু ভোঁতাই করলেন তাই নয়, পাল্টা চাপে ফেললেন বিজেপিকে । হয়তো গত কয়েক মাসে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় রূপান্তর ।
আগেই তৃণমূল সুপ্রিমো ঘোষণা করেছেন, 24-এর লোকসভা নির্বাচনে এই উত্তরপ্রদেশ থেকে লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস । কাজেই পরপর দুটি সফর ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গো-বলয়ে নিজের দলের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনটুকু জোগাড় করার পরিসর । আর সেই লক্ষ্যে পুরোদস্তুর সফল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । অন্তত রাজনৈতিক মহল তো সে কথাই বলছে ।
আরও পড়ুন: Mamata on UP Poll : উত্তরপ্রদেশে হারছে বিজেপি, অখিলেশকে পাশে নিয়ে বললেন মমতা
এ দিন এ প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, "বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর যোগীর রাজ্যে জনসমর্থন এখনও তেমন নেই । বিজেপি চাইলে তাঁকে উপেক্ষা করতে পারত । কিন্তু তেমনটি না-করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কালো পতাকা দেখানো অসলে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার ফসল । এখন মানুষের মনে হতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে হয়তো একটা ভীতি কাজ করছে বিজেপির ৷ আর সে কারণেই তাঁকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্যের শাসক দল । অতএব মমতাকে উপেক্ষা করার বদলে তাঁকে সংবাদের শিরোনামে নিয়ে এসেছে বিজেপি । একে কাজে লাগিয়েই 24-এর ভোটে জনসমর্থন সংগ্রহ করলেন তৃণমূল নেত্রী । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাখঢাক না-করেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আবার আসবেন । একবার নয়, বারবার আসবেন । তাঁর অভিযোগ, বিজেপি ভয় পেয়েছে ৷ ভয় থেকেই এই কাজগুলি করছে ।"
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রাজীব রায় এই সফরে বিজেপির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নৈতিক জয় দেখছেন । এমনটা বলার পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি ৷ বলেন, "এমন কয়েকটা সভা করলে যে তৃণমূল সুপ্রিমোর জন্য উত্তরপ্রদেশে ভালো মাটি তৈরি হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কারণ নেই । তবে বাংলার নেত্রীর ভাবনাচিন্তা ও বাংলার মতো সেখানেও মানুষের তাঁর প্রতি সমর্থন রয়েছে, যা ভবিষ্যতে তৃণমূল সুপ্রিমোকে বাড়তি ডিভিডেন্ড দেবে ৷"
আরও পড়ুন : Mamata In Varanasi : 'গো-ব্যাক' স্লোগান উপেক্ষা করে দশাশ্বমেধ ঘাটের সিঁড়িতে বসেই আরতি দেখলেন মমতা
যদিও এখনই উত্তরপ্রদেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও ভবিষ্যৎ দেখছেন না শিক্ষাবীদ এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন উপাচার্য অমল মুখোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "এ ধরনের কয়েকটি বড় রাজনৈতিক সভা থেকে নেতা বা নেত্রীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা যায় না । বারাণসীতে সভায় যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁরা সমাজবাদী পার্টির সমর্থক ৷ সেই জায়গা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে তাঁরা বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন ঠিকই । কিন্তু এই কয়েকটি বক্তব্য তাঁদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে । আর সে কারণেই আমি বলব এই বিষয়টি নিয়ে এখনই মাতামাতি করা উচিত নয় ।"