কলকাতা, 17 জুলাই: 29 জুন 2021-এর পর 17 জুলাই 2023 ৷ দু'বছরের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে আবার মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সোনিয়া গান্ধি। দু'জনের ব্যক্তিগত সুসম্পর্কই কি বিজেপি বিরোধী জোটের সাফল্যের ক্ষেত্রে বড় অস্ত্র হতে চলেছে? রাজনৈতিক মহলের কাছে এই মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এদিনের বৈঠকে পাশাপাশি বসেছিলেন মমতা ও সোনিয়া ৷ তাঁদের মধ্যে এদিন কী কথা হয়েছে তা জানা গেলেও, বৈঠক শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এদিন বলতে শোনা গিয়েছে, "বৈঠক ভালো হয়েছে ৷" রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, মমতা ও সোনিয়ার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভবিষ্যতে এই বিরোধী জোটকে আরও পোক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে ৷ সেক্ষেত্রে এদিনের বৈঠকে মমতা ও সোনিয়ার যোগ দেওয়া ও পাশাপাশি বসা তাৎপর্যপূর্ণ ৷ মনে করা হচ্ছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধির ব্যক্তিগত সমীকরণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে ৷
2021 বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বারংবার তাঁর একটাই বক্তব্য ছিল, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী না দিলে সাফল্য সম্ভব নয় । কিন্তু 2021 বিধানসভায় সাফল্যের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ কোথাও যেন ধাক্কা খাচ্ছিল । একদিকে সোনিয়া গান্ধির অসুস্থতা, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গোয়া, অসম, ত্রিপুরা, মণিপুরে কংগ্রেস ভাঙিয়ে দলকে শক্তিশালী করার অভিযোগ, কোথায় যেন দেশের সবথেকে পুরনো রাজনৈতিক দলের অন্দরে ক্ষোভ তৈরি করেছিল । কিন্তু তৃণমূল ও কংগ্রেসের বর্তমান উদ্যোগ ফের নতুন বার্তা দিচ্ছে ৷ কারণ এবার জোটের ভিত তৈরিতে উপস্থিত রয়েছেন খোদ সোনিয়া গান্ধি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব জোট আলোচনায় পড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
এদিন এই নিয়েই প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, এই বিষয়টিকে ঠিক হ্যাঁ বা না দিয়ে ব্যাখা করা সম্ভব নয় ৷ রাজনীতিতে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ নানা স্তর তৈরি করে দেয় ৷ তাই দুই নেত্রীর বৈঠকে বসা নতুন কিছু নয় ৷ তবে বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি, দেশের মানুষের মনকে ও বিরোধী দলগুলিকে প্রভাবিত করেছে ৷ বিবিধের মধ্যে ঐক্য, দেশের এই পরিচয়ে আঘাত আসছে ৷ তাই মতোবিরোধ থাকা সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে লড়তে সকলে একসঙ্গে শামিল হচ্ছে ৷ তবে এক মঞ্চে বসা মানে এই নয় যে এক ভাবনার অংশীদার হতে হবে ৷ তাই এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে তা ভবিষ্যৎ বলবে ৷
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার এনডিএ-র বৈঠকে থাকবে 38 দল, জানালেন জেপি নাড্ডা
রাজ্যের অপর এক কংগ্রেস নেতা তথা এআইসিসির সদস্য শুভঙ্কর সরকারকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সোনিয়া গান্ধির এক মঞ্চে আশা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় । আশা করছি এই মঞ্চ থেকে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে গঠনমূলক কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে । বিজেপিকে হারানোই প্রাথমিক লক্ষ্য । আর সেজন্যই এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই ।" তবে শুভঙ্কর সরকারের গলায় উষ্মার সুরও শোনা গিয়েছে । তিনি বলেন," আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলা মনে স্বাগত জানাচ্ছি । কিন্তু এই বৈঠক থেকে ফিরে এসে তাঁকেও রাজ্যে হিংসা বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে । তবেই আরও তাৎপর্যপূর্ণ হবে এই বৈঠক ।"
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, "জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে একটা গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নাম । সেই জায়গা থেকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন বিজেপির বিরুদ্ধে জয় পেতে গেলে একের বিরুদ্ধে এক এই নীতিতে লড়াই প্রয়োজন । আশা করব কংগ্রেস নেতৃত্ব এটা বুঝবে । আর তাই মমতা এবং সোনিয়া মুখোমুখি হওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে । বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে এই বৈঠক মাইলফলক হতে চলেছে ।