নয়াদিল্লি, 29 জানুয়ারি : ভারতবর্ষের অন্যতম গর্বের জায়গা দেশের স্থাপত্য ৷ সেগুলির মধ্যে অন্যতম নয়াদিল্লির জামা মসজিদ । শতাব্দী প্রাচীন মসজিদটির গায়ে খোদাই করা অতুলনীয় নকশার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্যও রয়েছে । ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এর গুরুত্ব এবং ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই মসজিদের অবদান অনেকেরই অজানা (Magnificient Jammi Masjid link to freedom struggle) ।
ব্রিটিশ শাসনকালে বিপ্লবী চেতনায় অবদান রাখার পাশাপাশি দেশভাগের সময়েও জামা মসজিদের অবদান যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। 1947 সালে দেশভাগের পর, বেশ কিছু মুসলিম সম্প্রদায় দেশ ছেড়ে চলে যাবেন কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিকভাবে দ্বন্ধে পড়েছিলেন ৷ সে সময়েই মৌলানা আবুল কালাম আজাদ মসজিদের প্রাঙ্গণ থেকে একটি ভাষণ দেন । ওই বক্তৃতায় তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ভারতীয় রাজনীতির গতিপথ এখন আমূল বদলে যাবে । এখানে মুসলিম লিগের কোনও স্থান নেই । আমরা এখানে ভারতীয় হিসাবে থাকব ৷ আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে, মুসলমানদের জন্য ভারতের থেকে ভাল জায়গা আর হতে পারে না ৷
শুধু আবুল কালাম আজাদই নন, বক্তৃতা দিয়েছিলেন আরেক অমুসলিম পণ্ডিতও, স্বামী শ্রদ্ধানন্দ সরস্বতী ৷ মসজিদের সিঁড়ি থেকে তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বার্তা দিয়েছিলেন । ভারতের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক সমতা তৈরির জন্য এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় ৷ কারণ, দেশভাগের সিদ্ধান্তের পর থেকেই দেশে হিন্দু-মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি নষ্ট হতে শুরু করেছিল । তাঁর বক্তৃতাটি সম্ভবত ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে দর্শনীয় বক্তৃতাগুলির মধ্যে একটি ৷ যেখানে একজন গেরুয়া-পরিহিত হিন্দু পণ্ডিত মসজিদের সিঁড়ি থেকে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের মর্মবাণী প্রচার করছিলেন । ঐতিহাসিক এই মসজিদের সিঁড়ি থেকে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের উপদেশ দিয়েছিলেন এক হিন্দু সাধক ।
আজও, জামা মসজিদ দেশের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সমান গুরুত্ব বহন করে ৷ দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র স্থান । মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সময়কালের নান্দনিকতাও এখানকার স্থাপত্যে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । পুরো মসজিদটি লাল বেলে পাথর ও সাদা মার্বেল দিয়ে নির্মিত। তিনটি মার্বেল গম্বুজের উপর কালো স্ট্রাইপগুলি দূর থেকে দেখা যায় । 260টি স্তম্ভের উপর সুউচ্চ খিলান এবং 15টি মার্বেল গম্বুজ এর অসামান্য মুঘল স্থাপত্যশৈলীর অসামান্য নিদর্শন বহন করে ।
আরও পড়ুন : অসহযোগ আন্দোলনের সন্ধিক্ষণে জন্ম, শতবর্ষ পরও বিপ্লবের প্রতীক জামিয়া মিলিয়া
মসজিদের প্রধান উপাসনালয়টি পশ্চিম দিকে অবস্থিত। দক্ষিণ দিকে মিনার কমপ্লেক্স 1,076 বর্গফুট চওড়া । 65 মিটার দীর্ঘ এবং 35 মিটার চওড়া একটি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই মসজিদটিতে একসঙ্গে 25 হাজার লোক বসতে পারে। চারটি প্রবেশদ্বার, চারটি স্তম্ভ এবং দুটি মিনার-সহ, 100 বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে একটি উঠান রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে, শাহজাহান এই মসজিদটি 10 কোটি টাকায় তৈরি করেছিলেন ৷ 5000 কারিগর এটি নির্মাণে নিযুক্ত ছিলেন।
1656 সালে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ৷ স্বাধীনতার 75তম বছরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে, জামা মসজিদকে ভারতের সাংস্কৃতিক এবং বিপ্লবের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে স্মরণ করা হচ্ছে ৷