চেন্নাই, 15 জুলাই: 'থালি' অর্থাৎ মঙ্গলসূত্র খুলে ফেলাটা স্বামীর প্রতি চরম মানসিক অত্যাচার, জানাল মাদ্রাজ হাইকোর্ট ৷ ডিভোর্সের একটি মামলার পর্যবেক্ষণে দুই বিচারপতির বেঞ্চ এই মতামত দেয় ৷ এই সংক্রান্ত একটি মামলা চলাকালীন স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকতেন ৷ সেই অবস্থায় স্ত্রী গলা থেকে মঙ্গলসূত্রটি খুলে রেখে দিয়েছিলেন ৷ এই ঘটনাকে 'চরম মানসিক নির্যাতন' বলে আখ্যা দিয়েছেন দুই বিচারপতি ৷ যদিও এই মামলায় ডিভোর্স পেয়েছেন স্বামী (Madras High Court observes removal of Mangalsutra by wife is mental cruelty to husband) ৷
তামিলনাড়ুর ইরোডে একটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক সি শিবাকুমার, বিচারপতি ভিএম ভেলুমানি এবং এস সাউনথারের এজলাসে ডিভোর্সের আবেদন জানান ৷ 2016-য় স্থানীয় পারিবারিক আদালতে ডিভোর্স চেয়ে পিটিশন দায়ের করেছিলেন ওই অধ্যাপক ৷ ওই বছর 15 জুন আদালত তা খারিজ করে দেয় ৷ এরপর সি শিবাকুমার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ৷
মঙ্গলসূত্র প্রসঙ্গে তাঁর স্ত্রী জানান যে, আলাদা থাকার সময় তিনি তাঁর 'থালি' অর্থাৎ মঙ্গলসূত্রটি খুলে রেখে দিয়েছিলেন ৷ হিন্দু বিয়েতে মঙ্গলসূত্রকে বিয়ের পবিত্র প্রতীক হিসেবে মানা হয় ৷ তামিলনাড়ুতে একটি চেনের সঙ্গে লকেট যুক্ত থাকে ৷ এই মঙ্গলসূত্রকে 'থালি' বলা হয় ৷ স্ত্রীর যুক্তি ছিল, তিনি শুধুমাত্র চেনটাকে খুলে রেখেছিলেন ৷ তাঁর আইনজীবী হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট-এর 7 নং ধারার উল্লেখ করে আদালতে জানান, থালি পরা বাধ্যতামূলক নয় ৷ তাই স্ত্রী তা খুলে ফেলতেই পারেন ৷ আর তাঁর মক্কেল যদি সত্যি সত্যি তা না-পরে থাকেন তাহলেও বিয়ের সম্পর্কে আলাদা কোনও প্রভাব পড়বে না ৷
আরও পড়ুন: মঙ্গলসূত্রের বিজ্ঞাপনে বিতর্ক, সব্যসাচীকে নোটিস বিজেপির আইনি উপদেষ্টার
বেঞ্চ জানায়, বিশ্বের এই অংশে বিয়ের আচার-অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রথা এই থালি পরা ৷ এটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার, যা সবাই জানে ৷ আদালত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ তুলে মনে করিয়ে দেয়, "রেকর্ডে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, মামলাকারী থালি খুলে ফেলেছেন এবং তা ব্যাঙ্কের লকারে রেখে দিয়েছেন ৷ এটা সর্বজনবিদিত যে, স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় কোনও হিন্দু মহিলা তাঁর থালি খুলতে পারেন না ৷" দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলে, "কোনও মহিলার গলায় পবিত্র থালি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকার পরিচয় ৷ মামলাকারী অথবা স্ত্রী এটা খুলে ফেললে, সেটা মানসিক নির্যাতনের চরম পর্যায় ৷ এতে অন্যপক্ষ আঘাত পেতে পারেন ৷ আমরা বলছি না যে থালি খুলে ফেললেই বিয়ের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় ৷ কিন্তু স্ত্রীর এই কাজটি একটি প্রমাণস্বরূপ ৷ দম্পতি আলাদা থাকার সময় স্ত্রী থালি পরে না থাকায় আমরা একটি নির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছতে পারি ৷ বুঝতে পারি যে, দু'জন আর একসঙ্গে থাকতে আগ্রহী নয় এবং সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে নারাজ ৷ "
2011 থেকে এই দম্পতি আলাদা থাকছিলেন ৷ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এক-সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছিল ৷ তার সাক্ষী অন্য সহ-কর্মীরা, পড়ুয়া এমনকী পুলিশও ৷ তবে এখানে স্ত্রী মঙ্গলসূত্র খুলে রাখায় বিচারপতিদের মনে হয়েছে স্ত্রী স্বামীর কাছে ফিরতে চান না ৷ তাছাড়া এতে তিনি স্বামীর প্রতি চরম মানসিক অত্যাচার করেছেন ৷
আরও পড়ুন: 'সাইলেন্স...', ডিভোর্স নোটিস নিয়ে কী বললেন নুসরত ?