নয়াদিল্লি, 16 সেপ্টেম্বর: প্রথমে পরিচয়। তারপর প্রেম। আরও পরে ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম তরুণীকে বিয়ে করেন হিন্দু যুবক। সূত্রের দাবি, বিয়ের আগে তরুণী পেশায় ছিলেন যৌনকর্মী । বাড়ির অমতে বিয়ে করায় লাগাতার তরুণীর পরিবারের সদস্যদের হুমকির মুখেও পড়তে হয় স্বামী এবং স্ত্রীকে। সুরক্ষা চেয়ে রাজস্থান হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন দু'জন। আদালত সুরক্ষা দেয়। তবে সুখের সেই মুহূর্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আদালতের সুরক্ষা পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই বিয়ে ভাঙে। পরে প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। আরও দাবি করেন, প্রাক্তন স্বামী জোর করে দেহ ব্যবসায় নামিয়েছিলেন। গ্রেফতার হন যুবক। রাজস্থান হাইকোর্ট জামিনের আবেদন খারিজ করলে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। অবশেষে জামিন মিলল। পাশাপাশি, আদালত জানাল আপাতত যুবককে আর গ্রেফতার করাও যাবে না। তবে তাঁকে তদন্তে সবরকমের সাহায্য করতে হবে।
ঘটনার সূত্রপাত 2019 সালে। 29 বছর বয়সি পারস ওই তরুণীর প্রেমে পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ৷ নতুন নাম হয় পারভেজ। পরে তাঁদের বিয়ে হয়। তরুণীর বাবা-মা সম্পর্ক মেনে নেন না ৷ তাঁদের হুমকি দিতে থাকেন ৷ সেই কারণে সুরক্ষা চেয়ে ওই বছরের এপ্রিলে রাজস্থান হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামী ও স্ত্রী ৷ কোর্টও তাঁদের রক্ষাকবচ দেয় ৷ এত কিছু পরও ভালোবাসার এই সম্পর্কে 'মধুরেণ সমাপয়েৎ' হল না ৷ মাস চারেকের মধ্যে সম্পর্ক ভাঙল ৷ 2019 সালের জুলাই মাসে মেয়েটির সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় যুবকের ৷
এরপরের ঘটনাক্রম আরও অবাক করে দেওয়ার মতো। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন তরুণী ৷ অভিযোগ, যুবকই তাঁকে এই পেশায় নামতে বাধ্য করেছেন ৷ তাঁকে ধর্ষণ করেছেন ৷ এমনকী, আপত্তিকর ছবি ফাঁস করার ভয়ও দেখিয়েছেন। স্বভাবতই গ্রেফতার হন যুবক। রাজস্থান হাইকোর্টে সুরাহা না পেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌল ও সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ 15 সেপ্টেম্বর তাঁকে জামিন দিয়েছে।
যুবকের আইনজীবী নমিত সাক্সেনা আদালতে বলেন, "2023 সালের 26 এপ্রিল মহিলা প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে তাঁর দাবি, 2019 সালের 29 মার্চ থেকে 22 এপ্রিলের মধ্যে তিনি অত্যাচারিত হয়েছেন। কিন্তু তথ্য বলছে, 2019 সালের ঠিক ওই সময় স্বামীর সঙ্গে একযোগে সুরক্ষা চেয়ে রাজস্থান হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তরুণী। তাহলে অত্যাচারের অভিযোগটি সঠিক হয় কোন যুক্তিতে?"
আইনজীবীর আরও দাবি, তরুণী যৌনকর্মী জানার পরও যুবক তাঁকে বিয়ে করেন। সামাজিক পরিচিতি দেন ৷ কিন্তু বিয়ের পরও মহিলার মধ্যে পরিবর্তন আসেনি ৷ তিনি পুরনো কায়দায় জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন ৷ তার জেরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয় ৷ শুধু তাই নয়, স্বামীর কাছ থেকে নানা অজুহাতে টাকা আদায় করতে থাকেন ওই মহিলা ৷ এরপরই বিয়ে ভাঙে।
চলতি বছরের জুন মাসে রাজস্থান হাইকোর্ট যুবকের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় ৷ এরপর হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা করেন তিনি ৷ আদালতে যুবকের দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে ৷ এমন সব অভিযোগ আনা হয়েছে যার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই ৷ পাশপাশি, যুবকের তরফে আরও দাবি, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পারার মতো কোনও তথ্য তরুণীর কাছে নেই। শুধুমাত্র ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের জন্য তরুণী এফআইআর করেছেন।
আরও পড়ুন: একই প্রমাণে এক অভিযুক্ত দোষী, আরেকজন বেকসুর খালাস নয়: সুপ্রিম কোর্ট