হায়দরাবাদ, 9 জানুয়ারি: সন্তানের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের যাবজ্জীবন সাজা দিল আদালত ৷ মাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল ৷ সেই সময় ওই মহিলা 8 মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন ৷ মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছিল তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদের গাচিবৌলি থানা এলাকার সাইবেরাবাদে ৷ এই খুনে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছিল 2018 সালে ৷ 7 বছরের শিশু সন্তানের সাক্ষ্য মায়ের খুনিদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে ৷ 5 জানুয়ারি এই খুনের মামলায় 4 জনকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজার রায় দিল কুকাটপল্লির একটি আদালত ৷ জানা গিয়েছে, এই মামলায় ওই শিশুটি কোনও ভয়-ভীত ছাড়াই সরকারি আইনজীবীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল ৷
খুনের প্রেক্ষাপট: বিহারের বাসিন্দা দীনেশ এবং পিঙ্কি (38) কয়েকবছর আগে কাজের খোঁজে হায়দরাবাদে আসেন ৷ তাঁরা কোন্দাপুরে থাকতে শুরু করেন ৷ এখানে পিঙ্কির সঙ্গে বিকাশ কাশ্যপের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে ৷ পিঙ্কি 32 বছর বয়সি বিকাশের সঙ্গে থাকতে শুরু করে ৷ এদিকে বিকাশ আরও একটি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে মমতা নামের এক মহিলার সঙ্গে জড়িয়েছিল ৷ মমতার স্বামী (60) মৃত ৷ তবে তাঁদের সন্তান অমরকান্ত (24) রয়েছে ৷
পিঙ্কি বিকাশ ও মমতার সম্পর্কের কথা জানতে পেরে যায় ৷ এ নিয়ে তাদের মধ্যে অশান্তি হয় ৷ এদিকে পিঙ্কি ইতিমধ্যে 8 মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন ৷ এরপর বিকাশ, মমতা, অনিল এবং অমরকান্ত মিলে পিঙ্কিকে মারধর করে ৷ অপরাধীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিঙ্কির দেহ 8 টুকরো করে একটি প্যাকেটে ভরে ৷ আর ওই প্যাকেটটা রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয় ৷
পিঙ্কি বিকাশের সঙ্গে থাকার জন্য় গাচিবৌলির সিদ্ধাকানগরে চলে আসে ৷ তাঁর সঙ্গে তাঁর শিশু সন্তানও ছিল ৷ বিকাশ, মমতা, অমরকান্ত ও অনিলরা পিঙ্কিকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছিল ৷ সেই জন্য ওই শিশু সন্তানকে বাড়ির বাইরে বের করে দেওয়ার কথাও ভেবেছিল ৷ তাই পিঙ্কিকে খুন করে তারা শিশু সন্তানকে বাড়ির পিছন দিকে নিয়ে যায় ৷ তবে সন্তানটি ঘরে ফিরে দেখতে পায়, তার মা নেই ৷ ঘরের মেঝে রক্তাক্ত হয়ে রয়েছে ৷ মায়ের হাতের চুড়িগুলি ভেঙে গিয়েছে ৷ শিশু সন্তানটি যা কিছু দেখেছিল, সেই সবকিছু মামলার শুনানিতে বলে ৷
পুলিশ এই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সব প্রমাণ জোগাড় করে ৷ পিঙ্কি অন্তঃসত্ত্বা ছিল ৷ তাই তাঁর রক্তের নমুনা স্থানীয় হাসপাতাল এবং অঙ্গনওয়াড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, পিঙ্কি সন্তানসম্ভবা ছিল ৷ পিঙ্কির দেহের টুকরোগুলি একটি দু'টি প্যাকেটে ভরে সেই প্যাকেটগুলি একটি বাইকে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ ওই বাইকের নম্বর জোগাড় করে, যারা ওই বাইক ব্যবহার করেছিল, তাদের সনাক্ত করে পুলিশ ৷ এই সবকিছু মিলিয়ে 81টি প্রমাণ, 16টি সিসিটিভি ফুটেজ এবং ফরেন্সিক রিপোর্ট নিয়ে চার্জশিট গঠন করে পুলিশ ৷ সেই চার্জশিটে কীভাবে খুন করা হয়েছে, তার বিস্তারিত জানিয়েছে পুলিশ ৷
আরও পড়ুন: