কলকাতা, 15 জুলাই: ললিত মোদি, যিনি সকলের সঙ্গে খোলাখুলি মিশতে পছন্দ করেন ৷ আর সুস্মিতা সেন (Sushmita Sen) বিতর্ক যাঁকে ছুঁলেও, যার পরোয়া তিনি কোনওদিন করেননি ৷ এমন দুই চরিত্র যাঁরা নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন ৷ গ্ল্যামার কুইনের সঙ্গে একসময়ের ক্রিকেট প্রশাসককে নিয়ে এই চর্চা ভারতীয় মিডিয়ায় এখন ‘হট কেক’-এর মতো বিকোচ্ছে (Lalit Modi-Sushmita Sen Affair always on Cards) ৷ বিগত কয়েক বছরে তাঁরা সংবাদ শিরোনামে ছিলেন না ৷ কিন্তু, ললিত মোদির (Lalit Modi) সাম্প্রতিক কয়েকটি টুইটের পর, তাঁরা ফের শিরোনামে ৷
সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে, ললিত মোদি ও সুস্মিতা সেনের প্রেমকাহিনী এখন প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছে বাসী জলভাত ৷ এ ক্ষেত্রে যা আলোচ্য, তা হল - ক্রিকেট এবং গ্ল্যামার দুনিয়ার সম্পর্ক ৷ যা অতীতে বহুবার দেখা গিয়েছে ৷ তা সে মনসুর আলি খান পতৌদি এবং শর্মিলা ঠাকুর হোন বা আজহারউদ্দিন-সঙ্গীতা বিজলানী বা হালফিলের বিরাট-অনুষ্কা ৷ কিন্তু, ক্রিকেটের প্রশাসনিক স্তরে বলিউডের গ্ল্যামারের যোগসূত্র এই প্রথম ৷ তা ললিত মোদি যতই ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন প্রশাসক হোন না কেন !
তবে, এই দু’জনের প্রেম কাহিনী রুপোলি পর্দার বিখ্যাত দুই চরিত্রকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ৷ 1993 সালে বলিউড ব্লকবাস্টার ‘রূপ কি রানি, চোরো কা রাজা’ ৷ যেখান দীর্ঘ প্রায় 12 বছর ধরে ক্রিকেট প্রশাসক তথা শিল্পপতি ললিত মোদি এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে ‘চোর-পুলিশের’ খেলা চলছে ৷ 2014 সালে তাঁকে পলাতক ঘোষণা করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ৷
তবে, ললিত মোদি এবং অপরাধের সম্পর্ক ক্রিকেট প্রশাসক বা শিল্পপতি হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার অনেক আগেই ৷ মাত্র 22 বছর বয়সে তাঁর প্রথম জেলযাত্রা ৷ 1985 সালের 1 মার্চ মাদকপাচার, হেনস্থা এবং ‘সেকেন্ড ডিগ্রি কিডন্যাপিং’ মামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি ৷ তবে, সেটা ছিল কেবলই সূচনা মাত্র ৷ যার পরিসমাপ্তি হয়েছিল 2010 সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ৷ যখন তিনি, আর্থিক তছরুপের মামলায় বাঁচতে লন্ডনে পালিয়ে যান ৷ দীর্ঘ 5 বছর তদন্ত এবং একাধিক নোটিশের পরেও দেশে না ফেরায়, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে পলাতক ঘোষণা করে ৷
আরও পড়ুন: Sushmita Sen-Lalit Modi: 'সঙ্গিনী' সুস্মিতাকে নিয়ে ললিতের 'নতুন জীবন'
তবে, বিজেপি ঘনিষ্ঠতা তাঁকে রাজস্থানে একছত্র আধিপত্য তৈরি করে দিয়েছিল ৷ কিন্তু, রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার গঠন হওয়ার পর তাঁর সব জারিজুরি শেষ হয়ে যায় ৷ এমনকি 2009 সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় তাঁর দ্বিতীয় আইপিএল পুরোপুরি দক্ষিণ আফ্রিকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, ইউপিএ সরকারের যোগ্যতায় প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল ৷ বিশেষ করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে ৷
তবে, যাই হোক ভারতীয় হিসাবে প্রথম মিস উইনিভার্স ক্রাউন মাথায় তোলা, গ্ল্যামার কুইনের সঙ্গে ললিত মোদির সম্পর্কের গুঞ্জন এই প্রথম নয় ৷ 2008 সালে রাজস্থান রয়্যালসের ভিভিআইপি বক্স হোক বা অন্য কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজির ম্যাচ ৷ গ্ল্যামারাস আইপিএল-এ সৌন্দর্যের ছোঁয়া দিতে গ্যালারিতে সুস্মিতা সেনের উপস্থিতি তখন বাধ্যতামূলক ছিল ৷ যা গত দু’দিনে দিনের আলোর ছোঁয়া পেয়েছে ৷ কে সেই সময় আইপিএল-এর গ্যালারিকে বলিউডের রোশানাইয়ে আলোকিত করেছিলেন, সেই প্রশ্নের কোনও অবকাশ সে দিনও ছিল না, আজও নেই ৷
এমনকি সুস্মিতা সেনের জীবন নিয়েও কম কানাকানি হয়নি ৷ একাধিক সম্পর্কে জড়ানোর খবর শোনা গিয়েছে ৷ কিন্তু, কোনওটি পরিণতি পায়নি বা বাঙালি মিস ইউনিভার্স সেগুলিকে গুরুত্ব দিতে চাননি ৷ যে তালিকায় রণদীপ হুডা থেকে বাঁ হাতি পেসার ওয়াসিম আক্রম এবং সর্বশেষ রোহমান শল ৷ হতে পারে 1994 সালের মিউ ইউনির্ভাসের চলচ্চিত্র কেরিয়ার খুব একটা বড় ছিল না ৷ কিন্তু, তখনও যেমন সুস্মিতা সেনের নামে সদ্য সাবালক থেকে মধ্যবয়সী সব পুরুষের হৃদয়ে কম্পন ধরে যেত, আজও তাঁর অন্যথা হয় না ৷ অন্তত ললিত মোদির গতকালের ধারাবাহিক টুইটের পর তা জলের মতো স্পষ্ট ৷
ললিত-সুস্মিতার গল্প বলিউডে ভালো ছবি হতে পারে ৷ রসিকদের মতে, ললিত আবারও এটা প্রমাণ করলেন, ‘‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’’ ৷ বলিউডে কতটা এই প্রেমকাহিনী ব্লকবাস্টার হবে, তা বলা না গেলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ #ললিতা এই মুহূর্তে সবার উপরে ট্রেন্ড করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷