হায়দরাবাদ, 18 মার্চ: খালিস্তানপন্থী স্বঘোষিত শিখ প্রচারক অমৃতপাল সিংয়ের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা (Arrest of Amritpal Singh) সংশ্লিষ্ট পর্বের অবসান নয় ৷ বরং এই ঘটনা পঞ্জাবের এক ভুলে যাওয়া সময়ের নতুন সূচনাপর্ব হতে পারে ! অমৃতপাল নিজেকে প্রয়াত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের অনুগামী বলে দাবি করেন ৷ 1984 সালে অপারেশন ব্লু স্টারের শিকার হন এই জার্নেল সিং ৷ অমৃতপাল যেভাবে সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন, তাতে প্রায় চার দশক আগের সেই ঘটনার স্মৃতি আবারও টাটকা হয়ে উঠতে পারে ৷ যার জেরে ফের একবার অশান্ত হয়ে উঠতে পারে পঞ্জাব ৷
অমৃতপালের ছোটবেলা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি ৷ তবে তিনি আদতে অমৃতসর জেলার জাল্লালপুর খেরার বাসিন্দা ৷ তাঁর পরিবারের পরিবহণ ব্যবসা রয়েছে ৷ সেই ব্যবসায় যোগ দিতেই 2012 সালে দুবাই পাড়ি দেন তিনি ৷ তার আগে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি অর্জন করেন ৷ অমৃতপালের লিঙ্কডইন প্রোফাইল বলছে, একটি কার্গো সংস্থায় অপারেশনাল ম্য়ানেজারের পদে কর্মরত ছিলেন তিনি ৷
সোশাল মিডিয়ায় আগাগোড়া জনপ্রিয় ছিলেন অমৃতপাল ৷ সেখানে শিখ সম্প্রদায় সম্পর্কে নিজের ভাবনা, চিন্তা উপস্থাপিত করতেন তিনি ৷ গত বছরের অগাস্ট মাসে দুবাই থেকে ভারতে ফেরেন অমৃতপাল ৷ তাঁর এখনকার চেহারার সঙ্গে কয়েক বছর আগের ছবির ফারাক রয়েছে বিস্তর ৷ আগের ছবিতে তাঁকে আর পাঁচজন শিক্ষিত, ঝকঝকে ভারতীয় তরুণের মতোই লাগত ৷ কিন্তু, এখন তিনি শিখ সম্প্রদায়ের পরম্পরাগত সাজ-পোশাকেই থাকতে পছন্দ করেন ৷ লম্বা দাড়ি, পাগড়ি, ডানহাতের কবজিতে স্টিলের বালা এবং কোমরে আটকানো কৃপান ! এটাই এখনকার অমতৃপাল সিং ৷
ভারতে ফেরার একমাসের মধ্যেই একটি শিখ সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পান অমৃতপাল ৷ ওয়ারিশ পঞ্জাব দি (পঞ্জাবের উত্তরাধিকার) নামক ওই সংগঠনটি তৈরি করেছিলেন প্রয়াত অভিনেতা ও সমাজকর্মী দীপ সিধু ৷ উল্লেখ্য, কৃষক আন্দোলনের সময় লালকেল্লায় অশান্তির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন এই দীপ সিধু ৷ পরে একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর ৷
ওয়ারিশ পঞ্জাব দির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই অমৃতপালের জনপ্রিয়তা উল্কার গতিতে বাড়তে থাকে ৷ তাতে চিন্তা বাড়ে প্রশাসনের ৷ অমৃতপালের অনুগামীদের একাংশ তো তাঁকে জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের সঙ্গে তুলনা করেন ! সম্প্রতি, প্রকাশ্য়েই শিখ সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবিতে সরব হন অমৃতপাল ৷ তাঁর দাবি, আলাদা রাজ্য গঠিত হলেই নাকি শিখ সম্প্রদায়ের সমস্ত সমস্য়া চিরদিনের মতো মিটে যাবে ৷
গত বছরের নভেম্বরে একমাসের জন্য একটি পদযাত্রার আয়োজন করেন অমৃতপাল ৷ মাদক সেবন, পণপ্রথা এবং জাতিগত বিভেদের বিরুদ্ধে শিখ সম্প্রদায়কে উজ্জীবিত করতেই এই আয়োজন বলে দাবি করা হয় ৷ যদিও এর কিছুদিনের মধ্যেই অমৃতপালের অনুগামীদের বিরুদ্ধে একটি গুরুদ্বারে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে ৷ সূত্রের দাবি, অমৃতপাল ঘোষণা করেছিলেন গুরু গ্রন্থ সাহিবের সামনে সকলকেই মাটিতে বা মেঝেয় বসতে হবে ৷ আর তারপরই অমৃতপালের অনুগামীরা ওই গুরুদ্বারের সমস্ত আসবাব ভেঙে দেন !
আরও পড়ুন: অমৃতপাল সিং ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেফতার করল পুলিশ, পঞ্জাবে বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা
অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে অমৃতপাল আইনের তোয়াক্কা না করেই প্রকাশ্যে ধারাল অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন ৷ তাঁর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার সাহস পাচ্ছিলেন না অধিকাংশ মানুষ ৷ উত্তরোত্তর তাঁর অনুগামীর সংখ্য়াও বাড়ছে ৷ এই প্রেক্ষাপটে পঞ্জাব ফের অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন ৷ এর জেরেই অমৃতপালকে গ্রেফতার করা হয় ৷ আপাতত পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি এফআইআর করেছে ৷ এর মধ্যে দু'টিতে ঘৃণা ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ৷