কোচি (কেরল) 19 ফেব্রুয়ারি: একজন মা এবং স্ত্রীর ভূমিকা তুলনার বাইরে ৷ তাঁদের ভূমিকা কোনও ক্ষতিপূরণ দিয়ে মেটানো যায় না ৷ বরং দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কোনও সংস্থায় চাকরিরত কোনও মহিলার মতোই তাঁদেরও সাহায্য পাওয়া উচিত ৷ একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এমনই জানাল কেরল হাইকোর্ট (Kerala High Court) ৷
একজন গৃহবধূ যদি কোনও কাজ না করেন ৷ তাহলে তিনি কোনরকম সুযোগ-সুবিধা পাবে না ৷ দুর্ঘটনায় যদি তার ক্ষতি হয় ৷ হাত পা ভেঙে যায় বা কোনও অঙ্গ নষ্ট হয়ে যায় ৷ তাহলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য নয়, এই কথাটিতে আপত্তি তোলে হাইকোর্ট ৷ কেরল স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (কেএসআরটিসি) পরিবহণের দুর্ঘটনায় সাহায্যের দাবির মামলার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণটি করা হয়েছে কেরল হাইকোর্টের তরফে। বিচারপতি দেবন রামচন্দ্রনের একক বেঞ্চ 61 বছর বয়সি এক মহিলার দায়ের করা মামলা বিবেচনা করার সময় এই রায় দিয়েছে ।
প্রসঙ্গত, মামলাটি একটি ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত ৷ ঘটনাটি ঘটে 24 অগস্ট 2006 সালে ৷ কেএসআরটিসি-র মালিকানাধীন একটি বাসে ভ্রমণকারী মহিলা চালকের দ্রুত ব্রেক প্রয়োগের কারণে তাঁর আসন থেকে ছিটকে পড়ে যান এবং গুরুতর জখম হন তিনি । মামলাকারী দাবি করেন, তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে শয্যাশায়ী থাকতে হয় ৷ ঘটনার চরম মানসিক আঘাত পান তিনি ৷ যার কারণে অনেক চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে । তিনি এই মোটর দুর্ঘটনায় প্রায় 2 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন ৷ কারণ ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মাত্র 40 হাজার 214 টাকা সাহায্য দেয় । মামলাটি বিচারাধীন থাকার সময় কেএসআরটিসি-এর তরফে আইনজীবী জানান, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষতিপূরণ অপ্রত্যাশিত ৷ কারণ আবেদনকারী একজন গৃহবধূ ছিলেন ৷ কোনও আয় করতেন না তিনি ।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে কেএসআরটিসি-এর এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে ৷ এর উত্তরে আদালত জানিয়েছে, একজন গৃহিণী কোনও আয় করেন না এবং সেইজন্য অক্ষম ৷ তিনি তার ক্ষতির জন্য সাহায্য পাওয়ার যোগ্য নন, এই কথা আপত্তিজনক ৷ বাড়িতে একজন মা এবং স্ত্রীর ভূমিকা তুলনার বাইরে ৷ তাঁরা একজন সত্যিকারের জাতির নির্মাতা । তাঁরা পরিবারে তাঁদের সময় বিনিয়োগ করেন এবং নিশ্চিত করেন যাতে পরবর্তী প্রজন্মকে সর্বোচ্চ স্তরের শ্রেষ্ঠত্বের সঙ্গে লালনপালন করা হয় ৷ তাঁদের প্রচেষ্টাকে কখনই তুচ্ছভাবে নেওয়া যাবে না বা একপাশে সরিয়ে দেওয়া যাবে না ৷ এটা মূল্যহীন । অর্থ দিয়ে চোকানো যায় না ৷
কেরল হাইকোর্ট জানায়, মানুষের জীবন কখনও তাদের আর্থিক মূল্যের দাঁড়িপাল্লায় পরীক্ষিত হয় না, বরং তাদের অবদান এবং নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ দিয়ে পরীক্ষা করা হয় । ফলে এই পরিপ্রেক্ষিতে, একজন গৃহবধূর আঘাতের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণকে একই দাঁড়িপাল্লায় পরিমাপ করতে হবে এবং ওজন করতে হবে, যেভাবে একজন কর্মজীবী মহিলার ক্ষেত্রে করা হয় ৷ এটি বিবেচনা করে কেরল হাইকোর্ট তাঁকে 40 হাজার 214 টাকার পরিবর্তে 1 লক্ষ 64 হাজার 654 টাকা ক্ষতিপূরণ মঞ্জুর করেছে ৷ যা তিনি কেএসআরটিসি থেকে বার্ষিক 7.5 শতাংশ হারে সুদের সঙ্গে পাবেন । ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুসারে, আবেদনের তারিখ থেকে আদায় পর্যন্ত বর্ধিত পরিমাণের আনুপাতিক খরচ সহ তিনি এই সাহায্য পাবেন ।
আরও পড়ুন: ইতালিতে নতুন জীবন শুরু করছে নর্দমা থেকে উদ্ধার সদ্যোজাত