কানপুর, 5 অগস্ট: ইতিহাস ক্রমবর্ধমান । আবার চিরন্তনও । বিস্মৃত সেই ইতিহাসই ফিরে এল 166 বছর পর । সিপাহী বিদ্রোহের সাহসী সৈনিক আলম বেগের মাথার খুলি অবশেষে ভারতে এল । 166 বছর পর কানপুরের সাহসী সৈনিক আলম বেগের মাথার খুলি ভারতে আনতে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা । দিল্লিতে আলম বেগের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করবে পঞ্জাব পুলিশ এবং তাদের হাতে এই বীরের মাথার খুলি তুলে দেওয়া হবে । পাশাপাশি মাথার খুলির ডিএনএ পরীক্ষা করবেন বিএইচইউ-এর জিন অধ্যাপক জ্ঞানেশ্বর চৌবে । যিনি 2014 সালের মার্চ মাসে আজনালায় পাওয়া 200টিরও বেশি নরমুণ্ডের ডিএনএ পরীক্ষার করে তাঁর গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । দেশ ও বিশ্বের পাশাপাশি পুরো শহরে এখন এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে ।
কীভাবে শনাক্তকরণ করা হয়েছিল?
বিএইচইউর অধ্যাপক (জিন) জ্ঞানেশ্বর চৌবে এই পুরো বিষয় নিয়ে জানান, 1963 সালে এক দম্পতি লন্ডনের একটি পাবে আলম বেগের মাথার খুলি (প্রফেসর একে ওয়াগনারের গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে দাবি করা) দেখেছিলেন । দম্পতি তখনই সেই মাথার খুলি গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন । যখন তারা নরমুন্ডের সন্ধান পান তখন খুলির চোখের কাছে তৈরি গর্তে একটি চিঠির মতো কাগজ ছিল । এতে আলম বেগের পূর্ণাঙ্গ তথ্য লেখা হয়েছে । ওই দম্পতি যুক্তরাজ্যে অধ্যাপক ড. একে ওয়াগনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন । ওয়াগনার নরমুন্ড নিয়ে গবেষণা করেন এবং বহু বছর পর যে ফলাফল পান তার ভিত্তিতে দাবি করেন এই খুলিটি ভারতের সাহসী যোদ্ধা আলম বেগের ।
একই সঙ্গে এই মামলায় চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেএস সেহরাওয়াত কেন্দ্র এবং ব্রিটিশ সরকার ছাড়াও যুক্তরাজ্যের ইতিহাসবিদ একে. ওয়াগনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । এরপর খুলিটি ভারতে আনার পথ প্রশস্ত হয়ে যায় । গত সপ্তাহে এই খুলি অধ্যাপক ড. জেএস সেহরাওয়াত কাছে পৌঁছেছে । খুলিটি ভারতে আসার পর ইতিহাসবিদ সুরেন্দ্র কোছার, তাঁর দল ও অধ্যাপক ড. জ্ঞানেশ্বর চৌবে আনন্দ প্রকাশ করেছেন ৷ শীঘ্রই শেষকৃত্যর পর ডিএনএ পরীক্ষা নিয়ে গবেষণা হবে ৷ অধ্যাপক ড. জ্ঞানেশ্বর চৌবে বলেন, " প্রথমে মাথার খুলিটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে । এরপর শেষকৃত্যের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। তবে এর মধ্যেই আমরা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করব । যাতে অন্যান্য গোপনীয় ও সঠিক তথ্য প্রকাশ করা যায় ।"
আরও পড়ুন: কোভিড-19-কে হারিয়ে 103 বছরে সুস্থ হয়ে ফিরলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী এইচ এস দোরস্বামী
1857 সালে আলম বেগ সিপাহী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৷ তিনি বহু ব্রিটিশ অফিসারকে হত্যা করেছিলেন। পরিণাম তাঁর মৃত্যুদণ্ড । আলম বেগকে কামানের সঙ্গে বেঁধে উড়িয়ে দেওয়ার নির্দশ দেয় ব্রিটিশরা । শোনা যায়, মাথার খুলি ব্রিটেনের রানিকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল । বহু বছর ধরে যুদ্ধের ট্রফি হিসেবে ব্রিটেনে রাখা হয়েছিল আলম বেগের মাথার খুলি । ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ওয়াগনার যখন আলম বেগের মাথার খুলি খুঁজে পান ৷ তখন সেখানে একটি চিঠি ছিল ।
তাতে লেখা ছিল, 32 বছর বয়সে আলম বেগের মৃত্যু হয় । তাঁর উচ্চতা পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছিল । ক্যাস্টিলো নামের এক ব্যক্তি সেই মাথার খুলি একটি পাবে রেখে নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলেন । এরপর খুলি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে আলম বেগের বীরত্ব সবার সামনে আসে । এখন বিজ্ঞানীরা এই খুলিটি নিয়ে তাঁর আত্মীয়দের ডিএনএ-এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে । এরপর দেশের মাটিতে তাঁকে চিরতরে সমাহিত করা হবে ।