নয়াদিল্লি, 9 অক্টোবর: কামদুনি ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার ৷ সোমবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে স্পেশাল লিভ পিটিশন বা এসএলপি দাখিল করে হাইকোর্টের রায়ে অবিলম্বে স্থগিতাদেশ দেওয়ার আর্জি জানানো হয় ৷ পাশাপাশি দ্রুত এই মামলার শুনানির আর্জি জানায় রাজ্য ৷ যদিও এখনই হাইকোর্টেক রায় স্থগিতাদেশে সম্মতি দেয়নি শীর্ষ আদালত ৷
গত 6 অক্টোবরের রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট 2013 সালের কামদুনি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় দিতে গিয়ে বলে যে, তিন অপরাধীর ফাঁসির হুকুম মকুব করা হচ্ছে এবং তাঁদের মধ্যে দুই জনকে তার পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হচ্ছে ৷ আর অপর দোষীকে বেকসুর খালাস করা হচ্ছে ৷ এই রায়ের বিরুদ্ধেই এসএলপি দায়ের করেছে রাজ্য সরকার ৷
রাজ্যের আইন বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, "গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেওয়ার পর, রাজ্য সরকার সেই আদেশকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ এ বার সেই পথেই এক ধাপ এগিয়ে আমরা এই বিষয়ে শীর্ষ আদালতে এসএলপি দায়ের করেছি ৷"
তিনি আরও বলেন যে, এসএলপিতে রাজ্য সরকার, ডিভিশন বেঞ্চের আদেশে স্থগিতাদেশ চাওয়ার পাশাপাশি শীর্ষ আদালতে এই বিষয়ে ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত শুনানিরও আর্জি জানিয়েছে ৷
আরও পড়ুন: কামদুনি-কাণ্ডে ফাঁসির দুই সাজাপ্রাপ্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল কলকাতা হাইকোর্ট
শীর্ষ আইনজীবী কপিল সিবাল ও গোপাল শংকরনারায়ণ এই মামলায় রাজ্যের পক্ষে হাজির হন ৷ তাঁরা আদালতকে জানান যে, হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডে অভিযুক্ত এক জনের সাজা বাতিল করেছে এবং তাঁকে খালাস করেছে ৷ অপর তিন জনকে 376ডি ধারা থেকে খালাস করেছে এবং তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করেছে । বিষয়টির সংবেদনশীলতা এবং অপরাধের গুরুতর প্রকৃতির কারণে রায় কার্যকর করার আগে স্থগিতাদেশ দেওয়া যেতে পারে । অবিলম্বে হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করলে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে দাবি করেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবাল ৷ যদিও তাঁর এই যুক্তি গ্রহণ করেনি সুপ্রিম কোর্ট ৷
সুপ্রিম কোর্ট মতামত দিয়েছে যে, বিষয়টি বিবেচনার প্রয়োজন এবং অভিযোগগুলি গুরুতর হলেও একবার কেউ বেকসুর খালাস হয়ে গেলে, তাঁকে আর একদিনের জন্যও হেফাজতে রাখা যাবে না । শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ সব পক্ষকে নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে ৷ এক সপ্তাহের মধ্যে সেই নোটিশের জবাব দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে ৷
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ 2016 সালে কলকাতার নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আমিন আলিকে সমস্ত অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস করে ৷ সইফুল আলি এবং আনসার আলিকে মৃত্যুদণ্ড বদলে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৷ অন্য তিন আসামি - ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম ও ভোলানাথ নস্কর - যাঁদের আগে নিম্ন আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল, তাঁরা ইতিমধ্যে কারাগারে দশ বছর পূর্ণ করেছে বলে তাঁদের শুক্রবার মুক্তি দেওয়া হয়েছে ।
হাইকোর্টে সরকারি আইনজীবী অযৌক্তিক সওয়াল করেছেন বলে অভিযোগ করেন মৃতার বাবা-মা ৷ তাঁরা হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন । তাঁরা দিল্লিতে নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সওয়াল-জবাবের নেতৃত্বে থাকা আইনজীবীর সহায়তা নেবেন বলে জানান ।