ভাষা এমন একটি মাধ্যম, যার মাধ্যমে সংবাদ (Promoters of peace or only messengers) পরিবেশিত হয় ৷ আর যখন ভাষা একটি নির্দিষ্ট ধর্মের লেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত বা বিশ্লেষণ করা হয়, তখন এটি তথ্য প্রবাহকে সীমিত করে এবং বিষয়বস্তুর সত্যতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে । পৃথিবীতে হাজার হাজার ভাষা রয়েছে যা তথ্য আদান-প্রদান করতে ব্যবহৃত হয় (Credible Journalism)।
তথ্য হবে অথেন্টিক এবং ভাষাকে একটি বাহন হতে হবে । আর যদি গাড়িটি লাল, সবুজ বা গেরুয়া হয়, তবে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যায় । তথ্য কতটা নির্ভরযোগ্য তার উপর তার প্রভাব নির্ভর করে । এবং ব্যাপক ভাবে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছনোর উপরই নির্ভর করে তার বিশ্বাসযোগ্যতা ।
রবিবার সারা দেশের প্রতিনিধিরা হায়দরাবাদের মৌলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অডিটোরিয়ামে জড়ো হয়েছিলেন ৷ তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, 200 বছর পূর্ণ করা উর্দু সাংবাদিকতাকে ধর্মের নিরিখে বিচার করা উচিত না ৷ অন্যান্য ভাষার সাংবাদিকতারই মতো উর্দু সাংবাদিকতা - প্রাথমিক ভাবে অ-উর্দু পটভূমি থেকে আসা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এই নিয়েই আলোচনা হয় ৷ তাঁরা প্রকৃত অর্থে বোঝাতে চেয়েছেন যে, উর্দু এমন একটি ভাষা যা সকলের নিজস্ব এবং শুধুমাত্র মুসলমানদের ভাষা নয় । তাঁরা ঐতিহাসিক প্রমাণ দিয়ে এটিকে প্রমাণ করেছেন যে, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতার একজন হিন্দু দেশের প্রথম উর্দু সংবাদপত্র চালু করেছিলেন । পরে, একই ব্যক্তি কলকাতা থেকে হিন্দি ও ফারসি ভাষায় সংবাদপত্র চালু করেন ।
প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা করবেন বলে আশা করা হয়েছিল, যা থেকে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে । উর্দু সাংবাদিকতার ভবিষ্যত, চ্যালেঞ্জ এবং আর্থিক সক্ষমতা নিয়েই বেশিরভাগ আলোচনা চলে । বাণিজ্যিক ব্যবহারযোগ্যতার ক্ষেত্রে উর্দু টেক্সটের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন উর্দু মিডিয়া সামিটেক অন্যতম প্রতিনিধি তথা বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত । স্ক্রিপ্ট গুরুত্বপূর্ণ কি না- এই নিয়ে বিতর্কে স্বপন বলেন, "টেক্সটের চেয়ে ভাষার প্রভাব অনেক বেশি ।"
উর্দু সাংবাদিকতার 200 বছরের ইতিহাস নিয়ে বিতর্কে যোগ দিতে এবং তাঁদের চিন্তাভাবনা শেয়ার করতে হায়দরাবাদে গিয়েছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক ও শিক্ষাবিদরা ৷ তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সঞ্জয় কাপুর, শ্রীনিবাসন জৈন, সতীশ জ্যাকব, রাহুল দেব, পঙ্কজ পাচুরি, সুমেরা খান, রাহুল শ্রীবাস্তব এবং আনন্দ বিজয় ৷ উর্দু সাংবাদিকতা যেহেতু তার 200 বছরের যাত্রাকে স্মরণ করছে, সেই উপলক্ষে এমএএএনইউ এবং তাদের অংশীদাররা বিভিন্ন থিম-ভিত্তিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যেখানে সাংবাদিকরা তাঁদের সম্পর্কে কথা বলেছেন ।
শ্রোতাদের মধ্যে সাংবাদিকতার ছাত্র এবং সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন । মিডিয়া কীভাবে শান্তি এবং সংলাপের প্রচার করতে পারে - সে বিষয়ে একটি থিম নিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সন্ধ্যায় বক্তব্য রাখেন এনডিটিভি-র শ্রীনিবাসন জৈন । তিনি বলেন, মিডিয়া শান্তির প্রচার করতে পারে না, কারণ তারা সত্যকে তুলে ধরতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেই সত্য যতই অপ্রীতিকর হোক না কেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লনে উপস্থিত অতিথিরা জৈনের মন্তব্যকে সাধুবাদ জানান ৷
ইউক্রেনীয় নারীদের অপর্যাপ্ত কভারেজের জন্য মিডিয়ার দায়িত্বহীনতাকে দোষারোপ করে পুরো কথোপকথনটিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন একজন হিন্দি সাংবাদিক ৷ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক টিভি 9 ভারতবর্ষের সুমেরা খান ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে আটকান এবং বলেন যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইউক্রেনীয় নারী এবং শিশুদের উপর বিভিন্ন প্রতিবেদন করেছেন । অপর উপস্থাপক পঙ্কজ পাচুরি তপ্ত বাতাবরণকে ঠান্ডা করতে চমৎকার প্রচেষ্টা চালান একটি একটি লেখনীর মধ্যে দিয়ে, তিনি বলেন, "দাগ চাহরে মে হ্যায় অর আয়েনা সাফ করনে কি কোশিশ হ্যায়"। এর অর্থ, মুখে দাগ আর আয়নার দোষ । মিডিয়ার শান্তির প্রবর্তক হিসেবে কাজ করা উচিত নাকি কেবল একজন সংবাদ নির্মাতা হিসেবে কাজ করা উচিত - আলোচনা শেষ পর্যন্তও এই বিষয় অমীমাংসিত থেকে যায় । সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয়ে মতানৈক্য থাকায় শ্রোতারা হতভম্ব হয়ে পড়ে । ফলে পেশাদারদের কীভাবে আচরণ করা উচিত, একজন কমিউনিকেশনের ছাত্র যদি পেশা হিসাবে সাংবাদিকতাকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে কীভাবে আচরণ করা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় ৷
সাংবাদিকতা একটি অ্যাট্রিবিউশনের খেলা এবং এটি গ্রাউন্ড রিয়েলিটিকে তুলে ধরে ৷ কারণ এটি সত্যকে প্রতিফলিত করে, তা যতই কুৎসিত হোক না কেন । সাংবাদিকেরা নিরপেক্ষ এবং এর ফলে তাঁরা সততার সঙ্গে তাঁদের কর্মজীবনের পছন্দ অনুশীলন করতে পারেন ৷ এনজিওর সঙ্গে যুক্ত ডেভলপমেন্ট জার্নালিস্টদের শান্তি, প্রেম বা অন্য কিছুর মতো এজেন্ডা অনুসরণ করার স্বাধীনতাও থাকে ।