উত্তরকাশি, 23 অক্টোবর : কথায় আছে 'রাখে হরি মারে কে' ৷ তেমনটাই ঘটল কলকাতার ট্রেকার মিঠুন দারি এবং পুরোলা নিবাসী গাইড দেবেন্দ্রর সঙ্গে ৷ 17 হাজার ফিট উচ্চতায় বরফে ঢাকা লামখাগা পাসে বেঁচে থাকাটা নতুন জীবন পাওয়ার মতো ৷ মাইনাস তাপমাত্রায় থাকা এই অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয় এঁদের ৷ বর্তমানে জেলা হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে তাঁদের ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে 3 দিনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন কলকাতার মিঠুন ৷ তাঁর পায়ের আঘাত গুরুতর ৷
কিছুদিন আগে হর্ষিল-চিতকুল (Harsil-Chitkul) ট্রেকিংয়ে গিয়ে নিখোঁজ হন অনেকে ৷ এরপর উদ্ধারকাজ শুরু করে এসডিআরএফ (SDRF) এবং সেনা জওয়ানেরা ৷ 31 বছরের মিঠুন দারিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে হর্ষিলের সেনা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ৷ সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ৷
মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন ৷ হাসপাতালের বেডে শুয়ে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মিঠুন ৷ বললেন, "17 অক্টোবর দুপুরে ক্যাম্প থেকে লামখাগা পাসের (Lamkhaga Pass) উদ্দেশে রওনা দিই ৷ তখনও পর্যন্ত আবহাওয়া পরিষ্কার ছিল ৷ এরপর লামখাগা পাস পেরনোর পরও একই রকম অবস্থা ছিল ৷ কিন্তু বিপত্তি ঘটে এরপরই ৷ হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) চিতকুলের দিকে যাওয়ার পথে হঠাৎ ভারী তুষারপাত শুরু হয় ৷ আমরা আটকে যাই ৷"
আরও পড়ুন : Uttarakhand Disaster : উদ্ধার 7 জনের দেহ, 17 হাজার ফিট উঁচুতে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে বায়ুসেনা
প্রবল তুষারপাতের মধ্যে তিন দিন কিভাবে কাটালেন মিঠুন ?
মিঠুনের গাইড বরফ সরিয়ে রাস্তা সাফ করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ৷ আর পোর্টার অর্থাৎ কুলি পিছনে আসছিলেন ৷ এই সময় মিঠুনের দু'জন সঙ্গী বরফে পা পিছলে নিচে পড়ে যান ৷ তাঁর পিছনে থাকা আরও এক সঙ্গীও প্রথমে মিঠুনের পায়ের উপর পড়েন, তারপর পিছলে নিচে তলিয়ে যান ৷ এতে মিঠুনের পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে ৷ তাঁর গাইড 37 বছরের দেবেন্দ্র কোনওরকমে মিঠুনকে ধরে তাঁবুতে নিয়ে যান ৷ ভারী তুষারপাতের কারণে সব সঙ্গীরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন ৷ মিঠুন জখম পা নিয়ে তাঁর গাইড দেবেন্দ্রের সঙ্গে কোনওরকমে 3 দিন তাঁবুতে কাটিয়েছেন ৷ এর মধ্যে হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনে প্রাণ ফিরে পান দু'জন ৷
17 অক্টোবর হর্ষিল-চিতকুল (Harsil-Chitkul) ট্রেকিংয়ে 15 হাজার ফুট উচ্চতায় লামখাগা পাস অতিক্রম করার পর পশ্চিমবঙ্গের 8 জন ট্রেকার সমেত মোট 11 জন নিখোঁজ হয়ে যান ৷ 19 অক্টোবর সেনা এবং এসডিআরএফ (SDRF) ভারতীয় বায়ু সেনার হেলিকপ্টারে লামখাগা পাসের আশপাশে চক্কর দিচ্ছিল ৷ যদি কোনও ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায় ৷ 20 অক্টোবর উদ্ধার অভিযান শুরু হয় ৷ লামখাগা পাসে 7 জনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে ৷ এর মধ্যে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে ইতিমধ্যে 3 জনের শবদেহ হর্ষিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ ট্রেকিংয়ের এই দলটিতে 7 জন ট্রেকার এ রাজ্যের বাসিন্দা, দিল্লির এক পর্যটক আর উত্তরকাশীর 3 জন রাঁধুনিও ছিলেন ৷ দলটি 14 অক্টোবর লামখাগা পাস যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ৷