কলকাতা, 11 অগস্ট: মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছিলেন, "হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন.. ৷" সর্বকালে সর্বযুগে বারবার একথার সত্যতার প্রমাণ করেছেন ভারতীয়রা ৷ তাঁদের অবশ্য অবহেলা করেনি বিশ্ব সংসার ৷ আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে পরিচিত নোবেল পুরস্কারও বারবার পেয়েছেন কৃতি ভারতীয়রা ৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু হওয়া তালিকা 2019 সালে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ে এসে থেমেছে ৷ গত কয়েক বছর অবশ্য নোবেল আসেনি দেশে ৷ তবে সবাই জানে এ অপেক্ষা শুধুই সময়ের (Indians who win Nobel Prize) ৷
নোবেলজয়ীদের সবাই যে ভারতীয় তা নয় ৷ তবে তাঁদের সবারই জন্ম ভারতে ৷ এরপর কেউ পরিবার সূত্রে কেউ আবার কর্মসূত্রে পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে ৷ সরকার নথিপত্র তাঁদের যেভাবেই মনে রাখুক না কেন, অন্তরের অন্তস্থল থেকে তাঁরা সকলেই ভারতমাতার সন্তান ৷
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : শুধু ভারত নয়, এশিয়ার মধ্যেই রবিঠাকুরই প্রথম নোবেল পান ৷ গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের অনুবাদ তাঁকে নেবেল এনে দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু বাংলার সমাজজীবনে সর্বত্রই তাঁর গৌরবময় উপস্থিতি ৷ বাঙালির বিশ্ব বাঙালি হওয়া তাঁর হাত ধরেই ৷ নীপিড়িত, বঞ্চিত ও শোসিত দেশবাসীর প্রতিবাদ থেকে প্রেমের ভাষা তাঁর কলমই তুলে ধরেছে বারবার ৷ তাঁর নশ্বর দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়েছে সেই কবে ৷ কিন্তু রবীন্দ্রযুগের অবসান হবে না কোনও দিনই ৷
সিভি রমন : বিজ্ঞান জগতের এক নক্ষত্রকে ব্যাখ্যা করতে আরেক প্রথিতযশা বিজ্ঞান সাধকের কথা ধার করতে হচ্ছে ৷ এ দেশের 'মিসাইল ম্যান' এপিজে আব্দুল কালাম বলতেন, "মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যা দেখে সেটা স্বপ্ন নয় ৷ স্বপ্ন তো আসলে সেটাই যা মানুষকে ঘুমতে দেয় না ৷" তামিলনাড়ুর সেই ছোট্ট ছেলেটা স্বপ্ন দেখত পদার্থবিদ্যা নিয়ে ৷ দীর্ঘ অধ্যাবসায়ের পর 1930 সালে আলোর বিক্ষেপণ (Scattering of light) তত্ত্বের জন্য নোবেল পান রমন ৷
মাদার টেরেসা: 1930 সালের পর 1979 সালে আবারও নোবেল আসে দেশে ৷ প্রায় অর্ধশতাব্দীর অপেক্ষার পর দেশকে শান্তিতে নোবেল এনে দেন মাদার টেরেসা ৷ মনে রাখতে হবে তিনি জন্মসূত্রে ভারতীয় নন ৷ তাঁর জন্ম আলবেনিয়ায় ৷ তবে এটাও ভুললে চলবে না 140 কোটির দেশ তাঁকে একদিনের জন্যও ভারতীয় ছাড়া আর কিছুই ভাবেনি ৷
অর্মত্য সেন: তাঁর নাম রেখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ! শোনা যায় বিশ্বকবি নাকি ছোট্ট অর্মত্যকে বলেছিলেন নিজের নামের বানান নিয়ে সতর্ক থাকতে ৷ শান্তিনিকেতনের সেই ছেলেটা এরপর বিশ্বজয় করেছেন ! অর্থনীতিতে নোবেল এনে দেশকে গৌরবান্বিত করেছেন অর্মত্য ৷ সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক শ্রেণির আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে ৷ তবু নিজের সঙ্কল্পে আজও দৃঢ় অর্মত্য ৷ কলম থামেনি ৷ কণ্ঠ স্তব্ধ হয়নি ৷ মানুষের বিশেষ করে গরিব মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন অক্লান্তচিত্তে ৷
আরও পড়ুন : স্বাধীন ভারতে যুগান্তরকারী সাত 'সুপ্রিম' রায়
কৈলাশ সত্যার্থী : পাকিস্তানের তরুণীর মালালা ইউসাফজাই ও কৈলাশ সত্যার্থী একইসঙ্গে মানে যুগ্মভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল 2014 সালে ৷ মালালার লড়াই ছিল কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে ৷ কৈলাশও লড়েছেন এক নির্মম মানসিকতার বিরুদ্ধে ৷ যে মানসিকতা শিশুদের স্কুলে যেতে দেয় না ৷ তাদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেয় না ৷ সামান্য কটা টাকা বাঁচাতে শিশুশ্রমের অন্ধকার দেশে পাঠাতে চায় খুদেদের ৷ এর বিরুদ্ধেই লড়েছেন কৈলাশ ৷
অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় : প্রেসিডেন্সি কলেজের আরেক ছাত্র অভিজিৎ, অর্মত্য সেনের মতোই নোবেল এনে দিয়েছেন ৷ দেশকে গর্বিত করেছেন ৷ তাঁরও বিষয় ছিল অর্থনীতি ৷ মজার কথা ছাত্র জীবনে চুটিয়ে রাজনীতি করা অভিজিৎ একবার গ্রেফতার হন ৷ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময় গ্রেফতার হয়ে রাত কাটাতে হয়েছে তিহার জেলে ৷
এর পাশাপাশি হর গোবিন্দ খোরানা চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য 1968 সালে নোবেল পান ৷ আমেরিকার নাগরিক হলেও তাঁর জন্ম রায়পুরে ৷ 1983 সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পাওয়া সুব্রহ্মণম চন্দ্রশেখরও আমেরিকার নাগরিক ৷ তাঁর জন্ম অবিভক্ত ভারতের লাহোরে ৷ ভেঙ্কি রামাকৃষ্ণন রসায়নে নোবেল পান 2009 সালে ৷ এখন ইংল্যান্ডের বাসিন্দা ভেঙ্কির জন্ম তামিলনাড়ুতে ৷ প্রথমে মার্কিন নাগরিকত্ব নিলেও পরে ইংল্যান্ডের বাসিন্দা হন ভেঙ্কি ৷ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম জনক রোনাল্ড রসের জন্ম আলমোরাতে ৷ 1902 সালে নোবেল পান তিনি ৷ 1907 সালে সাহিত্যে নোবেল পাওয়া রুপাড কিপলিংয়ের জন্ম বোম্বাইতে ৷ 1989 সালে শান্তিতে নোবেল পান দলাই লামা৷ জন্ম তিব্বতে হলেও দলাই লামার সমস্ত কর্মজীবন জুড়েই আছে ভারত৷