হায়দরাবাদ, 28 মে: শতবর্ষ ছুঁতে বাকি ছিল আর চার বছর ৷ 1921 সালে নির্মাণ শুরু হওয়া সংসদ ভবনের দরজা খোলে 1927 সালে ৷ শতবর্ষ ছোঁয়ার আগেই অস্তাচলে সেই ভবন ৷ তার জায়গায় এসেছে ঝাঁ চকচকে সেন্ট্রাল ভিস্তা ৷ যার মধ্যে শুধু নয়া সংসদ ভবনই নয়, থাকছে পিমএও-সহ দেশের কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্রের বর্ণময় উপস্থিতি ৷ অর্থাৎ, এক ছাদ না-হলেও কাছাকাছি আসছে গণতন্ত্রের চালিকাশক্তির সমস্ত ইঞ্জিন ৷
পুরনো সংসদ ভবন ৷ ইতিহাসের সাক্ষী শুধু নয়, ইতিহাসের জন্মদাতা ৷ গণতন্ত্রের পীঠস্থানের ঠিকানা বদলালেও ইতিহাস থেকেই গেল ৷ ইট-কাঠ-পাথরের বিল্ডিং একা হয়েও একা নয়, তাতে পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস ৷ নির্জীব ভবনের প্রত্যেকটি অংশ গল্প বলছে দেশ গড়ার, দেশ বদলের ৷ কিন্তু নয়া সংসদ ভবন বা সেন্ট্রাল ভিস্তা শুধু নয়া ইতিহাসই লিখবে না, অগ্রজের থেকে অনেকাংশেই সে আলাদা ৷
সালটা 2020 ৷ সদ্য দেশে হানা দিয়েছিল কোভিড অতিমারী ৷ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে বিশ্ব কার্যত ধুঁকছিল, বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাপে ছিল ভারতও ৷ তারমধ্যেও সেন্ট্রাল ভিস্তার কাজ বন্ধ করেনি মোদি সরকার ৷ সমালোচনাও হয়েছিল বিস্তর ৷ ভ্যাকসিন, অক্সিজেন প্ল্যান্টের অপ্রতুল অবস্থাতেও এ কোন বিলাসিতা ? প্রশ্ন তুলেছিল দেশের আম-আদমীও ৷ সমস্ত পেরিয়ে কাল দরজা খুলছে সেই সেন্ট্রাল ভিস্তার একাংশের ৷ চালু হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের পীঠস্থান ৷
বর্ধিত আসন ক্ষমতা: 1927 সালে নির্মিত হয়েছিল পুরনো সংসদ ভবন ৷ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার জন্য কখনই এটি ডিজাইন করা হয়নি । 1971 সালের আদমশুমারির পর লোকসভার আসন সংখ্যা 545 হওয়ায়, ভবনের বসার ব্যবস্থা সঙ্কুচিত এবং কষ্টকর হয়ে উঠেছে । নতুন সংসদ ভবন লোকসভায় 888 জন সংসদ সদস্য (এমপি) বসাতে সক্ষম হবে, যা বর্তমান লোকসভার ক্ষমতার তিনগুণ । একইভাবে, নতুন রাজ্যসভায় ভবিষ্যত সাংসদের জন্য অতিরিক্ত স্থানের প্রয়োজনে 384টি আসনের ব্যবস্থা থাকবে ।
সেন্ট্রাল হলের অনুপস্থিতি: পুরনো সংসদ ভবনের মতো নতুন ভবনে সেন্ট্রাল হল থাকবে না । পরিবর্তে, নতুন সংসদ ভবনের লোকসভা হলটি যৌথ অধিবেশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে, এই ধরনের অধিবেশনের সময় অতিরিক্ত চেয়ারের ঘাটতি দূর হবে ।
আরও পড়ুন: মোদির হাতে সেঙ্গল, ঐতিহাসিক রাজদণ্ডেই শুরু নতুন ইতিহাস
ভূমিকম্পরোধী ব্যবস্থা: দিল্লির ক্রমবর্ধমান ভূমিকম্পের কার্যকলাপ বিবেচনা করে, ভূমিকম্প প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এটি জোন 5-এ ওয়েভ সহ্য করতে পারবে ।
ময়ূর এবং পদ্মের থিম: নতুন সংসদ ভবনে লোকসভা এবং রাজ্যসভা আলাদা আলাদা থিম প্রদর্শন করবে। লোকসভা জাতীয় পাখি ময়ূরের থিমে সেজে উঠেছে, রাজ্যসভা সেজে উঠবে জাতীয় ফুল পদ্মের বৈশিষ্ট্যে ।
আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা: হাউসের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য, নতুন সংসদ ভবনে প্রতিটি এমপির আসনের সামনে একটি মাল্টিমিডিয়া ডিসপ্লে থাকবে ।
কম খরচ: পুরনো সংসদ ভবন, আমলাদের বাসস্থান-অফিস, পিএমও আলাদা আলাদা অংশে ছিল । সেন্ট্রাল ভিস্তায় সমস্তই এক জায়গায় এসেছে । ফলে যাতায়াত খরচ একধাক্কায় অনেকটাই কমে যাবে ।
পরিবেশ-বান্ধব উদ্যোগ: নতুন সংসদ ভবন স্থায়িত্ব এবং পরিবেশ-বান্ধবতাকে অগ্রাধিকার দেবে । এটি পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করবে এবং 30 শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে ডিভাইসগুলি অন্তর্ভুক্ত করবে । পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসগুলিকে উন্নীত করার জন্য বৃষ্টির জল সংগ্রহ এবং সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে ।
গণমাধ্যমের সুবিধা: নতুন সংসদ ভবনে গণমাধ্যমের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য মোট 530টি আসনের ব্যবস্থা করা হবে। উভয় হাউসে সাধারণ জনগণের জন্য সংসদীয় কার্যধারা প্রত্যক্ষ করার জন্য গ্যালারি থাকবে, প্রতিটি আসন থেকে স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করবে।
আরও পড়ুন: রবিবার উদ্বোধন নতুন সংসদ ভবনের, কেমন দেখতে সংসদের অন্দরমহল; দেখে নিন এক নজরে
জনবান্ধব নকশা: নতুন সংসদ ভবনের লক্ষ্য জনগণের কাছে আরও পৌঁছে যাওয়া । শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহজে প্রবেশের মাধ্যমে এটিকে আম-আদমীর পার্লামেন্ট হাউসে পরিণত করার প্রস্তুতি চলছে । বিশেষ প্রবেশপথগুলি সাধারণ জনগণকে পাবলিক গ্যালারি এবং কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক গ্যালারিতে পৌঁছনোর অনুমতি দেবে । উপরন্তু, নতুন ভবনে উন্নত অগ্নি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে।
স্থাপত্য নকশা এবং নির্মাণ: নতুন সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজ করছে টাটা প্রজেক্টস লিমিটেড, যার নকশা এইচসিপি ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড। নির্মাণের জন্য মোট এলাকা হল 64,500 বর্গমিটার, যা দিল্লির কেন্দ্রস্থলে একটি আধুনিক স্থাপত্যের বিস্ময় তৈরি করেছে।