কলকাতা, 25 ফেব্রুয়ারি: দোল বা হোলি হল রঙের উৎসব ৷ লাল, নীল, হলুদ, সবুজ থেকে শুরু করে আরও নানা রঙে এই উৎসবে নিজেকে রাঙিয়ে তোলে দেশ ৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পালিত হয় দোল উৎসব ৷ যদিও আমাদের দেশে ব্রজের হোলি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ৷ কিন্তু উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড এবং বিহারেও একেবারেই অন্যরকমভাবে হোলি উৎসব উদযাপনের ঐতিহ্য রয়েছে ( Holi Traditions of Different States) ।
ব্রজের হোলি: সারা দেশের মানুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ব্রজের হোলি । বারসানের লাঠমার হোলিও সমানভাবে বিখ্যাত ৷ সেখানে মহিলারা লাঠি এবং কাপড়ের তৈরি চাবুক দিয়ে পুরুষদের ধরে রঙ মাখাতে যায় । এই হোলির অনুষ্ঠানে অংশ নেয় । গোটা ব্রজ এলাকায় বেশ কিছু দিন ধরে এই প্রথা চলে । মথুরা বৃন্দাবনের পাশাপাশি, ব্রজ অঞ্চলের অন্যান্য জেলাগুলিতেও 15 দিন ধরে হোলি উৎসব আনন্দ এবং উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয় ।
হোলি উৎসব: আমরা যদি উত্তরাখণ্ড অঞ্চলে উদযাপন করা পাহাড়ের হোলির কথা বলি তাহলে কুমায়ুন অঞ্চলের বৈথকি হোলি খুবই জনপ্রিয় । এর পাশাপাশি খড়ি হোলির প্রথাও রয়েছে । এখানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং গানের মাধ্যমে হোলি উৎসব পালিত হয় । মহিলাদের জন্যও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এখানে । হোলির বেশ কয়েক দিন আগে এই কাজ শুরু হয় এবং স্থানীয় শিল্পীরা এতে তাদের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ পান ।
ধুলন্ডি উৎসব: হরিয়ানা রাজ্যে ধুলন্ডি উৎসব অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয় ৷ এখানে হোলিতে দেওর ও বৌদির সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় । হরিয়ানায় দেওরদের বৌদিরা রঙ নিয়ে প্রচণ্ড বিরক্ত করে । এই সময় হরিয়ানার বিভিন্ন এলাকায় হোলির রঙ পুরো মাস ধরে দেওর ও বৌদির গায়ে দেখা যায় ।
ভাগোরিয়া হোলি: ছত্তিশগড় এলাকায় হোলিতে লোকগানের ঐতিহ্য রয়েছে ৷ যেখানে মধ্যপ্রদেশের মালওয়া অঞ্চলের আদিবাসী এলাকায় হোলি অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয় । এখানে ভাগোরিয়া হোলি হিসাবে পালিত হয় । বিহারের ফাগুয়া'ও খুবই অনন্য হয় । এই দিনে মানুষ অনেক মজা করে ।
দোল যাত্রা বা উৎসব: পশ্চিমবঙ্গে দোল যাত্রা মহাসমারহে পালিত হয় ৷ বাঙালিরা চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মদিন হিসেবে রঙ এবং আবির দিয়ে নিজেদের রাঙিয়ে তোলে ৷ এই সময় বাংলার মানুষ বিভিন্ন রঙের পোশাক পরে শোভাযাত্রা বের করে এবং দিনব্যাপী গান গাইতে থাকে । নাচ ও গানের মধ্য দিয়ে রং মেখে পালিত হয় দোল উৎসব ৷
মারাঠিদের রং পঞ্চমী: পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের মারাঠি সম্প্রদায়ের লোকেরা রং পঞ্চমী উদযাপন করে । মারাঠিরা তাদের নিজস্ব উপায়ে দেশের প্রতিটি কোণে রং পঞ্চমী পালন করে । এই দিনে তারা রাধা-কৃষ্ণকে রঙিন আবির নিবেদন করে এবং দিনের বেলা গান বাজানোর পাশাপাশি শোভাযাত্রা বের করে । রং পঞ্চমীকে দেবতাদের হোলি হিসাবেও সম্বোধন করা হয় । রং পঞ্চমীতে মানুষ আকাশের দিকে আবির ছুড়ে হোলি উদযাপন করে । মারাঠিরা বিশ্বাস করে যে এভাবে আবির ছুড়লে তাদের দেব-দেবী খুশি হন । যখন ভগবানকে নিবেদন করা আবির আবার নেমে আসে নীচের দিকে এবং মাটিতে পড়ে, তখন চারপাশের পুরো এলাকা পবিত্র হয়ে যায় বলে মারাঠিদের ধারনা ।
হোলা মহল্লা: পঞ্জাবে হোলির দিনে হোলা মহল্লা পালিত হয় ৷ এই দিনে শিখরা শক্তি প্রদর্শন করে ৷ এঠি তাদের পুরানো ঐতিহ্য । হোলা-মোহাল্লা এমন একটি উৎসব, যা শ্রী আনন্দপুর সাহেবের হোলগড় নামক স্থানে গুরুজি শুরু করেছিলেন । হোল মহল্লার অনুষ্ঠান শুরু করার পিছনে তাদের বীরত্বের পরিচয় দেওয়া হয়, যেখানে পায়ে হেঁটে সশস্ত্র লোক এবং ঘোড়সওয়াররা দুই দলে বিভক্ত হয়ে তাদের বীরত্ব প্রদর্শন করে ।
বসন্তোৎসব: বসন্তোৎসব মূলত তামিলনাড়ুর কামান পোদিগাইয়ের কিউপিডের গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি । হোলির দিনে বিশেষভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । কামদেব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর রতির বিলাপ লোকসঙ্গীতের আকারে গাওয়া হয় । সেই সঙ্গে আগুনে চন্দন নিবেদন করা হয়, যাতে কামদেব দগ্ধ হওয়ার সময় কষ্ট না পান । এরপর কামদেবের পুনরুত্থানের আনন্দে পালিত হয় রঙের এই উৎসব ।
ইয়াওসাং: মণিপুরে এই সময় ইয়াওসাং পালিত হয় । পাঁচ দিনব্যাপী ইয়াওসাং উৎসব হয় ৷ একে মণিপুরের প্রধান উৎসবের মধ্যে গণ্য করা হয় । সব সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে । এই উৎসব ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পাঁচ দিনব্যাপী পালিত হয় ৷ এই উৎসবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সকলের খুবই পছন্দের । সাধারণত এই উৎসব হোলি উদযাপনের সঙ্গে পালিত হয় । সেদিন ছোট ছোট কুঁড়েঘর তৈরি করা হয় । ফাল্গুন পূর্ণিমার দিনে রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকায় নদী বা হ্রদের তীরে কুঁড়েঘরগুলি তৈরি করা হয় । একই সময়ে, রং ওড়ানো হয় ।
অন্যান্য হিন্দিভাষী রাজ্যের মতো গুজরাতে হোলি পালিত হয় ৷ তবে দক্ষিণ গুজরাতের আদিবাসীদের জন্য হোলি একটি বড় উৎসব হিসাবে ধরা হয় ৷ খুব ধুমধাম করে পালিত হয় । একই সময়ে, গোয়ার শিমগোতে রঙ সঙ্গে নিয়ে মিছিল বের করার প্রথা রয়েছে ৷ পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার একটি ঐতিহ্য রয়েছে ।
আরও পড়ুন: দোলের পর ত্বকের যত্ন নিতে জেনে রাখুন কিছু ঘরোয়া টিপস