ETV Bharat / bharat

Espionage in the Political Arena: নজরদারির অজানা ইতিহাস! পদ ছেড়েছিলেন চন্দ্রশেখর; সরতে হয়েছিল নিক্সনকেও

Espionage in the Political Arena of India and World: রাজ্য-রাজনীতিতে নজরদারির অভিযোগ উঠেছে। দাবি, রাজ্যপালের গতিবিধি নাকি নজরে রাখছে রাজ্য পুলিশ। অতীতে উঠেছিল এমন অভিযোগ। রাজনীতির পরিসরে নজরদারি সেই ইতিহাসে ফিরে গেল ইটিভি ভারত।

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 28, 2023, 10:38 PM IST

Updated : Sep 29, 2023, 6:25 AM IST

হায়দরাবাদ, 28 সেপ্টেম্বর: ক্রিকেটে একটা কথার চল আছে, ‘ইউ মিস আই হিট’ । মানে ব্যাট বলকে স্পর্শ করতে না-পারলে বল কিন্তু উইকেটে গিয়ে লাগবে । রাজনৈতিক পরিসরে ক্ষমতায় আসা এবং ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যাপারটাও খানিকটা এরকম । সদাসতর্ক না-থাকলেই বিপদ । পুজোর মুখে রাজ্য-রাজনীতি নতুন করে উত্তাল নজরদারির অভিযোগকে ঘিরে । রাজভবনে নাকি রাজ্য পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছে । সাংবিধানিক প্রধানের কার্যালয় থেকে এমন বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি । তবে রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে চর্চার অন্ত নেই । বিজেপির মতো বিরোধী দল তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি । আবার শাসক শিবির মনে করছে, রাজভবন অকারণে ভীত হয়েছে । এই তরজার মধ্যেই রাজনৈতিক মহলে তাজা হয়ে উঠেছে কিছু স্মৃতি । নজরদারি এবং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ্য প্রভাবে রাষ্ট্রনেতাদের পদত্যাগ পর্যন্ত করতে হয়েছে অতীতে ।

গান্ধিদের বাড়িতে ওরা কারা ?

আটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে জাতীয় রাজনীতিতে বেশ কিছুটা অস্থিরতার জন্ম হয় । মেয়াদ শেষের আগে সরকার পড়ে যায় । প্রধানমন্ত্রীদের পদ ছাড়তে হয় । মাত্র কয়েকমাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন চন্দ্রশেখর । ‘বালিয়ার বাবুসাহেব’ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে এবং পরে অন্য কোনও মন্ত্রিত্ব করেননি । রাজীব গান্ধির নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস বাইরে থেকে চন্দ্রশেখরের সরকারকে সমর্থন করে । কিন্তু সেই জোট কোনও পক্ষের জন্যই সুখের হয়নি বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল । একসময় কংগ্রেস ছেড়ে জনতা দলে যাওয়া সমাজবাদী মননের চন্দ্রশেখর সরকার টিকিয়ে রাখতে পুরোপুরি নির্ভর করতেন কংগ্রেসের উপর । শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি নাকি তাঁকে প্রভাবিত করতে চাইত সব ব্যাপারেই । স্পষ্টবক্তা চন্দ্রশেখরের পক্ষে এ জিনিস হজম করা বেজায় কঠিন ছিল ।

এমনই আবহে কংগ্রেসের তরফ থেকে আসে এক বিস্ফোরক অভিযোগ । অভিযোগ ওঠে, গান্ধি পরিবারের বাড়িতে নাকি উকিঝুঁকি দিতে দেখা গিয়েছে হরিয়ানা পুলিশের দুই আধিকারিককে । কংগ্রেস মনে করে, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা গান্ধিদের গতিবিধি আগাম বুঝে নেওয়ার জন্য এমন কাজ করেছেন । কানে টান পড়লে মাথার আর করার কী থাকে ? ক্ষমতার অলিন্দে ঘুরতে থাকে একটি সম্ভাবনা । আশঙ্কা বললেই ঠিক বলা হবে । সেটা এই যে, নেতার বাড়িতে এই ধরনের নজরদারি কংগ্রেস বরদাস্ত করবে না । সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেবে । এখানেও দলের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলা হয়নি । তবে চন্দ্রশেখর বুঝেছিলেন এভাবে সরকার চালাতে পারবেন না । আর তাই পদ ছেড়ে দেন ।

সময়কাল খুব অল্প হলেও চন্দ্রশেখর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেশ কিছু মনে রাখার মতো কাজ করেছিলেন । সে সময় দেশের আর্থিক পরিস্থিতি মোটেই সন্তোষজনক ছিল না । বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার তলনাতি এসে ঠেকেছিল । এমন অবস্থায় বিশ্বব্যাংকে দেশের সোনা বন্দক রাখার সিদ্ধান্ত নেন চন্দ্রশেখর । রিজার্ভ ব্যাংকের সংগ্রহে থাকা সোনা গচ্ছিত রেখে মোটা অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয় । পাশাপাশি দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে টিএন সেশনকে নিয়োগও করা হয়েছিল চন্দ্রশেখরের সময়ে । দেশের নির্বাচনের ইতিহাস বদলে দিয়েছিলেন সেশন । ভোটার কার্ড দিয়ে ভোট করানোর ভাবনাও তাঁর । রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ভয়ের অন্য নাম হয়ে উঠেছিলেন তিনি । সেশন নিজেই বলতেন, ‘‘আই ইট পলিটিশিয়ানস ফর ব্রেকফাস্ট’’ ।

রিচার্ড নিক্সন ও ওয়াটার গেট:

আমেরিকার রাষ্ট্রপতিদের কাজকর্মের প্রভাব অনেক সময় মার্কিন মুলুক ছেড়ে অন্যত্রও প্রবলভাবে পড়ে । রিচার্ড নিক্সনও ব্যতিক্রম নন । আমেরিকার ইতিহাসে নিক্সনই একমাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি পদত্যাগ করেছিলেন । করতে বাধ্য হয়েছিলেন বললেই ঠিক হবে । পদত্যাগের নেপথ্যেও ছিল এরকমই এক নজরদারির অভিযোগ । সাতের দশক আমেরিকার রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছিল । শুধু রাজনীতিতে নয়, এই দশকের কয়েকটি ঘটনা দেশের আইন ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করেছিল । সুপ্রিম কোর্ট যে আদতেই সুপ্রিম মানে সর্বশক্তিমান সে কথাও প্রমাণিত হয়েছিল এই দশকে ।

আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কতগুলি বিশেষ নিয়ম আছে । তারমধ্যে একটি হল নির্বাচনের দিন। আমেরিকার প্রথম নাগরিককে বেছে নেওয়ার ভোট হয় নভেম্বরের প্রখম মঙ্গলবার । 1972 সালে আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় । তার আগে 17 জুন ঘটে যায় এক ভয়াবহ ঘটনা। আমেরিকার দু’টি দল- ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান । নিক্সন রিপাবলিকান পার্টির নেতা হিসেবে ভোটে জিতে দেশ পরিচালনা করছেন । তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে গুপ্তচর পাঠানোর ।

সেই ঘটনাই ঘটেছিল 17 জুন । ডেমোক্র্যাটদের কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে পাঁচজন । তাদের কাজ ছিল মূলত দু’টো ৷ এক, কয়েকটি বাছাই করা নথি নিয়ে আসতে হবে । দুই, দফতরের ফোনে রেকর্ডিং ডিভাইস বসিয়ে দিয়ে আসতে হবে । সেখান থেকে ফোন কে কাকে কী বলছে সেটা জানতেই এমন ব্যবস্থা । তবে শেষরক্ষা হল না কিছুতেই । দফতরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক রক্ষী সময় থাকতে থাকতেই পুলিশকে খবর দিয়ে দিলেন । পুলিশ এল । একে একে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল । ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট ভবনে এই কার্যালয়টি অবস্থিত বলে এটি ওয়াটারগেট স্ক্যান্ডেল নামে পরিচিত ।

আরও পড়ুন: রাজভবনের পুলিশি নজরদারির অভিযোগ, কী বলছে রাজনৈতিক মহল ?

প্রথম দিকে সকলেরই মনে হয়েছিল এটা সাধারণ চুরির ঘটনা । তবে তদন্ত খানিক এগোতেই বোঝা যায় সাধারণ চুরির নেপথ্যে আছে অসাধারণ কিছু ঘটনা । ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টাইন এবং বব উডওর্য়াড দীর্ঘ সময় ধরে অনুসন্ধান চালাতে থাকেন । এফবিআই’ও আসরে নামে । এর মধ্যে অবশ্য আবারও নির্বাচনে জিতে গিয়েছেন নিক্সন । পরের বছরের গোড়ার দিকে কয়েকটি সূত্র দাবি করে, এই পাঁচজনেকে ওয়াটারগেট বিল্ডিংয়ে পাঠিয়েছিল হোয়াইট হাউজ । প্রথম দিকে অভিযোগ মানতে চায়নি নিক্সন প্রশাসন । পরে ওয়াশিংটন পোস্টে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে । তা থেকে এই কাণ্ডের সঙ্গে নিক্সন এবং তাঁর প্রশাসনের বহু কেষ্টবিষ্টুর নাম জড়াতে থাকে।

আরও পরে মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে । দাবি ওঠে, গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ’কে ব্যবহার করে এফবিআইয়ের তদন্তকে প্রভাবিত করা হচ্ছে । আরও দাবি ওঠে, সিআইএ’কে কাজে লাগানোর প্রমাণ হিসেবে বেশ কিছু অডিও ক্যাসেটও আছে । সেগুলি আপাতত নিক্সন প্রশাসন প্রকাশ্যে আনছে না । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শেষমেশ কয়েকটি অডিয়ো রেকর্ডিং দিনের আলো দেখে । তা থেকে ঘটনার সঙ্গে নিক্সনের যোগ থাকার বড় ইঙ্গিত মিলেছিল । এরপর সক্রিয় হয় মার্কিন কংগ্রেস । রাষ্ট্রপতিকে গদিচ্যুত করতে ইমপিচমেন্ট আনার প্রক্রিয়া শুরু হয় । মার্কিন সংসদের এই সংক্রান্ত কমিটি ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করার সবুজ সংকেতও দিয়ে দেয় । বিপদ বুঝে পদ ছেড়ে দেন নিক্সন । সমাপ্তি হয় ওয়াটার গেট কাণ্ডের ।

হায়দরাবাদ, 28 সেপ্টেম্বর: ক্রিকেটে একটা কথার চল আছে, ‘ইউ মিস আই হিট’ । মানে ব্যাট বলকে স্পর্শ করতে না-পারলে বল কিন্তু উইকেটে গিয়ে লাগবে । রাজনৈতিক পরিসরে ক্ষমতায় আসা এবং ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যাপারটাও খানিকটা এরকম । সদাসতর্ক না-থাকলেই বিপদ । পুজোর মুখে রাজ্য-রাজনীতি নতুন করে উত্তাল নজরদারির অভিযোগকে ঘিরে । রাজভবনে নাকি রাজ্য পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছে । সাংবিধানিক প্রধানের কার্যালয় থেকে এমন বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি । তবে রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে চর্চার অন্ত নেই । বিজেপির মতো বিরোধী দল তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি । আবার শাসক শিবির মনে করছে, রাজভবন অকারণে ভীত হয়েছে । এই তরজার মধ্যেই রাজনৈতিক মহলে তাজা হয়ে উঠেছে কিছু স্মৃতি । নজরদারি এবং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ্য প্রভাবে রাষ্ট্রনেতাদের পদত্যাগ পর্যন্ত করতে হয়েছে অতীতে ।

গান্ধিদের বাড়িতে ওরা কারা ?

আটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে জাতীয় রাজনীতিতে বেশ কিছুটা অস্থিরতার জন্ম হয় । মেয়াদ শেষের আগে সরকার পড়ে যায় । প্রধানমন্ত্রীদের পদ ছাড়তে হয় । মাত্র কয়েকমাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন চন্দ্রশেখর । ‘বালিয়ার বাবুসাহেব’ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে এবং পরে অন্য কোনও মন্ত্রিত্ব করেননি । রাজীব গান্ধির নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস বাইরে থেকে চন্দ্রশেখরের সরকারকে সমর্থন করে । কিন্তু সেই জোট কোনও পক্ষের জন্যই সুখের হয়নি বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল । একসময় কংগ্রেস ছেড়ে জনতা দলে যাওয়া সমাজবাদী মননের চন্দ্রশেখর সরকার টিকিয়ে রাখতে পুরোপুরি নির্ভর করতেন কংগ্রেসের উপর । শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি নাকি তাঁকে প্রভাবিত করতে চাইত সব ব্যাপারেই । স্পষ্টবক্তা চন্দ্রশেখরের পক্ষে এ জিনিস হজম করা বেজায় কঠিন ছিল ।

এমনই আবহে কংগ্রেসের তরফ থেকে আসে এক বিস্ফোরক অভিযোগ । অভিযোগ ওঠে, গান্ধি পরিবারের বাড়িতে নাকি উকিঝুঁকি দিতে দেখা গিয়েছে হরিয়ানা পুলিশের দুই আধিকারিককে । কংগ্রেস মনে করে, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা গান্ধিদের গতিবিধি আগাম বুঝে নেওয়ার জন্য এমন কাজ করেছেন । কানে টান পড়লে মাথার আর করার কী থাকে ? ক্ষমতার অলিন্দে ঘুরতে থাকে একটি সম্ভাবনা । আশঙ্কা বললেই ঠিক বলা হবে । সেটা এই যে, নেতার বাড়িতে এই ধরনের নজরদারি কংগ্রেস বরদাস্ত করবে না । সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেবে । এখানেও দলের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলা হয়নি । তবে চন্দ্রশেখর বুঝেছিলেন এভাবে সরকার চালাতে পারবেন না । আর তাই পদ ছেড়ে দেন ।

সময়কাল খুব অল্প হলেও চন্দ্রশেখর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেশ কিছু মনে রাখার মতো কাজ করেছিলেন । সে সময় দেশের আর্থিক পরিস্থিতি মোটেই সন্তোষজনক ছিল না । বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার তলনাতি এসে ঠেকেছিল । এমন অবস্থায় বিশ্বব্যাংকে দেশের সোনা বন্দক রাখার সিদ্ধান্ত নেন চন্দ্রশেখর । রিজার্ভ ব্যাংকের সংগ্রহে থাকা সোনা গচ্ছিত রেখে মোটা অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয় । পাশাপাশি দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে টিএন সেশনকে নিয়োগও করা হয়েছিল চন্দ্রশেখরের সময়ে । দেশের নির্বাচনের ইতিহাস বদলে দিয়েছিলেন সেশন । ভোটার কার্ড দিয়ে ভোট করানোর ভাবনাও তাঁর । রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ভয়ের অন্য নাম হয়ে উঠেছিলেন তিনি । সেশন নিজেই বলতেন, ‘‘আই ইট পলিটিশিয়ানস ফর ব্রেকফাস্ট’’ ।

রিচার্ড নিক্সন ও ওয়াটার গেট:

আমেরিকার রাষ্ট্রপতিদের কাজকর্মের প্রভাব অনেক সময় মার্কিন মুলুক ছেড়ে অন্যত্রও প্রবলভাবে পড়ে । রিচার্ড নিক্সনও ব্যতিক্রম নন । আমেরিকার ইতিহাসে নিক্সনই একমাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি পদত্যাগ করেছিলেন । করতে বাধ্য হয়েছিলেন বললেই ঠিক হবে । পদত্যাগের নেপথ্যেও ছিল এরকমই এক নজরদারির অভিযোগ । সাতের দশক আমেরিকার রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছিল । শুধু রাজনীতিতে নয়, এই দশকের কয়েকটি ঘটনা দেশের আইন ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করেছিল । সুপ্রিম কোর্ট যে আদতেই সুপ্রিম মানে সর্বশক্তিমান সে কথাও প্রমাণিত হয়েছিল এই দশকে ।

আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কতগুলি বিশেষ নিয়ম আছে । তারমধ্যে একটি হল নির্বাচনের দিন। আমেরিকার প্রথম নাগরিককে বেছে নেওয়ার ভোট হয় নভেম্বরের প্রখম মঙ্গলবার । 1972 সালে আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় । তার আগে 17 জুন ঘটে যায় এক ভয়াবহ ঘটনা। আমেরিকার দু’টি দল- ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান । নিক্সন রিপাবলিকান পার্টির নেতা হিসেবে ভোটে জিতে দেশ পরিচালনা করছেন । তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে গুপ্তচর পাঠানোর ।

সেই ঘটনাই ঘটেছিল 17 জুন । ডেমোক্র্যাটদের কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে পাঁচজন । তাদের কাজ ছিল মূলত দু’টো ৷ এক, কয়েকটি বাছাই করা নথি নিয়ে আসতে হবে । দুই, দফতরের ফোনে রেকর্ডিং ডিভাইস বসিয়ে দিয়ে আসতে হবে । সেখান থেকে ফোন কে কাকে কী বলছে সেটা জানতেই এমন ব্যবস্থা । তবে শেষরক্ষা হল না কিছুতেই । দফতরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক রক্ষী সময় থাকতে থাকতেই পুলিশকে খবর দিয়ে দিলেন । পুলিশ এল । একে একে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল । ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট ভবনে এই কার্যালয়টি অবস্থিত বলে এটি ওয়াটারগেট স্ক্যান্ডেল নামে পরিচিত ।

আরও পড়ুন: রাজভবনের পুলিশি নজরদারির অভিযোগ, কী বলছে রাজনৈতিক মহল ?

প্রথম দিকে সকলেরই মনে হয়েছিল এটা সাধারণ চুরির ঘটনা । তবে তদন্ত খানিক এগোতেই বোঝা যায় সাধারণ চুরির নেপথ্যে আছে অসাধারণ কিছু ঘটনা । ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টাইন এবং বব উডওর্য়াড দীর্ঘ সময় ধরে অনুসন্ধান চালাতে থাকেন । এফবিআই’ও আসরে নামে । এর মধ্যে অবশ্য আবারও নির্বাচনে জিতে গিয়েছেন নিক্সন । পরের বছরের গোড়ার দিকে কয়েকটি সূত্র দাবি করে, এই পাঁচজনেকে ওয়াটারগেট বিল্ডিংয়ে পাঠিয়েছিল হোয়াইট হাউজ । প্রথম দিকে অভিযোগ মানতে চায়নি নিক্সন প্রশাসন । পরে ওয়াশিংটন পোস্টে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে । তা থেকে এই কাণ্ডের সঙ্গে নিক্সন এবং তাঁর প্রশাসনের বহু কেষ্টবিষ্টুর নাম জড়াতে থাকে।

আরও পরে মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে । দাবি ওঠে, গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ’কে ব্যবহার করে এফবিআইয়ের তদন্তকে প্রভাবিত করা হচ্ছে । আরও দাবি ওঠে, সিআইএ’কে কাজে লাগানোর প্রমাণ হিসেবে বেশ কিছু অডিও ক্যাসেটও আছে । সেগুলি আপাতত নিক্সন প্রশাসন প্রকাশ্যে আনছে না । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শেষমেশ কয়েকটি অডিয়ো রেকর্ডিং দিনের আলো দেখে । তা থেকে ঘটনার সঙ্গে নিক্সনের যোগ থাকার বড় ইঙ্গিত মিলেছিল । এরপর সক্রিয় হয় মার্কিন কংগ্রেস । রাষ্ট্রপতিকে গদিচ্যুত করতে ইমপিচমেন্ট আনার প্রক্রিয়া শুরু হয় । মার্কিন সংসদের এই সংক্রান্ত কমিটি ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করার সবুজ সংকেতও দিয়ে দেয় । বিপদ বুঝে পদ ছেড়ে দেন নিক্সন । সমাপ্তি হয় ওয়াটার গেট কাণ্ডের ।

Last Updated : Sep 29, 2023, 6:25 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.