নিউদিল্লি, 26 এপ্রিল : দেশের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভ্যাকসিন নিয়ে বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ ফেজ 3 স্ট্র্যাটেজি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ 1 মে থেকে 18 বছর ও তার বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ছাড়পত্র দেয় মোদি সরকার ৷ তবে এর পাশাপাশি জানানো হয় যে, এবার থেকে খোলা বাজারেই মিলবে ভ্যাকসিন ৷ ভারতে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সংস্থা সিরাম ইনস্টিটউট আর ভারত বায়োটেক জানায়, রাজ্য সরকার আর প্রাইভেট হাসপাতালগুলি সরাসরি তাদের থেকে ভ্যাকসিন কিনতে পারবে ৷ কিন্তু তার দাম কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনায় বেশি ৷ একই দেশে কেন্দ্রীয় সরকার আর বাকি রাজ্যগুলির জন্য ভ্যাকসিনের দাম আলাদা কেন, এই প্রশ্নে তোলপাড় হয় সারা দেশ ৷ বিরোধিতা করেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা ৷
স্বভাবতই দেশজুড়ে চাপের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্যাকসিন নীতি ঠিক কী, তা পরিষ্কার করে বোঝাতে গতকাল একটি ফেসবুক পোস্ট করেন তিনি ৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ফেসবুক পোস্ট-
চার পৃষ্ঠার দীর্ঘ এই পোস্টে তিনি জানান কেন্দ্রীয় সরকার যে দামে ভ্যাকসিন কিনতে পারবে, ওই একই ভ্যাকসিন কিনতে রাজ্য সরকারকে বেশি দাম দিতে হবে এই তথ্য ভুল, আইনত মিথ্যা ৷ আর কেন্দ্রীয় সরকার কাউকে সরাসরি ভ্যাকসিন দিতে পারে না ৷
উৎপাদিত ভ্যাকসিনের 50% কোটায় পাওয়া ভ্যাকসিন কেন্দ্রীয় সরকার একটি নির্দিষ্ট দামে পাবে ৷ আর ফেজ-3 স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী সেই 50% কোটা থেকে বিনামূল্যে সব রাজ্যকে ভ্যাকসিন পাঠাবে কেন্দ্র ৷ তাই কেন্দ্র যে দামে ভ্যাকসিন পাচ্ছে, রাজ্য সেই দামে পাচ্ছে না, এই তথ্য ভুল ৷
বাকি 50% কোটা কর্পোরেট আর প্রাইভেট সেক্টরের জন্য় ৷ এতে রাজ্য সরকার একদিকে যেমন ফ্রি-তে ভ্যাকসিন পাওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য উৎস পাচ্ছে ৷ অন্যদিকে সরাসরি ভ্যাকসিন সংস্থার কাছ থেকেও ভ্যাকসিন কিনতে পারবে, দামও ঠিক করবে তারা নিজেরাই ৷ এর ফলে খুব তাড়াতাড়ি দেশের প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ করা যাবে ৷
বহু রাজ্যই নাকি তাঁকে খোলা বাজারে ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়ে আবেদন জানিয়েছে ৷ তাই এই বাকি 50% কোটা-এর বাণিজ্যিকরণের সিদ্ধান্ত ৷ এতে রাজ্য সরকার স্বাধীনতা পাচ্ছে ৷
তবে যাঁরা ভ্যাকসিন পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের সবাইকে ফ্রি-তে ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজ্যের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করবে কেন্দ্র, আশ্বাসবাণী হর্ষ বর্ধনের ৷ আর যাঁরা প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে বেশি দাম দিয়ে ভ্যাকসিন নিতে সক্ষম, তাঁরাও এবার ভ্যাকসিনেশনের সুবিধে নিতে পারবেন ৷
সুতরাং রাজ্যের ‘নালিশের’ কোনও যথাযথ যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি ৷
ভ্যাকসিনের দামে বৈষম্য
ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদক সিরাম তাদের কোভিশিল্ড রাজ্যকে বিক্রি করবে 400 টাকায় আর প্রাইভেট হাসপাতালগুলিকে 600 টাকায় ৷ ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকিসনের জন্য রাজ্যকে দিতে হবে 600 টাকা আর প্রাইভেট হাসপাতালগুলিকে 1200 টাকা ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারকে ওই সংস্থাগুলি 150 টাকাতেই ভ্যাকসিন বিক্রি করবে ৷ শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে ভ্যাকসিন উৎপাদক সংস্থাগুলি ৷
রাজনৈতিক তরজা-
ভ্যাকসিনের দামের এই বৈষম্য নিয়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে ছ'টি প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয় ৷ কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা হর্ষ বর্ধনের এই পোস্টকে কটাক্ষ করে টুইটে লেখেন, "মিথ্যে চাপা দিতে অর্থহীন শব্দে ভর্তি চার পাতার বিবৃতি দিতে হয় একজনকে ৷ সত্য সব সময় সহজ ৷" স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাঁর পোস্টে 1 মে থেকে 18 বছর ও তার বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিনের বিষয়টিও পরিষ্কার করে জানান ৷ সেই তথ্যকেও রণদীপ ভুলে ভরা তথ্য বলে চিহ্নিত করেন ৷
আরও পড়ুন: দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে ভারতে ভ্যাকসিনের কাঁচামাল পাঠানোর সিদ্ধান্ত আমেরিকার
পোস্টে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ
কারোর নাম উল্লেখ না করেই হর্ষ বর্ধন তাঁর পোস্টে লেখেন, আমি বাধ্য হচ্ছি এটা বলতে যে, ভ্যাকসিনেশন নিয়ে বহু রাজনৈতিক নেতারা অহেতুক রাজনীতি করছেন ৷ তাঁরা প্রতিটি পদক্ষেপে ভ্যাকসিনের প্রভাব আর দাম নিয়ে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন ৷ এটা দুঃখজনক ৷ 50% কোটা-র ফলে রাজ্যগুলিই সুবিধে পাবে ৷ রাজ্য সরকার নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার স্বাধীনতা পাবে ৷