নৈনিতাল, 31 অগস্ট: উত্তরাখণ্ডের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ৷ যেখানে শেখার ইচ্ছে থাকলেও ভৌগোলিক কারণে অনেক সময়ই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয় খুদেরা ৷ সেখানেই এক অনন্য উদ্যোগ যাবতীয় বাধা অতিক্রম করে শিক্ষার দরজা খুলে দিয়েছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য । তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে ঘোড়া লাইব্রেরি ৷
একটি ঘোড়ার পিঠে চাপানো সারি সারি বই ৷ সেই বই নিয়েই ঘোড়াটি উঁচু-নিচু রাস্তা পেরিয়ে হেঁটে চলেছে নৈনিতালের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ৷ আর তাকে দাঁড় করিয়ে ইচ্ছে মতো বই হাতে তুলে নিচ্ছে ছোটরা ৷ গ্রামীণ যুবকদের এই উদ্ভাবনী প্রয়াস শিক্ষাকে সহজলভ্য করে তোলার পাশাপাশি সম্প্রদায়ের সহযোগিতাতেও বিশেষ ভাবে এগিয়ে এসেছে ৷
ঐতিহ্যগতভাবে, লাইব্রেরিগুলি হল নিস্তব্ধতার অভয়ারণ্য, যেখানে পাঠকরা বইয়ের পৃষ্ঠাগুলিতে চালান অনুসন্ধান । হিমালয় ভূখণ্ডে নয়া এই ভাবনা শিক্ষাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে । ঘোড়া লাইব্রেরির লক্ষ্য হল, শিশুদের কাছে সাহিত্যের ভান্ডার পৌঁছে দেওয়া এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা । সংকল্প ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সহযোগিতায় এই উদ্যোগ নৈনিতালের দূরবর্তী কোটাবাগ উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত বাঘনি, জালনা, মহলধুরা, আলেখ, গাউটিয়া, ধিনভাখরক এবং বাঁসির মতো গ্রামে তরুণ শিক্ষার্থীদের পড়ার উপকরণ সরবরাহ করে ।
এই উদ্যোগটি পাহাড়ি শিশুদের জন্য একটি লাইফলাইন হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে, বিশেষ করে ছুটির দিনে এবং বর্ষাকালে । অবিরাম বৃষ্টি এবং মেঘের বিস্ফোরণে স্কুল বন্ধ হয়ে থাকে দীর্ঘদিন ৷ নানা বিপর্যয়ের কারণে নানা সময়ে উত্তরাখণ্ড জুড়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় । এই অস্থিরতার মধ্যে ঘোড়া লাইব্রেরি শিশুদের শিক্ষার জন্য একটি আশার আলো হয়ে আবির্ভূত হয়েছে । শুভম এবং সুভাষের মতো স্থানীয় যুবকদের নিবেদিত প্রচেষ্টা নিশ্চিত করেছে যে বিপর্যয়ের মুখেও শিক্ষা নিরবচ্ছিন্ন থাকবে । চ্যালেঞ্জের মধ্যেই শিক্ষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য তাঁদের এই সংকল্প গ্রামীণ শিশুদের মধ্যে কৌতূহল ও উদ্দীপনার স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে তুলেছে ।
আরও পড়ুন: ছুটি মঞ্জুর হয়নি বলে মিলছে না বেতন, মমতার কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষকের
শুভম ও তাঁর সহকর্মী এই উদ্যোগের পিছনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন । সাম্প্রতিক উত্তরাখণ্ড বিপর্যয়ের পরে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোটরসাইকেল-ভিত্তিক বই বিতরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল ৷ সেটাই এ বার পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ঘোড়া লাইব্রেরি ৷ এই উদ্যোগের পথিকৃত শুভম বাধনী ঘোড়া লাইব্রেরি তৈরি করেছেন । এটি বাঘনী, ছাদা এবং জালনার স্থানীয় যুবক, শিক্ষাবিদ এবং অভিভাবকদের সহযোগিতার মাধ্যমে তৈরি করা হয় ৷ প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রামসভা জালনার কবিতা রাওয়াত এবং বাধনীর সুভাষ বাধনীর সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে প্রচারটি গতি লাভ করে । সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও গ্রামবাসীরা এই উদ্যোগে শামিল হন ৷ পিতামাতারা স্বেচ্ছায় তাঁদের ঘোড়াগুলিকে মোবাইল লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহারে সারাদিনের জন্য ছেড়ে দিতেন ৷
শুভম বাধনির কথায়, "আমি একটি চলমান লাইব্রেরি শুরু করি, যার নাম পরে 'ঘোড়া লাইব্রেরি' রাখা হয় । এটি কয়েকটি গ্রামের কিছু যুবক এবং স্থানীয় শিক্ষকের অনুপ্রেরণার সাহায্যে শুরু করা হয়েছিল ৷"