ETV Bharat / bharat

গ্রহণ করলেই নিরাময় হবে, কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এসকে কৌলের

Justice Kaul on Kashmir Issue: সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌল, যিনি কাশ্মীরের বাসিন্দা এবং যিনি 370 ধারা বাতিলকে বহাল রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ছিলেন, তিনি ইটিভি ভারত-কে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ৷ কাশ্মীর-সহ একাধিক বিষয়ে নিজের মতামত তিনি জানিয়েছেন ইটিভি ভারত-এর সুমিত সাক্সেনাকে ৷

Justice S K Kaul
Justice S K Kaul
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 30, 2023, 4:58 PM IST

নয়াদিল্লি, 30 ডিসেম্বর: সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কৌল ইটিভি ভারত-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কাশ্মীরী পণ্ডিতদের উপত্যকা ছেড়ে চলে আসা নিয়ে জানিয়েছেন যে কোনও অপরাধমূলক প্রভাব না থাকলেও এই ঘটনায় ভুল হয়েছে, তা স্বীকার করা উচিত ৷ তাহলে যাঁরা এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তাঁদের অন্তত কিছু স্বান্তনা দেওয়া যাবে ৷

বিচারপতি কৌল জানিয়েছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে সেখানে পুনর্মিলনের একটি পথ রয়েছে ও কাশ্মীরের লোকেদের তাঁদের শিকড়ে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে । কাশ্মীরে যাঁদের সংখ্যা বেশি, তাঁদের উচিত যাঁরা সংখ্যায় কম, তাঁদের আপন করে নেওয়া ৷

এছাড়াও তিনি একাধিক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন ৷ সেগুলিই তুলে ধরা হল এখানে -

প্রশ্ন: আপনি জানিয়েছেন যে কাশ্মীরে আপনার পুড়ে যাওয়া বাড়িটি তিনি নতুন করে তৈরি করবেন ৷ এই বিষয়ে কি বিস্তারিত বলবেন ?

উত্তর: আমরা সমস্যার শুরুতে দু’টি কটেজ হারিয়েছিলাম (কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাশ্মীর ছাড়ার) ৷ কিছু বিদ্রোহী সেখানে লুকিয়ে ছিল এবং যখন পুলিশ সেখানে যায়, তারা এটি (বাড়ি) জ্বালিয়ে দেয় । 2005 সালে যখন সবকিছু কমবেশি শেষ হয়ে গিয়েছিল, তখন একটি... ৷ আমি মনে করি না যে এটা বিদ্রোহীদের কারণে হয়েছে ৷ সরকার এটা অধিগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিল এবং কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিও এতে আগ্রহী ছিলেন ৷ কিন্তু আমরা বাধা দিই । আমার মনে হয় যে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল যে আর ফিরে আসবেন না... । আমরা হসপিটালিটি সেক্টরের জন্য বাড়িটি নতুনভাবে তৈরি করে দিয়েছি ৷ আমি 34 বছর পর ওই বাড়িতে থেকেছি । বাড়িতে দুই সপ্তাহ থেকেছি । আমি মনে করি কয়েক বছরে (কাশ্মীরে) অনেক উন্নতি হয়েছে ৷ সকলে বুঝতে পেরেছে যে যা হয়েছে তা কাটিয়ে উঠে সকলকে একসঙ্গে নিয়ে পথ চলাই বাস্তববাদ ৷

প্রশ্ন: ধারা 370 নিয়ে রায় লেখার সময় কি আপনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন ?

উত্তর: একজন বিচারপতি হিসাবে আপনি এই ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য প্রশিক্ষিত ৷ এই বিষয়টি আমার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল ৷ তবে আমার চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়ায় আইনি দিকগুলি কখনোই আমার মনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না । আমি কাশ্মীরের ইতিহাস সম্পর্কে আমার জ্ঞান ব্যবহার করেই এই রায় দিয়েছি ৷ আমি যা লিখেছিলাম, সেখানে উপসংহার খুব আবেগপ্রবণ ছিল ৷ বছর দুয়েক আগে যখন শুনানি শুরু হয়, সেই সময় থেকেই আমার মনে হয়েছিল যে আমাদের অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে । 1947-এর পরের মতো ওই সময়ও লোকেরা আরও ক্ষুব্ধ ছিল এবং কিছু ঘটনা ঘটেছিল ৷ কিন্তু সভ্যতা তো এগিয়ে গিয়েছে । সভ্যতাকে এগিয়ে যেতে হবে, অন্যথায় যা ঘটেছে, তা সেখানেই থেকে যাবে ৷ যা ঘটেছে, সেটাকে মেনে নিলে, সেটাই আসল নিরাময়ের প্রক্রিয়া হবে ৷ তারা যেমন বলে যে এতে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য 30 বছরের প্রমাণ নাও থাকতে পারে ৷ কিন্তু অপরাধমূলক প্রভাব ছাড়াই ঘটেছে এমন ভুলকে মেনে নেওয়া সেই ব্যক্তিদের স্বান্তনা দেবে, যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন ৷

প্রশ্ন: অনেক বছর কেটে যাওয়ার পর কি আর নিরাময় সম্ভব ? আপনি কী মনে করেন ?

উত্তর: আমি তাই বিশ্বাস করি ৷ চলে যাওয়া মানুষগুলো যে হঠাৎ করে ফিরে আসবে, এমনটা তো নয় । তাঁরা তাঁদের জীবনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন । আমি দ্বিতীয় প্রজন্মের অনেককে জানি, যাঁরা তাঁদের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে অন্যত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেটা বিদেশে বা দেশের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে । কিন্তু তাঁরা তাঁদের মতামত প্রকাশ করেন যে তাঁরা ফিরে চান ৷ কারণ, তাঁদের শিকড় সেখানে রয়েছে । তাঁরা যাতে সেখানে (কাশ্মীর) যেতে পারেন, তার প্রয়োজনীয় পরিবেশ আমাদের তৈরি করতে হবে ৷ তবেই নিরাময় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে ।

প্রশ্ন: কাশ্মীরে যাঁদের সংখ্য়া বেশি, তাঁরা কি যাঁদের সংখ্যা কম তাঁদের আপন করে নেবেন ? আপনার কী মনে হয় ?

উত্তর: আমি বিশ্বাস করি এটা হওয়া উচিত । আমি বিশ্বাস করি এটা ঘটবে ৷ এমন মানুষ অবশ্যই আছেন, যাঁরা শান্তি পছন্দ করেন না ৷ কিন্তু এই প্রক্রিয়ার 30 বছরের মধ্যে একটি নতুন প্রজন্ম বড় হয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভালো সময় দেখেননি । তাঁরা তাঁদের মা-বাবার কাছ থেকে এটা শুনেছেন এবং আমি অনুভব করি যে একসঙ্গে থাকা আরও ভালো হতে পারে ৷ তা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে ।

প্রশ্ন: ধারা 370 রায় নিয়ে সমালোচকরা জানিয়েছেন যে এই রায় সাংবিধানিক কাঠামোর উপর প্রভাব ফেলেছে ৷ আর 370 ধারা এমনই ছিল না ৷ বরং এর নির্দিষ্ট মূল্য ছিল । এই নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী ?

উত্তর: ধারা 370 সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি আদেশ জারি করার মাধ্যমে আরও অনেক দিকের সঙ্গে এটাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ৷ তখন সবাই এটা গ্রহণ করেছিল । তখন এটা একটি খোলসের ভিতরে ছিল ৷ তার ভিতরেও কিছু ছিল ৷ দারুণ বেশি কিছু নয় ৷ কিন্তু যখন রাজনৈতিক ব্যবস্থা সিদ্ধান্ত নেয় যে একটি ক্ষণস্থায়ী বিধান এখন তার উদ্দেশ্য পূরণ করেছে এবং এটি শেষ করা উচিত, তখন এটি শেষ করা হয়েছিল… । আসল প্রশ্ন ছিল, কীভাবে এটি শেষ করা হবে ৷ সম্ভবত এই প্রক্রিয়ার আরো সমস্যা ছিল ৷ আর পাঁচজন বিচারপতির মনে হয়েছে যে এটি একটি পদ্ধতি হতে পারে শেষ করার ৷ আর সেটাকে বহাল রাখা হয়েছে ।

উল্লেখ্য, বিচারপতি কৌল চলতি মাসের শুরুতে অবসর নিয়েছেন ৷ 1958 সালের 26 ডিসেম্বর তাঁর জন্ম ৷ তিনি 1982 সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ল সেন্টার থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ওই বছর 15 জুলাই দিল্লির বার কাউন্সিলে অ্যাডভোকেট হিসেবে নথিভুক্ত হন ৷ 1999 সালের ডিসেম্বরে তিনি একজন সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসাবে মনোনীত হন । 2001 সালের মে মাসে বিচারপতি কউলকে দিল্লি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে উন্নীত করা হয় ৷ 2003 সালের 2 মে তাঁকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয় ।

তিনি 2013 সালের 1 জুন তিনি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে নিযুক্ত হন ৷ বিচারপতি কৌল 17 ফেব্রুয়ারি 2017-তে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন । তিনি শীর্ষ আদালতের সেই বেঞ্চের অংশ ছিলেন, যা বর্তমান আইন অনুযায়ী সমলিঙ্গ বিবাহের আবেদন খারিজ করে দেয় ৷ ওই রায়ে শীর্ষ আদালত জানায়, মামলাটি কঠোরভাবে আইনি নয় ৷ তবে সামাজিক সমস্যা জড়িত৷ সরকার চাইলে ভবিষ্যতে এই অধিকার কার্যকর করার জন্য একটি আইন প্রবর্তন করতে পারে ।

আরও পড়ুন:

  1. বছর শেষে ফিরে দেখা 2023 সালে সুপ্রিম কোর্টের 10 গুরুত্বপূর্ণ রায়
  2. সংবিধানের অনুচ্ছেদ 370 বাতিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়ের 10টি মূল বক্তব্য
  3. 370 ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক নয়, জম্মু ও কাশ্মীরের মামলায় জানাল শীর্ষ আদালত

নয়াদিল্লি, 30 ডিসেম্বর: সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কৌল ইটিভি ভারত-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কাশ্মীরী পণ্ডিতদের উপত্যকা ছেড়ে চলে আসা নিয়ে জানিয়েছেন যে কোনও অপরাধমূলক প্রভাব না থাকলেও এই ঘটনায় ভুল হয়েছে, তা স্বীকার করা উচিত ৷ তাহলে যাঁরা এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তাঁদের অন্তত কিছু স্বান্তনা দেওয়া যাবে ৷

বিচারপতি কৌল জানিয়েছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে সেখানে পুনর্মিলনের একটি পথ রয়েছে ও কাশ্মীরের লোকেদের তাঁদের শিকড়ে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে । কাশ্মীরে যাঁদের সংখ্যা বেশি, তাঁদের উচিত যাঁরা সংখ্যায় কম, তাঁদের আপন করে নেওয়া ৷

এছাড়াও তিনি একাধিক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন ৷ সেগুলিই তুলে ধরা হল এখানে -

প্রশ্ন: আপনি জানিয়েছেন যে কাশ্মীরে আপনার পুড়ে যাওয়া বাড়িটি তিনি নতুন করে তৈরি করবেন ৷ এই বিষয়ে কি বিস্তারিত বলবেন ?

উত্তর: আমরা সমস্যার শুরুতে দু’টি কটেজ হারিয়েছিলাম (কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাশ্মীর ছাড়ার) ৷ কিছু বিদ্রোহী সেখানে লুকিয়ে ছিল এবং যখন পুলিশ সেখানে যায়, তারা এটি (বাড়ি) জ্বালিয়ে দেয় । 2005 সালে যখন সবকিছু কমবেশি শেষ হয়ে গিয়েছিল, তখন একটি... ৷ আমি মনে করি না যে এটা বিদ্রোহীদের কারণে হয়েছে ৷ সরকার এটা অধিগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিল এবং কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিও এতে আগ্রহী ছিলেন ৷ কিন্তু আমরা বাধা দিই । আমার মনে হয় যে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল যে আর ফিরে আসবেন না... । আমরা হসপিটালিটি সেক্টরের জন্য বাড়িটি নতুনভাবে তৈরি করে দিয়েছি ৷ আমি 34 বছর পর ওই বাড়িতে থেকেছি । বাড়িতে দুই সপ্তাহ থেকেছি । আমি মনে করি কয়েক বছরে (কাশ্মীরে) অনেক উন্নতি হয়েছে ৷ সকলে বুঝতে পেরেছে যে যা হয়েছে তা কাটিয়ে উঠে সকলকে একসঙ্গে নিয়ে পথ চলাই বাস্তববাদ ৷

প্রশ্ন: ধারা 370 নিয়ে রায় লেখার সময় কি আপনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন ?

উত্তর: একজন বিচারপতি হিসাবে আপনি এই ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য প্রশিক্ষিত ৷ এই বিষয়টি আমার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল ৷ তবে আমার চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়ায় আইনি দিকগুলি কখনোই আমার মনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না । আমি কাশ্মীরের ইতিহাস সম্পর্কে আমার জ্ঞান ব্যবহার করেই এই রায় দিয়েছি ৷ আমি যা লিখেছিলাম, সেখানে উপসংহার খুব আবেগপ্রবণ ছিল ৷ বছর দুয়েক আগে যখন শুনানি শুরু হয়, সেই সময় থেকেই আমার মনে হয়েছিল যে আমাদের অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে । 1947-এর পরের মতো ওই সময়ও লোকেরা আরও ক্ষুব্ধ ছিল এবং কিছু ঘটনা ঘটেছিল ৷ কিন্তু সভ্যতা তো এগিয়ে গিয়েছে । সভ্যতাকে এগিয়ে যেতে হবে, অন্যথায় যা ঘটেছে, তা সেখানেই থেকে যাবে ৷ যা ঘটেছে, সেটাকে মেনে নিলে, সেটাই আসল নিরাময়ের প্রক্রিয়া হবে ৷ তারা যেমন বলে যে এতে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য 30 বছরের প্রমাণ নাও থাকতে পারে ৷ কিন্তু অপরাধমূলক প্রভাব ছাড়াই ঘটেছে এমন ভুলকে মেনে নেওয়া সেই ব্যক্তিদের স্বান্তনা দেবে, যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন ৷

প্রশ্ন: অনেক বছর কেটে যাওয়ার পর কি আর নিরাময় সম্ভব ? আপনি কী মনে করেন ?

উত্তর: আমি তাই বিশ্বাস করি ৷ চলে যাওয়া মানুষগুলো যে হঠাৎ করে ফিরে আসবে, এমনটা তো নয় । তাঁরা তাঁদের জীবনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন । আমি দ্বিতীয় প্রজন্মের অনেককে জানি, যাঁরা তাঁদের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে অন্যত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেটা বিদেশে বা দেশের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে । কিন্তু তাঁরা তাঁদের মতামত প্রকাশ করেন যে তাঁরা ফিরে চান ৷ কারণ, তাঁদের শিকড় সেখানে রয়েছে । তাঁরা যাতে সেখানে (কাশ্মীর) যেতে পারেন, তার প্রয়োজনীয় পরিবেশ আমাদের তৈরি করতে হবে ৷ তবেই নিরাময় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে ।

প্রশ্ন: কাশ্মীরে যাঁদের সংখ্য়া বেশি, তাঁরা কি যাঁদের সংখ্যা কম তাঁদের আপন করে নেবেন ? আপনার কী মনে হয় ?

উত্তর: আমি বিশ্বাস করি এটা হওয়া উচিত । আমি বিশ্বাস করি এটা ঘটবে ৷ এমন মানুষ অবশ্যই আছেন, যাঁরা শান্তি পছন্দ করেন না ৷ কিন্তু এই প্রক্রিয়ার 30 বছরের মধ্যে একটি নতুন প্রজন্ম বড় হয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভালো সময় দেখেননি । তাঁরা তাঁদের মা-বাবার কাছ থেকে এটা শুনেছেন এবং আমি অনুভব করি যে একসঙ্গে থাকা আরও ভালো হতে পারে ৷ তা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে ।

প্রশ্ন: ধারা 370 রায় নিয়ে সমালোচকরা জানিয়েছেন যে এই রায় সাংবিধানিক কাঠামোর উপর প্রভাব ফেলেছে ৷ আর 370 ধারা এমনই ছিল না ৷ বরং এর নির্দিষ্ট মূল্য ছিল । এই নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী ?

উত্তর: ধারা 370 সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি আদেশ জারি করার মাধ্যমে আরও অনেক দিকের সঙ্গে এটাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ৷ তখন সবাই এটা গ্রহণ করেছিল । তখন এটা একটি খোলসের ভিতরে ছিল ৷ তার ভিতরেও কিছু ছিল ৷ দারুণ বেশি কিছু নয় ৷ কিন্তু যখন রাজনৈতিক ব্যবস্থা সিদ্ধান্ত নেয় যে একটি ক্ষণস্থায়ী বিধান এখন তার উদ্দেশ্য পূরণ করেছে এবং এটি শেষ করা উচিত, তখন এটি শেষ করা হয়েছিল… । আসল প্রশ্ন ছিল, কীভাবে এটি শেষ করা হবে ৷ সম্ভবত এই প্রক্রিয়ার আরো সমস্যা ছিল ৷ আর পাঁচজন বিচারপতির মনে হয়েছে যে এটি একটি পদ্ধতি হতে পারে শেষ করার ৷ আর সেটাকে বহাল রাখা হয়েছে ।

উল্লেখ্য, বিচারপতি কৌল চলতি মাসের শুরুতে অবসর নিয়েছেন ৷ 1958 সালের 26 ডিসেম্বর তাঁর জন্ম ৷ তিনি 1982 সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ল সেন্টার থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ওই বছর 15 জুলাই দিল্লির বার কাউন্সিলে অ্যাডভোকেট হিসেবে নথিভুক্ত হন ৷ 1999 সালের ডিসেম্বরে তিনি একজন সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসাবে মনোনীত হন । 2001 সালের মে মাসে বিচারপতি কউলকে দিল্লি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে উন্নীত করা হয় ৷ 2003 সালের 2 মে তাঁকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয় ।

তিনি 2013 সালের 1 জুন তিনি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে নিযুক্ত হন ৷ বিচারপতি কৌল 17 ফেব্রুয়ারি 2017-তে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন । তিনি শীর্ষ আদালতের সেই বেঞ্চের অংশ ছিলেন, যা বর্তমান আইন অনুযায়ী সমলিঙ্গ বিবাহের আবেদন খারিজ করে দেয় ৷ ওই রায়ে শীর্ষ আদালত জানায়, মামলাটি কঠোরভাবে আইনি নয় ৷ তবে সামাজিক সমস্যা জড়িত৷ সরকার চাইলে ভবিষ্যতে এই অধিকার কার্যকর করার জন্য একটি আইন প্রবর্তন করতে পারে ।

আরও পড়ুন:

  1. বছর শেষে ফিরে দেখা 2023 সালে সুপ্রিম কোর্টের 10 গুরুত্বপূর্ণ রায়
  2. সংবিধানের অনুচ্ছেদ 370 বাতিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়ের 10টি মূল বক্তব্য
  3. 370 ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক নয়, জম্মু ও কাশ্মীরের মামলায় জানাল শীর্ষ আদালত
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.