চেন্নাই, 13 নভেম্বর: আলোর উৎসব দীপাবলি ৷ সেই উৎসবে আলোর রোশনাইয়ের পাশাপাশি আতশবাজি ও শব্দবাজির আধিপত্যও থাকে ৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি ৷ বিশ্বজুড়েই সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে দীপাবলি ৷ এর মধ্যেও ব্যতিক্রমী দীপাবলি দেখা গিয়েছে তামিলনাড়ুর বেশ কয়েকটি গ্রামে ৷ সেখানে পরিবেশ সচেতনতা ও পাখিদের জন্য কোনও শব্দ ছাড়াই পালিত হয়েছে দীপাবলি ৷ তবে এই প্রথম নয় ৷ দীর্ঘদিন ধরে এখানে এই রীতি পালন করা হয় ৷
এই গ্রামগুলির মধ্যে অন্যতম ভেটাংগুড়ি ৷ শিবগঙ্গা জেলার এই গ্রামে 1977 সাল থেকে পাখির অভয়ারণ্য রয়েছে ৷ সেখানে বিদেশ থেকে আসা 217 জাতের পাখির বসবাস । সেখানে গত 40 বছর ধরে শব্দবিহীন দীপাবলি করা হয় ৷ শুধু ওই গ্রাম নয়, পাশের আরও দু’টি গ্রাম, পেরিয়া কোল্লুক্কুডি ও চিন্না কোল্লুক্কুডির বাসিন্দারাও শব্দবিহীন দীপাবলি পালন করেন ৷
এই বিষয়ে পেরিয়া কোল্লুক্কুড়ির বাসিন্দা চেল্লামনি বলেন, "এখানে শুধু জনসাধারণই নয়, শিশুরাও দীপাবলিতে পটকা ফাটায় না । যাঁরা শহরের বাইরে যান, তাঁরাই একমাত্র শব্দবাজি ব্যবহার করেন ।’’ সেখানকার বাসিন্দা দুই শিশু শর্মি ও প্রণব বলে, "আমাদের গ্রামে দীপাবলি উদযাপন করি । তবে আতশবাজি শুধু ফাটানো যায় না । যেহেতু এটা পাখির বাচ্চা ফোটার সময়, তাই আতশবাজি পাখিদের ভীত করে দেয় । তাই আমরা শব্দবাজি ব্যবহার করি না ৷’’
অন্যদিকে তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর জেলার কিট্টমপালায়ম গ্রামের লোকেরা 20 বছরেরও বেশি সময় ধরে দীপাবলিতে কোনোরকম আতশবাজি ব্যবহার করেন না ৷ ওই গ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য, তাঁরা গ্রামে পরিবেশ বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়ে ৷ বৃক্ষরোপণ থেকে পাখি বাঁচানোর কাজ করা হয় ৷ সেই কারণে তাঁরা দীপাবলিতে আতশবাজি ব্যবহার করেন না ৷
একই রীতি চালু আছে ওই রাজ্যের ধর্মপুরী জেলার পালাক্কোডু সার্কেলের অধীনে বল্লেনাহাল্লি গ্রামে ৷ সেখানে প্রায় 200 জন বসবাস করেন ৷ সেখানেও পরিবেশ বাঁচাতে শব্দহীন দীপাবলি পালন করা হয় ৷ গ্রামবাসীদের যুক্তি, স্থানীয় একটি মন্দিরে বাদুড় আসে অনেক ৷ এলাকার গাছগুলিতে বাদুড় অনেক আছে ৷ সেই কারণেই পরিবেশরক্ষার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৷
তামিলনাড়ুর ইরোড জেলার ভেলোড পাখি অভয়ারণ্য প্রায় 240 একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত । কয়েক বছর আগে, এই পাখির অভয়ারণ্যটি 2 কোটি 35 লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয় ৷ অভয়ারণ্যের চারপাশে বাঁধগুলিকে শক্তিশালী করা হয় সেই সময় । এই পাখির অভয়ারণ্যের আশেপাশের 10টিরও বেশি গ্রাম গত 17 বছর ধরে শব্দহীন দীপাবলি পালন করে ৷
এলাকার বাসিন্দা শক্তিভেল বলেন, "গত 16 বছর ধরে বিদেশ থেকে পাখিরা এখানে আসছে । এই পাখিরা এখানে প্রজনন করতে আসে । তাই এই পাখিদের বিরক্ত না করার জন্য আমরা দীপাবলিতে পটকা ফাটাই না । দীপাবলি ছাড়া অন্য কোনও অনুষ্ঠানেও আতশবাজি ফাটানো হয় না । পরিবেশ দূষণ রোধে গাছ লাগাতে হবে । অন্যান্য দেশ থেকে প্রচুর সংখ্যক পাখির আগমন এবং তাদের দেখতে আসা লোকজন আমাদের গ্রামের জন্য গৌরব বাড়িয়ে দেয় ৷”
আরও পড়ুন: