জবলপুর, 16 জুন: কালিয়াগঞ্জের ডাঙিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মার কথা মনে আছে ? মনে আছে টাকা না থাকায় মৃত সন্তানকে ব্যাগে করে নিয়ে ফিরেছিলেন বাড়ি ৷ সেই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাকে ৷ এবার সেই একই ঘটনার সাক্ষী থাকল মধ্যপ্রদেশের জবলপুর ৷
জানা গিয়েছে, 13 জুন জবলপুরের ডিন্ডোরির সহজপুরী গ্রামের বাসিন্দা জমনী বাঈ প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ডিন্ডোরি জেলা হাসপাতালে ৷ সেখানে এক সন্তানের জন্ম দেন জমনী বাঈ ৷ কিন্তু জন্মের পর থেকেই শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে ৷ সেই কারণে নবজাতককে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জবলপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৷ সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় নবজাতকের ৷
গরিব পরিবারের হওয়ায় নবজাতকের বাবা জবলপুর মেডিক্যাল কলেজের আধিকারিকদের ডিন্ডোরিতে ফিরে আসার জন্য একটি শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন ৷ কিন্তু অভিযোগ আধাকারিকদের তরফ থেকে কোনও রকম সাহায্য করা হয়নি দরিদ্র পরিবারকে ৷ ফলে বাধ্য হয়ে মেডিক্যাল কলেজ থেকে একটি অটোতে নবজাতকের দেহ নিয়ে স্বজনরা কোনওমতে জবলপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছন ৷ সেখানে একটি ব্যাগে শিশুর দেহ নিয়ে বাসে 150 কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন ৷ গভীর রাতে ফেরেন ডিন্ডোরির বাড়িতে ৷ অভিযোগ, নবজাতকের দেহ দীর্ঘক্ষণ ব্যাগে নিয়ে তাঁরা সাহায্য়ের জন্য ঘোরাঘুরি করেছিলেন কিন্তু কোনও লাভ হয়নি ৷ হতদরিদ্র পরিবারকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি কেউই ৷
এরপরেই ঘটনাটি চলে আসে প্রকাশ্যে ৷ সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা বাবা সুরজাতিয়া বাঈয়ের কাছে জানতে চান কেন তিনি মৃত সন্তানকে ব্যাগে করে নিয়ে এসেছেন ৷ তখন তিনি বলেন, "আমার কাছে আর অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না ৷ অত টাকা আমার কাছে ছিল না অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার ৷ অ্যাম্বুলেন্স চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছিল জবলপুর থেকে ডিন্ডোরি 150 কিলোমিটার পথ আসার জন্য ৷ আমি গরীব মানুষ ৷ এত টাকা কোথা থেকে পাব? তাই জবলপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের কাছেও সাহায্য চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু কোনও লাভ হয়নি ৷ অন্যদিকে কেউই মৃত সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছিলেন না ৷ তাই আমি ব্যাগে করে নিয়ে মৃত সন্তানকে বাড়ি নিয়ে এসেছি ৷"
আরও পড়ুন: একইসঙ্গে তিন সন্তানের বাবা হলেন 62 বছরের বৃদ্ধ
প্রসঙ্গত, সুরজাতিয়া বাঈয়ের সঙ্গে ঘটা এই ঘটনা নতুন কিছু নয় ৷ গরিব পরিবারের অনেকেই এই ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক বার ৷ বারবার হাসপাতালগুলিতে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার ক্ষেত্রে ব়্যাকেটের অভিযোগ উঠলেও প্রশাসন কান দেয়নি ৷ ফলে সমস্যার সমাধান কবে হবে নেই উত্তর ৷